কলম্বাসের ৫০০ বছর আগে আমেরিকার খোঁজ পেয়েছিলেন এক মুসলিম

মুক্তবুলি ডেস্ক ||

সারা দুনিয়ার মানুষ এত দিন ধরে জেনে এসেছে স্প্যানিশ নাবিক কলম্বাসই আবিস্কার করেছিলেন আমেরিকা। কিন্তু সবকিছু গোলমেল পাকিয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে আবিষ্কৃত একটি নিবন্ধ। তাতে দাবি করা হয়েছে, কলম্বাসের ৫০০ বছর আগেই আমেরিকা আবিস্কার করেছিলেন এক মুসলিম মণীষী। তার আবু রাইহান আল-বেরুনী। নিবন্ধ বলছে, মুসলিম মণীষী আবিস্কার করলেও পাদপ্রদীপের আলোয় আসে কলম্বাসের নাম।

ইতিহাস লেখক এস ফ্রেডরিক স্টার তার ‘আজকের ইতিহাস’ নিবন্ধে দাবি করেছেন, ১৪৯৮ সালের অনেক আগেই আমেরিকা আবিস্কার করেন আবু রাইহান। নিবন্ধ অনুসারে ৯৭৩ সালে আজকের মধ্য এশিয়ার দেশ উজবেকিস্তানে জন্ম তার। ওই ইতিহাস লেখকের মতে, আবু রাইহানই এশিয়া-ইউরোপসহ পৃথিবীর অজানা ভূমি আবিস্কারের প্রথম পথ প্রদর্শক।

আবু রাইহান সশরীরে আমেরিকা গেছেন কিনা সেটা স্পষ্ট করেননি নিবন্ধকার। তবে আমেরিকা যে আমেরিকার জায়গায় ছিল সেটার বাস্তবসম্মত ধারণা দেন এই মুসলিম ভূ-গোলবিদ।
১১ শতকে অজানা দেশ আবিষ্কারে অংশগ্রহণকারী আবু রাইহান তার চোখ শুধু আমেরিকাতেই বেধে রাখেননি। ভূগোল বিশারদ এই মণীষী চোখ রেখেছিলেন পশ্চিম ইউরোপ থেকে শুরু করে পুরো আফ্রিকা, পূর্ব-এশিয়াসহ পৃথিবীর এক পঞ্চমাংশের দিকে।

মধ্যপাচ্য, উত্তর-পশ্চিম ও ভারতসহ অনেক দেশের ভাষা জানতেন রাইহান। দক্ষ ছিলেন গণিত, জ্যোতির্বিদ্যা, খনি বিদ্যা, ভূগোল, মানচিত্রাঙ্কন বিদ্যা, জ্যামিতি ও ত্রি-কোনোমিতিতে। আর এইসব ব্যাপারে তিনি বিখ্যাত মুসলিম মণীষী আহম্মেদ আল-ফারহানির মতোই দক্ষ ছিলেন বলে ওই নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে।

গ্রিক মণীষী ক্লডিয়াস টলেমি ও পিথাগোরাসের মতোই ভূগোল বিষয়ে পড়াশুনা করেছেন আবু রাইহান। টলেমি-পিথাগোরাসের মতো রাইহানও ধারণা দিয়েছিলেন যে, পৃথিবী চারদিকে ঘোরে।
রাইহাসের শিক্ষক আল-ফারহানিও পৃথিবী চারদিকে ঘোরা তত্ত্বের কথা বলেছিলেন। অবাক করা ব্যাপার হলো, যে ভিত্তির কথা উল্লেখ করে কলম্বাস আমেরিকা আবিস্কারে তার নিজের মতের কথা বলেছিলেন, সেটা আল-ফারহানি ও আবু রাইহানের তত্ত্বের সঙ্গে প্রায় পুরোপুরি মিলে যায়।

নিবন্ধকার লিখেছেন, কলম্বাস এটা হয়তো নোট করতে ভুলে গিয়েছিলেন যে, ভ্রমণের ক্ষেত্রে আল-ফারহানি রোমান মাইলসের পরিবর্তে আরব মাইলস ব্যবহার করেছিলেন। এমনকি কলম্বাস কখনোই আমেরিকা আবিষ্কারের কথা চিন্তাও করেননি। জাহাজে উঠার পর প্রথমে কলম্বাস চিন্তা করেছিলেন, তিনি হয়তো এশিয়া কিংবা ইউরোপে গিয়ে উঠবেন।

নিজের শিক্ষকের মতো আবু রাইহান পৃথিবীর ঘূর্ণনের ব্যাপারে যে তত্ত্ব দিয়েছিলেন তার আধুনিক তত্ত্বের সঙ্গে প্রায় সম্পূর্ণ মিলে যায়। নিজ কক্ষে চলার পথে সূর্য ও পৃথিবীর যে সম্পর্ক সে ব্যাপারে রাইহানের তত্ত্ব পুরোপুরি ঠিক।

পৃথিবী ঘূর্ণনের এই তত্ত্ব যখন দেন তখন আবু রাইহানের বয়স ৭০ বছর। শারীরিক কারণেই হয়তো তাকে সশরীরে আমেরিকায় নিতে পারেনি। কিন্তু মাপ-ঝোপের সবকিছুই করেছেন তিনি। তবে আরো অনেক তত্ত্ব বাকি আছে বলেও মনে করতেন রাইহান।

তবে এইসব কথা বলা মানে এই নয় যে, আমেরিকা এখনো আবিষ্কার হয়নি। তবে সেখানে আরো দলিল রয়েছে যে, স্ক্যানডিনেভিয়া থেকে নরসম্যান আমেরিকা আবিষ্কারের জন্য আইসল্যান্ড ও গ্রিনল্যান্ড অতিক্রম করে কানাডা পর্যন্ত গিয়েছিলেন। সেখানে দশম শতকে থেকেই আমেরিকার পূর্বসুরীরা বসবাস করতেন।

ফ্রেডরিক তার নিবন্ধে দাবি করেছেন, আবু রাইহানা আল-বেরুনীই পৃথিবীর প্রথম ব্যক্তি যিনি, নতুন পৃথিবী (নিউ ওয়ার্ল্ড) শব্দটার ধারণা দিয়েছেন।

এস ফ্রেডরিক স্টার যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। তিনি একজন রাশিয়া-ইউরেশিয়া বিশেষজ্ঞ। এছাড়া ‘সেন্টাল এশিয়া ককেশাস ইনিস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা। এ পর্যন্ত ২০টি বেশি বই লেখা ও সম্পাদনা করেছেন। আর নিবন্ধ লিখেছেন ২০০ উপরে।

সূত্রঃ অন্যদিগন্ত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *