নবাব স্যার সলিমুল্লাহর হত্যাকাণ্ড

মাহমুদ ইউসুফ ।।
.
বিশ শতকে বাংলাদেশের জাতীয় জাগরণের মন্ত্রগুরু স্যার সলিমুল্লাহ। রাজনীতিক, সমাজসংস্কারক, জনদরদি এই নায়কের আবির্ভাব ঢাকায়। ঢাকার সার্বিক উন্নয়নের গোড়াপত্তন করেন নবাব সলিমুল্লাহ। ঢাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ তাঁরই অনবদ্য অবদান। আমাদের সুখের ঠিকানা, স্বস্তির ঠিকানা, শান্তির ঠিকানার প্রথম প্রয়াস তাঁরই। মানুষের সুখ-দুঃখের খতিয়ান, চাওয়া-পাওয়ার হিসেব-নিকেশ তাঁর অজানার বাইরে ছিলো না। তিনি জীবন-জিন্দেগি মানুষের তরেই বিলিয়ে দিয়েছিলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ, বাংলা একাডেমি, বুয়েটসহ অসংখ্য প্রতিষ্ঠান স্যার সলিমুল্লাহ ও নবাব হাবিবুল্লাহর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত। বঙ্গভঙ্গ স্থায়ীকরণ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রয়াসে তাঁকে মুত্যুর মুখোমুখি হতে হয়।
.
এক.
বঙ্গভঙ্গ স্থায়ীকরণের দাবিতে এক সভায় যোগদান করতে তিনি কুমিল্লায় যান। সেখানে এক হিন্দু বাড়ি থেকে তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করা হয়। তবে সে যাত্রায় তিনি বেঁচে যান। এ প্রসঙ্গে ড. নিরদ চন্দ্র চৌধুরী উল্লেখ করেন: At about the same time we heard of the rioting in the town of Comilla, occationed by the visit of the Nawab of Dacca. The conversation of the elders gave us the impression that although the trouble had been provked and started by the Muslims, they and more particularly their Nawab had not come out of the affair with flying colours. The elders related with contemptuous armousement that as soon as a gun had been fired at the Nawab from a Hindu house, he had ran for dear life to Dacca. That was our version of the event, and we, the children discussed with glee the flight and loss of face of Salimullah, the One eyed. [The Auto Biography of An Unknown Indian, Bombay, p. 238]
.
দুই.
পরবর্তীতে বড়লাট লর্ড হার্ডিঞ্জ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধীতাকারীদের সাথে নবাবের চরম বিরোধ সৃষ্টি হয়। এই বিরোধের জেরেই তাঁর অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘটে। তাঁর হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে নবাবের দুধমাতা ও ঢাকার কাদের সর্দারের উদ্ধৃতি দিয়ে ইতিহাসবিদ কবি ফারুক মাহমুদ বলেন, হিন্দুদের চক্রান্তের ফলে ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা নিয়ে বড়লাটের সাথে নবাবের মতবিরোধ দেখা দেয় এবং উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। এক পর্যায়ে বড়লাট নবাবকে অপমানজনক কথা বলেন। তাঁর সহ্য হয়নি। নবাবের সথে সব সময় একটি ছঁড়ি থাকত। সে ছঁড়ি দিয়ে নবাব বড়লাটের টেবিলে আঘাত করেন। এ নিয়ে চরম তীর্যক বাদানুবাদ শুরু হয়। এক পর্যায়ে বড় লাটের ইঙ্গিতে তার দেহরক্ষী নবাবকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন এবং গুরুতর আহত অবস্থায় নিশ্চিদ্র প্রহরায় হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানেই তিনি প্রাণ হারান। বড়লাট নবাবকে জনসাধারনের কাছে নবাবের স্বাভাবিক মৃত্যু প্রমাণ করার জন্য কড়া সামরিক প্রহরায় নবাবের লাশ ঢাকায় আনা হয়। তাঁর আত্মীয়-স্বজনকেও লাশ দেখতে দেয়া হয়নি। সামরিক প্রহরায় বেগম বাজারে তাঁকে দাফন করা হয়। দাফন করার পরও বহুদিন নবাবের কবরস্থানে সামরিক প্রহরা বিদ্যমান ছিলো।’ এভাবেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিতে কিংবদন্তি নেতা স্যার সলিমুল্লাহ নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার হন ১৯১৫ সালে। পরিতাপের বিষয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ নবাব সলিমুল্লাহর কোন স্মরণ নেই। সেখানে তাদেরই জয়গান যারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার চরম বিরোধীতা করেছিল।
.
সূত্র:
সরকার শাহাবুদ্দিন আহমদ, আত্মঘাতী রাজনীতির তিনকাল প্রথম খণ্ড, বুক ফেয়ার, বাংলাবাজার ঢাকা, ফেব্রুয়ারি ২০০৪, পৃ ২১৩-২২১

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *