1.
নামজাদা কবি, কথাসাহিত্যিক, চিন্তাবিদ কুমার সুশান্ত সরকার বলেন,
আমার দৃষ্টিতে ধর্মনিরপেক্ষ কথাটি ভণ্ডামি। এ (ধর্মনিরপেক্ষতা)- এক চরম ধাঁধা ও ভণ্ডমি কারণ এতে আরো বেশি সাম্প্রদায়িকতা বাড়ে তার প্রমাণ অতীত ও বর্তমান।’ উগ্র ভারতের সাম্প্রদায়িকতা সম্পর্কে তিনি বলেছেন, ভারতবর্ষের সংবিধানের এক প্রধান স্তম্ভ ধর্মনিরপেক্ষতা হওয়ার জন্যে সংখ্যা গুরুদের সাম্প্রদায়িকতার প্রসার আরও অনেক বেশি উদ্বেগের, কারণ একমাত্র সংখ্যাতত্ত্বের কারণেই এদের সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি করার ক্ষমতা অনেক বেশি। এই পটভূমিকায় ভারতবর্ষে সাম্যবাদী ও মানবতাবাদী আন্দোলন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে আর সাম্প্রদায়িক উগ্র মৌলবাদী দল বিজেপি, ধ্বংসলীলায় মজে আছে।’[কুমার সুশান্ত সরকার: হিন্দুদের গরু খাওয়া বৈধ ও বিবিধ সমালোচনা, নৃ-প্রকাশ, বাংলাবাজার ঢাকা ১১০০, অষ্টম সংস্করণ একুশে বইমেলা ২০১২, পৃ 115]
2.
ড. মানে আল-জুহানী লিখেছেন: রাষ্ট্রীয় জীবন ও সামাজিক জীবন থেকে ধর্মকে বহিষ্কার করে জাগতিক জ্ঞান ও বিবেকবুদ্ধির ভিত্তিতে জীবনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার আহবানই- ধর্মনিরপেক্ষতা। ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের মতে, ধর্ম মানুষের মনের খাঁচায় বন্দি থাকবে, খুবই সীমাবদ্ধ পরিসরে ধর্মকে প্রকাশ করা যাবে। অথচ যে ব্যক্তি ইসলাম ধর্মের পরিবর্তে ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করে এবং জীবনের সকল ক্ষেত্রে ইসলামী শরীয়তকে আইন হিসেবে গ্রহণ করে না এবং আল্লাহতায়ালা যা কিছু হারাম করেছেন সেগুলোকে সে নিষিদ্ধ করে না- সে মুরতাদ; সে মুসলিম নয়। [ড. মানে আল-জুহানী: ধর্মনিরপেক্ষতা ও ইসলাম (তরযমা: মুহাম্মদ নূরুল্লাহ তারীফ, সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া, জাহাজমারা, হাতিয়া, নোয়াখালী, প্রথম প্রকাশ জুলাই 2015, পৃ ১৪]
3.
প্রফেসর ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব বলেছেন, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ’ একটি নিরেট কুফরী মতবাদ। ইসলামের সাথে এর আপোষের কোন সুযোগ নেই। [মাসিক আত-তাহরীক, 18তম বর্ষ, 15তম সংখ্যা, জুলাই 2015]
4.
নামজাদা রাজনীতি বিশ্লেষক, কলামিষ্ট গৌতম দাস লিখেছেন:
‘ভারতীয় উপমহাদেশে যে সেকুলারিজম ধারণা পাওয়া যায় সেটা আসলে খাঁটি ইসলামবিদ্বেষ। ইসলামের বিরুদ্ধে এই ঘৃণা-বিদ্বেষকে আড়াল করতেই সেকুলার বা ধর্মনিরপেক্ষবাদী শব্দটা ব্যবহার করা হয়।’ (সূত্রঃ গৌতম দাস ডট কম, ফরেন অ্যাফেয়ার্সে ইসলামবিদ্বেষ শীর্ষক প্রবন্ধ, ২৮ জুলাই ২০১৬ রোজ বৃহস্পতিবার)
5.
বিখ্যাত গীতিকার, সুরকার, গ্রন্থকার, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আবু জাফর বলেন:
বর্তমান সময়ে আমরা যে ধর্মনিরপেক্ষতাকে প্রত্যক্ষ করি, সে হলো আবু জেহেলদের ধর্মনিরপেক্ষতা; যার সাথে সত্য, সততা ও ইনসাফের কোন সম্পর্কই নেই; যার আপতশোভন মুখোশের আড়ালে ক্রূরহাসি নিয়ে বিরাজ করছে মুসলমানদের ঈমান ও আকীদা-বিধ্বংসী এক দানবীয় কুৎসিত মুখাবয়ব।[আবু জাফর: অসহিষ্ণু মৌলবাদীর অপ্রিয় কথা, আরআইএস পাবলিকেশন্স, কাটাবন বুক কর্র্নার, ঢাকা, এপ্রিল ২০০৫, পৃ ১৭২] তিনি আরও লিখেছেন, ধর্মনিরপেক্ষতা হলো-Green Snake in Green Grass অর্থাৎ সবুজ ঘাসে হরিৎবর্ণ বিষধর সরিসৃপ। আর এই সরিসৃপটির কাজই হলো যেকোনো উপায়ে ইসলাম ও মুসলমানকে দংশন করা। [ওই, পৃ ১৬৯]
6.
ভারতীয় নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. অমর্ত্য সেন বলেন: ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের উৎস হিন্দু ধর্ম।কেউ ধর্মনিরপেক্ষতাকে বিশ্বাস করলে তাকে ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করতে হবে। আর বিশ্বাসী হয়ে উঠতে হবে হিন্দু ধর্মের প্রথায়। [সূত্রঃ ড. অমর্ত্য সেন: দি আরগুমেন্টেটিভ ইন্ডিয়ান; সংগৃহীত: দৈনিক আমার দেশ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা: 05.04.2011]
7.
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কানসাস স্টেট ইউনিভার্সিটির গণিতের অধ্যাপক ও রোমান ক্যাথলিক পরিবারের সন্তান অধ্যাপক জেফরি লাঙ বলেন:
‘ইসলাম জীবনকে ধর্মনিরপেক্ষ অংশ এবং ধর্মীয় অংশ এমন বিভাজন করে না। সেজন্যে কুরআন মানবসভ্যতার বিস্তৃত ঘটনাবলি এবং অভিজ্ঞতাকে আন্ত:বুনন আলোচনা করেছে; জাতিসমূহ এবং ব্যক্তিবর্গের উত্থান পতন; প্রকৃতি ও জীবনজগত সম্পর্কে পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ; সমাজ ও আইন পরিগঠন; মানুষের মনস্তাত্বিক বিষয় ইত্যাদি সব বিষয়ে আলাপ করেছে; মানুষকে ইহকালের পথ দেখাতে এবং আল্লাহ অস্তিত্ব ও একত্ববাদের বিষয়ে তাকে সচেতন করেছে। কুরআনের বর্ণনায় এটা মূর্ত হয়ে উঠেছে যে মানবসভ্যতার ইতিহাস, সৃষ্টিজগতের বৈচিত্র্য, মহাজগতের অনুপম শৃঙ্খলা সবকিছুই এক একক মহাসত্ত্বার অস্তিত্ব ঘোষণা করছে; সেই মহান প্রভু স্রষ্টা, পালনকর্তা, রিজিকদাতা এবং সবকিছুর নিয়ন্ত্রক। এ বিষয়ে কুরআনের বর্ণনাশৈলী আর সব ধর্মগ্রন্থকে ছাড়িয়ে গিয়েছে।’ [প্রফেসর জেফ্রি লাং: আত্মসমর্পণের দ্বন্দ্ব, (স্ট্রাগলিং টু সারেন্ডার এর তরযমাঃ ড. আবু খলদুন আল-মাহমুদ) বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক থ্যট (বিআইআইটি), দ্বিতীয় সংস্করণ জুন ২০১৫, পৃ ৩৫]