সাংবাদিকদের ঘোরাঘুরির একদিন

মামুন-অর-রশিদ ।।
আয়োজনটা করেছিল ‘ইথার মিডিয়া করপোরেশন’। ১৫ অক্টোবর শুক্রবার সকাল ৬টায় বরিশাল চৌমাথা থেকে একটি মাইক্রোবাস যোগে ৮ জনের একটি টিম রওয়ানা হলাম। বাকেরগঞ্জের নিয়ামতি বাজারে সকালের নাস্তায় তন্দুল রুটি, ডাল ও ডিমভাজি। এরপরে সেখানের বড় বড় সাইজের ডাব খেলাম। আরেকটি দোকানে রং চা।
এবার মুঘল স্থাপত্য ঐতিহ্যবাহী বিবিচিনি শাহী জামে মসজিদে গমন। পথভুলে কয়েক কিলোমিটার ঘুরে অবশেষে খুঁজে পেলাম। এ যেন এক অনবদ্য পুরাকীর্তি। সকলে ওজু করে দুই রাকাত নামাজ আদায় করলাম। মসজিদের খাদেম আবু হানিফ সাহেব আমাদেরকে আপ্যায়ন করালেন সুস্বাদু পায়েস ও মিষ্টি দিয়ে।
দিগন্তজোড়া সবুজের বর্ণিল আতিথেয়তায় উদ্ভাসিত ভিন্ন এক ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যে উঁচু টিলার উপর মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে মোঘল স্থাপত্যকর্মের এই ঐতিহাসিক মসজিদ। এর দেয়ালে তিনটি প্রবেশ পথ আছে। মসজিদটি ৩৩ ফুট লম্বা, ৩৩ ফুট চওড়া এবং মসজিদটির দেয়াল প্রায় ৬ ফুট প্রশস্থ। এছাড়া মসজিদের পাশে ৪০ ফুট থেকে ৪৫ ফুট লম্বা তিনটি কবর রয়েছে। পুরনো পঞ্চাশ টাকার নোটে এখনো শোভা পায় এই স্থাপনাটির ছবি।
এই বর্ণাঢ্য সফরে অংশ নিয়েছেন দৈনিক নয়াদিগন্ত’র বরিশাল ব্যুরো চিফ আযাদ আলাউদ্দীন, দৈনিক প্রথম সকাল’র নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদুল হক, দৈনিক আমাদের সময়’র ব্যুরো চিফ আল মামুন, বরিশাল বাণী’র ব্যবস্থাপনা সম্পাদক পারভেজ সরদার, নিউজ এক্সপ্রেস এর সম্পাদক জলিল সিদ্দিকী, অনলাইন নিউজ পোর্টাল অবিরাম বাংলার প্রকাশক মুন্সী এনাম, দৈনিক যায়যায়দিনের সাবেক সাব এডিটর কবি শাহরিয়ার মাসুম এবং (আমি) বরিশাল বাণী’র সম্পাদক ও দৈনিক দখিনের সময়র যুগ্ম বার্তা সম্পাদক মামুন-অর-রশিদ। তবে এ সফরে অনেক অনেক মিস করেছি তাদেরকে যারা অনিবার্য কারনে যেতে পারেননি। তাদের মধ্যে কবি মোহাম্মদ এমরান, সাংবাদিক জাকিরুল আহসান এবং সাংবাদিক সুলতান খান।
যাইহোক ইতঃমধ্যে বেলা এগারোটা বেজে গেছে। এবার মির্জাগঞ্জের উদ্যেশ্যে যাত্রা। প্রথমেই সেখানে উপজেলা প্রেসক্লাব ও রিপোর্টার্স ইউনিটির সাংবাদিকদের আতিথেয়তায় মুগ্ধ হলাম। বিশেষ মিষ্টি, ছমুচা ও রং চা খেয়ে চলে গেলাম হযরত ইয়ার উদ্দিন খলিফার মাজারে। নদীতীরের এই মাজারটির আশেপাশে অনেক জমিই নদীতে ভেঙ্গে গেছে। কিন্ত মাজার কেন্দ্রিক কিছু জায়গা রয়ে গেছে অক্ষত। এ যেন একটি কারামত। হাজারো ভক্তবৃন্দ ও পর্যটকে মুখরিত মাজার প্রাঙ্গন। সেখানে একটি দোকান আছে যাতে কোন দোকানদার নেই। মূল্য তালিকা দিয়ে পণ্য রাখা হয়েছে। পণ্য সংগ্রহ করে তালিকা দেখে বাক্সে সমপরিমান টাকা ফেল আসলেই হয়। এ যেন স্বর্নালী যুগের এক উদাহরণ। মাজার সংলগ্ন মসজিদে জুম্মার নামাজ আদায় করে মধ্যাহ্ন ভোজে চলে গেলাম। উপজেলা প্রেসক্লাব এর সভাপতি মনিরুল ইসলাম ও সহ সভাপতি গোলাম ছরোয়ার মনজু ভাইয়ের আপ্যায়নে সিক্ত হলাম। ইতঃমধ্যে আল মামুন ভাইয়ের মনে পড়ে গেল তার শশুরবাড়ি ওখান থেকে বেশি দুরে নয়। যেই ভাবা সেই কাজ। তিনি আমাদের টিম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে জামাই আদর পেতে চলে গেলেন আমতলীর উদ্দেশ্যে।
এবার ফেরার পালা। বাকেরগঞ্জে পৌছামাত্রই থানার একজন সার্জেন্ট আমাদের গাড়িটি আটকালেন। সবকিছু ঠিকঠাক তবুও তিনি খুশি নন। অবশেষে আমাদের পরিচয় পেয়ে তিনি খুশি মনেই ছেড়ে দিলেন।
এবার ঢুকলাম বারো আউলিয়ার দরগায়। একটি বটগাছে পুরো ভবনটির চারিদিক ঘেরা। মাজারে আগরবাতি মোমবাতি জ্বলছে। কেউবা নেকির নেশায় কান্নাকাটি করছে। দরবারের মুতাওয়াল্লি মাওলানা হেলালুজ্জামান আমাদেরকে তার খাস কামরায় নিয়ে আপ্যায়ন করালেন। জানালেন মাজারের আদ্যপান্ত ও সমস্যাবলি।
এবার বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস অভিমুখে কাশফুলের নৃত্য দেখতে চলে গেলাম। শত শত কপোত-কপোতি সেখানে এসেছে একটু ফুসরত নিতে। আমরাও তাদের মধ্যে ঢুকে নিজেদের ছবি তুললাম। রঙ্গে ঢঙ্গে ছবি তুলতে তুলতে গোধুলী পেরিয়ে বেলা শেষ হয়ে এলো। এবার যেতে হবে। ববি’র দৃষ্টিনন্দন মসজিদে নামাজ আদায় শেষে একদিনের আনন্দঘন সফরের সমাপ্তি ঘোষণা করলেন অগ্রজ সাংবাদিক আযাদ আলাউদ্দীন। ##

মামুন-অর-রশিদ, প্রকাশক ও সম্পাদক, বরিশালবাণী ডটকম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *