আযাদ আলাউদ্দীন ।।
কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর ২১তম মৃত্যুবার্ষিকী ১৯ মার্চ। ২০০১ সালের এই দিনে আবু জাফর মহম্মদ ওবায়দুল্লাহ খান মৃত্যুবরণ করেন। দিল্লিতে একটি সেমিনারে গিয়ে তিনি পড়ে যান ও মাথায় আঘাত পান। কিন্তু সেটা যে তার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত রোগের পূর্ব লক্ষণ তা তিনি অথবা অন্য কেউ বুঝতে পারেনি। ঢাকায় অসুস্থ অবস্থায় ফিরে এসে পরদিন বাসাতেই তিনি অচৈতন্য হয়ে পড়েন। এই অবস্থান প্রথমে ঢাকায় ও পরে সিঙ্গাপুরে তার মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করা হয়। ঢাকায় ফিরিয়ে এনে প্রথমে গুলশানের জামান ক্লিনিক ও পরে শিকদার মেডিক্যালে কিছুদিন চিকিৎসাবস্থায় রাখার পর তাকে গুলশানে তার নিজ অ্যাপার্টমেন্টে স্থানান্তরিত করা হয়। তার এই গুলশানের বাসাতেই চিকিৎসা অব্যাহত থাকে।
ঢাকা, সিঙ্গাপুর ও লন্ডনের প্রখ্যাত নিউরো মেডিসিন ও নিউরোসার্জারির বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা তার চিকিৎসা করেন। কিন্তু অচেতন অবস্থা থেকে ফিরে এলেও তিনি আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেননি। গুলশানের বাসাতে তার নিজ ঘরে নিশ্চল নির্বাক অবস্থায় দিন কেটেছে। ১৯ মার্চ সকালে তার শ্বাসকষ্ট শুরু হয় এবং অপরাহ্নে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ ১৯৩৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বরিশালের বাবুগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা সাবেক স্পিকার বিচারপতি আবদুল জব্বার খানের দ্বিতীয় ছেলে। ইংরেজিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মান ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি গ্রহণ করে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা পেশায় যোগ দেন। পরে পাকিস্তান সুপিরিয়র সার্ভিস পরীক্ষায় সমগ্র পাকিস্তানের দ্বিতীয় স্থান লাভ করে সিভিল সার্ভিসে যোগ দেন।
অসাধারণ মেধাবী ছাত্র আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ খান দীর্ঘদিন পল্লী উন্নয়ন ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। জাতিসঙ্ঘ ব্যবস্থাতেও তিনি দীর্ঘদিন খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (ফাও)-এর এশীয় প্যাসিফিক অঞ্চলের পরিচালক ছিলেন। এ ছাড়া কৃষিমন্ত্রী ও রাষ্ট্রদূত হিসেবেও তিনি কাজ করেছেন।
তবে দেশবাসীর কাছে তার মুখ্যপরিচয় কবি হিসেবে। একুশের প্রথম সংকলনে তার লেখা ‘কোন এক মাকে’- কবিতা প্রতি শহীদ দিবসেই পাঠ করা হয়। কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ কাব্য জগতে তার নিজের ভূবন গড়ে তুলেছিলেন। এই কবিতা লিখতে গিয়ে তিনি আবিস্কার করেছেন আমাদের পূর্ব পুরুষদের সংগ্রামশীল উত্তরণ। বাক্য ভাবনা নির্মাণে তার মৌলিকত্ব তাকে পৃথক করেছিল আর সব কবি থেকে। তার প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘সাত নরীর হার, কখনো রং কখনো সুর, কমলের চোখ, আমি কিংবদন্তীর কথা বলছি’ সহিষ্ণু, প্রতীক্ষা, বৃষ্টি এবং সাহসী পুরুষের জন্য, খাঁচার ভিতর অচিন পাখি, প্রত্যেকটির বৈশিষ্ট্যে স্বতন্ত্র। অন্য সব কবিতা বাদ দিয়ে তার একটি মাত্র কবিতা ‘আমি কিংবদন্তীর কথা বলছি’ দিয়েই তিনি বাংলা কবিতা সাহিত্যে বেচে থাকবেন অনন্তকাল।
কেবল কবিতা নয় বাংলা ও ইংরেজি গদ্যেও তিনি ছিলেন অনবদ্য। ভোরের কাগজ, জনকণ্ঠ, সাপ্তাহিত-২০০০, ডেইলি স্টারসহ বাংলা ইংরেজি দৈনিকে তার উন্নয়ন ও পরিবেশ সংক্রান্ত কলাম বিষয়বস্তু ও রচনা শৈলী উভয় দিক থেকে অনন্য ছিল। ইংরেজিতে লেখা তাঁর বইগুলো উন্নয়ন ভাবনার ক্ষেত্রে নতুন চিন্তার সংযোজন করেছে।
তিনি বার্ডের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ছিলেন। সাহিত্যকর্মে অবদানের জন্য তাকে একুশে পদক ও বাংলা একাডেমি পদক প্রদান করা হয়। কবিতা সংগঠন ‘পদাবলী’র তিনি ছিলেন প্রতিষ্ঠা সভাপতি।