জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের ইতিবৃত্ত

পর্ব-২

পৃথিবীর ইতিহাস, মানবজাতির ইতিহাস দ্বন্দ্ব, সংঘাত, যুদ্ধবিগ্রহের কাহিনিতে ভরপুর। এইসব সহিংসতা, পাশবিকতা, দানবীয়তার মূলে রয়েছে সত্যমিথ্যার দ্বন্দ্ব, আদর্শিক সংগ্রাম, ক্ষমতার দ্বন্দ্ব, আধিপত্যের লড়াই, পররাজ্য গ্রাসের কুটকৌশল। চলতি দুনিয়ায় জঙ্গিবাদ, উগ্রবাদ, সন্ত্রাসবাদ জটিলতম মুসিবত। মিডিয়া নজর দিলেই দেখা যায় হত্যা, খুন, বোমাবাজি, জঙ্গি হামলা। ইহা টেলিভিশন, খবরের কাগজ ভার্চুয়াল মিডিয়ার প্রতিদিনকার সংবাদ। আর কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই গণমাধ্যম আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এর দায়ভার চাপায় মুসলিমদের ওপর। আসলে প্রকৃত ক্লু গোপন করার উদ্দেশ্যেই তাদের এই প্রোপাগান্ডা। সভ্যতার শুরু হতেই ইসলাম বিরোধীরাই যাবতীয় জঙ্গি সন্ত্রাসের হোতা। ইতিহাস পর্যালোচনা করলেই এর সত্যতা পাওয়া যাবে। আমরা এখানে কতিপয় দলিল উপস্থাপন করব সত্যতার স্বপক্ষে

ব্যাবিলন সম্রাট নেবুকাদনেজারে সহিংসতা :

নেবুকাদনেজার বা বখত নসর ছিলেন ইসায়িপূর্ব পঞ্চম শতাব্দিতে ব্যাবিলনের বাদশাহ। ধর্মবিশ্বাসে সম্রাট বখত নসর ছিলেন মুশরিক। সে ছিলো তদানীন্তন বিশ্বের জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদের প্রধান পৃষ্টপোষক। ৫৮৭ খ্রিষ্টপূর্বে নেবুকাদনেজার এক ব্যাপক আক্রমণ চালিয়ে ইয়াহুদিয়ার ছোটো বড়ো সকল শহর ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে। সে জেরুজালেম এবং হায়কালে সুলায়মানি এমনভাবে ধূলিসাৎ করে দেয় যে, তার কোনো একটি দেয়ালও দাঁড়িয়ে থাকতে পারেনি। ইহুদিদের বহু সংখ্যক লোককে তাদের অঞ্চল থেকে বহিষ্কৃত করে বিভিন্ন দেশে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। (আবুল আলা : সীরাতে সরওয়ারে আলম ২য় খণ্ডপৃ ১৩)

কপিল মুনির সন্ত্রাস :

কপিল ছিলেন বিখ্যাত ঋষি। একাগ্রচিত্তে তপস্যার জন্য কপিল মুনি পৃথিবীর নিম্নভাগ পাতালে আশ্রম স্থাপন করেন। সগর মহারাজের পুত্রদের ঘোড়া অপহরণের অভিযোগে তার ওপর আক্রমণ চালালে মুনিও বদলা আগ্রাসন চালায় সন্তানদের ওপর। এই প্রতিআক্রমণে মুনি ক্রুদ্ধ হয়ে সগর বা সমুদ্র মহারাজের ৬০ হাজার সন্তানকে ভস্ম করেন। (সুধীরচন্দ্র সরকার সংকলিত পৌরাণিক অভিধান, পৃ ৭৭)

প্রাচীন গ্রিসে অরাজকতা :

বর্তমান গ্রিকদের আদি নিবাস কিন্তু গ্রিসে নয়। তারা থিসালি এপিরাস থেকে গ্রিসে উপনিবেশ গড়ে। ইসায়িপূর্ব ১৫০০ অব্দে তারা গ্রিসে প্রবেশ করে জোর জবরদস্তি করে আদিম অধিবাসীদের জমি দখল করে লয়। একই সাথে লূণ্ঠন করে তাদের মালসামান। সাথে সাথে তারা আদিবাসীদের নির্মূল করে। প্রায় ২০০ বছর ধরে চলে নিধনযজ্ঞ। তাদের বিনাশ করেও ঘাতক নব্য গ্রিকরা স্থিতিশীল রাষ্ট্র গড়তে ব্যর্থ হয়। শ্রেণিবৈষম্য প্রকট রূপ নেয়। সমাজ অভিজাত দাস দুভাগে ভাগ হয়ে যায়। অভিযাত সমাজের অন্তর্ভুক্ত ছিলো শাসক, সেনাপতি দেবতাসমাজ। একজন অভিজাতের ৩০৪০ জন দাস থাকত

গ্রিসে দাসপ্রথার যুগে মুষ্টিমেয় লোক বিলাসিতায় জীবন যাপন করত। অন্যদিকে হাজার হাজার দাস মনিবের জন্য খেটে প্রাণপাত করত। তাদের ছিলো পশুর জীবন। এই রকম পরগাছা সামাজিক ব্যবস্থা গ্রিসের মনীষী দার্শনিকেরা সমর্থন করতেন। জনৈক দার্শনিক বলেছেন, ‘বিলাসিতার এবং স্বাচ্ছন্দ্যের জীবন স্বাধীন মানুষের পক্ষে একান্ত স্বাভাবিক, দাস এবং নিকৃষ্টস্তরের লোকদের যে খাটতে হয়, তা প্রকৃতিরই বিধান।অন্য একজন মনীষী এসঙ্গে যোগ করেন, ‘গ্রিসের প্রধান দেবতা জিউস স্বয়ং এই রকম ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।গ্রিসের প্রধান দার্শনিক ছিলেন এরিস্টটল। তিনি এথেন্সে বাস করতেন। তিনিও দাসপ্রথার সমর্থন করেন। তাঁর মতে, ‘দাসত্ব ব্যবস্থা প্রকৃতিরই নিয়ম।এরিস্টটল দাসকে উৎপাদনের যন্ত্ররূপ দেখেন; কতগুলো যন্ত্র জড় : যেমনহাতুড়ি, কাস্তে; কতগুলো যন্ত্র সজীব যেমন: দাস।’ (রেবতী বর্মণ: সমাজ সভ্যতার ক্রমবিকাশ, পৃ ৪৭৫২) বাংলাদেশের বর্তমান রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠ্যসূচিতে গ্রিসের এইসব ভণ্ডদের থিওরির উপস্থিতি বাস্তবিকই দুর্ভাগ্যের

চলবে …