জাহাঙ্গীর হোসেন মানিক সম্পাদিত ‘কবিয়াল’ নবান্ন উৎসব সংখ্যা

আল হাফিজ ।।
জাহাঙ্গীর হোসেন মানিক সম্পাদিত একটি অনিয়মিত সাহিত্য পত্রিকা ‘কবিয়াল’ নবান্ন ও যুগপূর্তি সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে ১ অগ্রহায়ণ ১৪২৯-এ। পত্রিকাটি দখিনের কবিয়াল শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চাকেন্দ্র, পটুয়াখালী থেকে প্রকাশিত হয়েছে। চলতি সংখ্যায় নবান্ন নিয়ে প্রবন্ধ লিখেছেন প্রফেসর ড. স্বদেশ চন্দ্র সামন্ত, প্রফেসর মো. নুরুল আমীন, হেনরী স্বপন, সুলতানা আফজাল, প্রফেসর ডা. ভাস্কর সাহা, রহিমা আক্তার মৌ, মাহবুব লাভলু, অপূর্ব গৌতম, শফিক আমিন এবং মো. মেহেদী হাসান সজীব প্রমুখ।
‘কবিয়াল’-এর সম্পাদকীয় পড়ে উৎসাহী পাঠক জানতে পারে যে, ‘নবান্ন’ উৎসব হলো নতুন আমন ধান কাটার পর সেই ধান থেকে প্রস্তুত চালের প্রথম রান্না উপলক্ষে আয়োজিত উৎসব।… নবান্নে মেয়ে জামাই ও মেয়েকে বাবার বাড়িতে ‘নাইওর’ এনে বিপুল আনন্দ ও যত্ন সহকারে খাওয়ানো হয়।…আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্য, মা-মাটির গন্ধ পেতে দখিনের কবিয়ালের নিয়মিত আয়োজন ‘নবান্ন উৎসব’। এবারের নবান্ন উৎসব- ১৪২৯ স্মরণীয় করে রাখতে প্রকাশিত হলো সাহিত্যের ছোটকাগজ ‘কবিয়াল’। ‘ও মা, অঘ্রাণে তোর ভরা ক্ষেতে কী দেখেছি, আমি কী দেখেছি, মধুর হাসি সোনার বাংলা…।’ কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সোনার বাংলা আর আমি তোমায় ভালোবাসি- তাঁর এই সৃষ্টির মর্ম কথা হৃদয়ে ধারণ করেই পটুয়াখালীতে দখিনের কবিয়ালের মাধ্যমে নিরলস ভাবে শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির কাজ করে যাচ্ছি। কৃষক শক্ত হাতে নরম মাটিতে স্বপ্ন বোনে। আমরাও নতুন প্রজন্মকে ডাক দিয়ে যাই- দেশ প্রেম আর ভালোবাসার’।
নতুন প্রজন্মকে বাংলাদেশের শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রতি আগ্রহী করে তোলার এ মহতী উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাই। তরুণ প্রজন্ম আজ নিজস্ব কৃষ্টি-কালচার ভুলতে বসেছে। তারা বিদেশি সংস্কৃতির মোহে দিন দিন অন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ফলে আমরা হারাচ্ছি আমাদের গৌরবময় ইতিহাস-ঐতিহ্য ও কৃষ্টি-কালচার। ‘কবিয়াল’ নবান্ন ও যুগপূর্তি সংখ্যা আমাদের চেতনা জগতে আলোর পরশ বুলিয়ে দিয়েছে । এ জন্য সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন মানিকসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
‘কবিয়াল’ চলতি সংখ্যায় কবিতা লিখেছেন কবি জেসমিন আক্তার, জিল্লুর রহমান জিল্লু, ফয়সাল বারী, রওশন জাহান মাসুমা, তৌহিদুল ইসলাম কনক, সুলাইমান মাহমুদ রাসেল, পলাশ পোড়েল, মোস্তাফিজুর রহমান সাফি, সুভাষ চন্দ, তানিম ইশতিয়াক, সাওরিয়া মিরাজী মিতু, কাজি আনিছুর রহমান, রুদ্র মুহম্মদ জাহিদুল, কাজী দেলোয়ার হোসেন দিলীপ, আয়শা সাথী, সাদিকাহ তাসনিম আনিসাহ, পান্ডে অনিতা, মাসুদ আলম বাবুল, আরিফ আহমেদ, মো. উজির আলী, মুহাম্মাদ শহীদুল ইসলাম,আহম্মেদ কাওসার ইবু, আফিফা জাহিন লিউনা, খালেদা বেগম লাভলী, ফাইরুজ জামান সানিকা, সুকান্ত চন্দ্র বালী, মুস্তফা হাবীব, শাহীন, মুহাম্মদ নূর ইসলাম, শ্যামল বণিক অঞ্জন, বিলাস দাস, দেবাশিস ভট্টাচার্য, শাহীন রায়হান, মুহাম্মদ আলম জাহাঙ্গীর এবং সুমিরাহ সুমি ।
শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রে বেশ অনেক দিন থেকেই ‘কবিয়াল’ সাংগঠনিক ভাবে সক্রিয় রয়েছে। একটি অনিয়মিত সাহিত্য পত্রিকা হিসেবেও ‘কবিয়াল’ প্রকাশিত হয়ে ইতোমধ্যে পাঠকদের মন জয় করে নিতে সক্ষম হয়েছে। দেশীয় শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চায় পত্রিকাটির সম্ভাবনা অপরিসীম। আমরা বিশ্বাস করি, এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে একটি সফল স্বপ্ন দেখাতে পারবেন সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন মানিক- যা একদিন সাহিত্য পত্রিকার জগতে দৃষ্টান্ত হিসেবে গন্য হবে নিঃসন্দেহে। একটি সাহিত্য পত্রিকা দীর্ঘ দিন ধরে বের করে যাওয়াও কম কথা নয়। এজন্য সম্পাদকসহ সংশ্লিষ্ট সকলেই অভিনন্দিত হবেন দেশজ শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চাকারী কবিসমাজ ও বোদ্ধা পাঠকদের পক্ষ থেকে।
চলতি সংখ্যা ‘কবিয়াল’-এ বেশ কিছু ভালো মানের উৎকৃষ্ট কবিতা ছাপা হয়েছে- যা কবিতামুগ্ধ পাঠকদের মনোযোগ আকর্ষণে সক্ষম হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। আমরা এখানে ভালো লাগা কয়েকটি পঙক্তি পাঠকদের জন্য তুলে দিলাম-
ক.   তুমি হয়তো ভুলে যাবে মাটি ও পৃথিবীর গান
নবান্নের ঘ্রাণে ভরে যাবে করতল কিংবা তোমার গ্রীবা
ভুলে যাবে এই চেনা উৎসব
ক্লান্ত নাবিকের মতো পথ হারাবে যৌবনের ¯িœগ্ধতা
পৃথিবীর বোটা হতে ঝরে যাবে অগণিত প্রেম
তবু রয়ে যাবে এই নবান্নের অমীয় সুধা পৃথিবীর পথে…
– [ ফয়সাল বারী, নবান্নের গান, পৃষ্ঠা- ০৮]
খ.  কার্তিকের শেষে আমি বুনে যাবো স্বপ্ন ঐ দেহে
তুমি শুধু বেঁধে রাখো কর্ষিত ভ‚মি।
– [ মাসুদ আলম বাবুল, নবান্ন, পৃষ্ঠা- ২৬]
গ.  ছমিরনের চিত্ত জুড়ে আনন্দের জোয়ার
হেমন্ত আজ খুলে দিলো ভাগ্যের দুয়ার।
– [ জেসমিন আক্তার, নবান্নের আনন্দ, পৃষ্ঠা- ০৭]
ঘ.  বৌরি ধানের খই মাখিয়ে
গামলা ভরা গুড় গুলিয়ে-
বিছিয়ে দেবো মাদুর।
কলাপাতায় পুটি মাছে-
পাতনা দেবো চুলোর মাঝে,
বসতে দেবো নকশি কাঁথার চাদর।
– [ সাওরিয়া মিরাজী মিতু, এ ভরা কার্তিকে, পৃষ্ঠা- ১৫]

‘কবিয়াল’ পরিবারে যুক্ত রয়েছেন সহযোগী সম্পাদক মো. মেহেদী হাসান সজীব, সম্পাদনা পর্ষদে আছেন শাহিনা আক্তার, খালেদা বেগম লাভলী ও সাওরিয়া মিরাজী মিতু। পত্রিকাটির নজরকাড়া প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী অংকন রায়। ৫৬ পৃষ্ঠার অফসেট কাগজে ঝকঝকে ছাপা এ পত্রিকাটির শুভেচ্ছা মূল্য রাখা হয়েছে মাত্র ১০০ টাকা। আমরা মনে করি ‘কবিয়াল’ চলতি সংখ্যা পাঠকদের ভালো লাগবে। বাংলাদেশের শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চায় বিশ্বাসী কবিতাপ্রেমিক পাঠকদের কাছে ‘কবিয়াল’ বিপুলভাবে সমাদৃত হোক- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

আল হাফিজ,  নির্বাহী সম্পাদক, মুক্তবুলি, সাতরং সিস্টেমস, উত্তর আলেকান্দা, বরিশাল। মোবাইল: ০১৯১৩-৪৮৫৯৪৭

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may use these HTML tags and attributes: <a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>