অপসংস্কৃতি ও আমাদের তরুন সমাজ

মোঃ শামছুদ্দীন (নাইম)
অনেক দিন পর আজ একটি আর্টিকেল লিখার ইচ্ছা জাগলো, জানিনা কতটুকু লিখতে পারি। এখন গোটা বিশ্ব এমন এক পরিস্থিতে উপনীত হয়েছে যেখানে সংস্কৃতির নামে অপসংস্কৃতি গুলো আমাদের কিশোর ও তরুন সমাজকে ঘিরে ফেলেছে। আমরা যদি বিচক্ষণতা,  চতুরতা ও মেধার সাথে এগুলো বাদ দিতে না পারি তাহলে আমাদের তরুনরা এক ঘোর অন্ধকারাচ্ছন্ন অমানিশার কালো রাতের মধ্যে দিনাতিপাত করতে হবে বলে আমার বিশ্বাস। যাক মুল কথা হলো মুরুব্বিরা বলতেন – ছোটরা নাকি নিষিদ্ধ জিনিসের উপর বেশী আসক্ত থাকে। এ জন্য চন্দ্রগ্রহণ, সূর্যগ্রহনের সময় তাদেরকে বলতে নেই, বললে দেখা যায় তারা জানালার ফাঁক দিয়ে হলেও উঁকি মেরে দেখে। আর যদি না বলে তাহলে খবর ও থাকে না। একজনের জিন্সের পেন্ট ছিড়ে যাওয়ার পর সে স্টিকার লাগিয়ে মোটামুটি নিজের ইজ্জত সেভ করেছে, কিন্তু সেটা হয়ে গেছে এখন স্টাইল। নাপিত ভুল ক্রমে চুলের একপাশ বেশি ছোট করে ফেলছে, যা এখন হয়ে গেছে তরুনদের পছন্দের কাটিং । এখন আবার মাঝে মাঝে দেখা যায় পিছনের চুল ক্ষুর দিয়ে পরিষ্কার করে নিজের নাম ঠিকানা মোবাইল নাম্বার লিখে দেয়। আবার এ সকল স্টাইলে নাকি খরচ ও বেশী। কিন্তু আমাদের বুঝা উচিত এ গুলো অপসংস্কৃতি, এগুলো পরিহার করা আমাদের একান্ত জরুরী। যা হোক যে উদ্দ্যেশে কথাগুলো বলা তা হলো ০৪ জুলাই ২০২০ সন্ধায় আমি এক দোকানে বসে আছি। হটাৎ এক কিশোর এসে আমার পাশে থাকা জনৈক ভদ্রলোককে বললো মামা একশত টাকা দেন, উনি বললো কেন? বললো মামা আজ আমাদের সাথের একজনের জম্মদিন। দেখলাম ভদ্রলোক একশো টাকা দিয়ে দিলো। কিছুক্ষণ পর দেখলাম পাশেই স্কুলের মাঠে কারেন্টের খাম্বার সাথে এক তরুনকে বাঁধা হচ্ছে। আমি ভদ্রলোককে বললাম কি ব্যাপার ছেলেটাকে এভাবে বাধে কেন? ও বললো ভাইয়া ওর জম্মদিন পালন করবে। আমি খুব কৌতুহলি হলাম এবং তাকিয়ে রইলাম, দেখলাম কয়েকজন মিলে বাধা শেষে একসাথে চিৎকার করে তার মাথায়, গাঁয়ে গোটা ডিম মারতেছে আর আনন্দ করতেছে। এরপর ময়দা মেরে তার সমস্ত গা সাদা করে দিয়েছে। মানুষ হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম এসব কি? অনেকেই বললো এটা জম্মদিন পালনের নতুন ঢং। এখানে যার জম্মদিন পালন করলো তার গোসল করা লাগছে অবশ্যই। এতো দেখছি রীতিমত অপমান। এখানে টাকা অপচয় হলো, সময় নষ্ট হলো, চোরের মত খাম্বার সাথে বাধা হলো- তবুও নাকি এটা মজার ব্যাপার। আমরা এ সকল অপসংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসা দরকার। আসুন সবাই মিলে আসল সংস্কৃতিতে ফিরে আসি, যেখানে বন্ধুত্বের বন্ধন দৃঢ় হবে, যেটা সমাজের অধিকাংশ মানুষ গ্রহণ করবে, যেখানে জম্মদিন পালনের পর বন্ধুদেরকে ছেড়ে একা গোসল করতে যেতে হবে না, যেখানে পুষ্টিকর খাবার ডিমকে মাথায় ভাংগা লাগবে না, যেখানে খাম্বা অথবা গোয়াল ঘরের পায়ার সাথে প্রিয় বন্দুকে চোরের মত বাধা লাগবে না।
জানি আর্টিকেলটি পড়ে হয়তো তরুনরা রাগ করবে, তারপরেও কেন যেন লিখতে হলো। আমরা সবাই ভেবে দেখা দরকার কষ্ট উপার্জিত টাকা কিভাবে খরচ হচ্ছে এবং আমরা কোন দিকে যাচ্ছি। সবাই ভাল থাকবেন।
মোঃ শামছুদ্দীন (নাইম)
বিএসএস, অনার্স, বিএড, এমএসএস
সহকারি শিক্ষক, পূর্ব চরভূতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
লালমোহন, ভোলা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *