জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের ইতিবৃত্ত; পর্ব ১০

 

আমেরিকায় অভ্যন্তরীণ গণহত্যা :

আমেরিকা গঠনের পর ১৮৬১ সালে সিভিল ওয়ারে জড়িয়ে ইউনিয়ন ও ফেডারেসির মধ্যে দ্বন্দ্বে প্রায় ৮ লাখ লোকের প্রাণহানি ঘটে। আজও এর দায়-দায়িত্বে সদুত্তর এখনও ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ হয়নি। (মাসিক প্রেরণা, ঢাকা,  মার্চ ২০১৭, পৃ ৩০)

রাজা শ্রী কন্দর্পনারায়ণ রায় ও রাজা রামচন্দ্রের নাশকতা :

বাকলা চন্দ্রদ্বীপের বর্তমান নাম বরিশাল। প্রাচীন ও মধ্যযুগে এটি একটি স্বতন্ত্র দেশ ছিলো। মধ্যযুগে এ অঞ্চল শাসন করত কায়স্থ রায় রাজারা। দনুজমর্দ্দন দে ছিলো এ বংশের প্রতিষ্ঠাতা রাজা; যার রাজধানী ছিলো বাউফলের কচুয়া। দুনজমর্দ্দন দের উত্তরসূরী কন্দর্পনারায়ণ রায় (১৫৮২-১৫৯৮) ছিলেন এ বংশের অষ্টম রাজা। তিনি প্রথমে রাজধানী কচুয়া থেকে বাকেরগঞ্জের বিশারীকাঠিতে স্থানান্তর করেন। কিছুকাল পরে বিশারিকাঠি পরিত্যাগ করে বর্তমান বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলাধীন ক্ষুদ্রকাঠিতে আসেন। কাছাকাছি পঞ্চনদের সঙ্গমস্থলে হোসেনপুর গ্রাম মন:পুত হওয়ায় তথায় রাজধানী স্থাপন করাই সুস্থির করেন। তৎকালীন হোসেনপুরে একজন বলবান সরদারের অধীনে বহু মুসলমান সমাকীর্ণ জনপদ ছিলো। রাজা কন্দপনারায়ণ রায় উক্ত মুসলমান সরদারকে তার অনুচরগণসহ হোসেনপুর ত্যাগ করতে বলেন; কিন্তু সরদার তেমন সহজ লোক ছিলেন না, তার যথেষ্ট লোকবল ও কিছু যুদ্ধোপকরণ ছিলো। তজ্জন্য সরদার দম্ভের সাথে রাজার আদেশ প্রত্যাহার করলেন এবং হোসেনপুরের  উত্তরাংশে বর্তমান কথিত ডহরপাড়া নামক স্থানে উভয় পক্ষে তুমুল সংগ্রাম হলো। উক্ত সংগ্রামে রাজা কন্দর্পনরায়ণ রায়ের অমিততেজে মুসলমান সরদার সদলবলে নিহত হলেন। অনেক মুসলমান ভীত, সন্ত্রস্ত হয়ে হোসেনপুর পরিত্যাগ করে অন্যত্র প্রস্থান করেন। হোসেনপুরের উত্তর পূর্বে দুই মাইল পরিমাণ স্থান মুসলমান শূণ্য হলো। রাজা রায় স্বয়ং যুদ্ধক্ষেত্রে আহন হন এবং ক্ষুদ্রকাঠিতে পৌঁছেই দেহত্যাগ করেন।

 শ্রী কন্দর্পনারায়ণ রায়ের মৃত্যুর পর ছেলে শ্রী রামচন্দ্র রায়ের নবম রাজা হিসেবে অভিষেক ঘটে ১৫৯৮ সালে। সিংহাসনে বসেই তিনি হোসেনপুর পুরোপুরি মুসলিম শূন্য করে তদস্থলে হিন্দু আবাস গড়ার প্রজ্ঞাপন জারি করেন। এ প্রসঙ্গে ঐতিহাসিক বৃন্দাবন চন্দ্র পূততু- তাঁর ‘চন্দ্রদ্বীপের ইতিহাস’ বইয়ে বলেন, ‘হোসেনপুরের মুসলমান অধিবাসীগণকে বিতাড়িত করে রাজা রামচন্দ্র রায় রাজধানীর চতুর্দিকে নানা শ্রেণির ব্রাহ্মণ, বৈদ্য, উচ্চ ও নিম্নশ্রেণির কায়স্থ, শঙ্খবণিক, গন্ধবণিক, মালাকার, কুম্ভকার রাজ, পাটনী, কাহার, তৈলিক, কর্মকার প্রভৃতি জাতির বসতি করান। (বৃহত্তর বাকরগঞ্জের ইতিহাস, সংগ্রহ ও সম্পাদনায়: তপংকর চক্রবর্তী ও সিকদার আবুল বাশার,  পৃ ৫৪৯-৫৫১)

চলবে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *