পারিবারিক জীবনে ইসলামের শিক্ষা

মো: মাকসুদুর রহমান

সুন্দর ও সুখি পরিবার গঠনে পরিবারের ভূমিকা অনেক বেশি। আল্লাহতায়ালা শিক্ষণীয় ও উপদেশমূলক অনেক ঘটনা বর্ণনা করেছেন। এর মধ্যে সন্তানের প্রতি মাতা-পিতার দায়িত্ব সম্পর্কেও বিশদ আলোচনা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে লোকমান হাকিমের ঘটনা উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে কোরআনুল কারিমে। লোকমান হাকিম তাঁর ছেলেকে যে উপদেশ দিয়েছেন, তা এতই সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য হয়েছে, মহান আল্লাহতায়ালা তা কোরআন কারিমে তাঁর নামে একটি সুরা নাযিল করে বিশ্ববাসীর কাছে চির স্বরণীয় করে রেখেছেন।
ইসলামের শিক্ষা
১. লোকমান হাকিম তার ছেলেকে নামাজ কায়েমের উপদেশ দেন। হে আমার প্রিয় বৎস! সালাত কায়েম কর। তুমি সালাতকে তার ওয়াজিব ও রোকনসমূহসহ আদায় কর। ২. তুমি ভালো কাজের আদেশ দাও এবং মন্দ কাজ থেকে মানুষকে নিষেধ কর। বিনম্র ভাষায় তাদের দাওয়াত দাও, যাদের তুমি দাওয়াত দেবে তাদের সঙ্গে কোনো কঠোরতা কর না। ৩. যে তোমাকে কষ্ট দেয় তার ওপর তুমি ধৈর্য ধারণ কর। ৪. তুমি মানুষের দিক থেকে তোমার মুখ ফিরিয়ে নিও না। ৫. অহঙ্কার ও হঠকারিতা প্রদর্শন করে জমিনে হাঁটাচলা করবে না। কারণ, এ ধরনের কাজের কারণে আল্লাহ তোমাকে অপছন্দ করবে। নিশ্চয় আল্লাহ কোনো দাম্ভিক, অহঙ্কারীকে পছন্দ করেন না। অর্থাৎ যারা নিজেকে বড় মনে করে এবং অন্যদের ওপর বড়াই করে, মহান আল্লাহতায়ালা তাদের পছন্দ করেন না। ৬. নমনীয় হয়ে হাঁটাচলা কর। তুমি তোমার চলাচলে স্বাভাবিক চলাচল কর। খুব দ্রুত হাঁটবে না আবার একেবারে মন্থর গতিতেও না। মধ্যম পন্থায় চলাচল করবে। তোমার চলাচলে যেন কোনো ধরনের সীমালঙ্ঘন না হয়। ৭. নরম সুরে কথা বল। তোমার আওয়াজ নিচু কর। আর কথায় কোনো বাড়াবাড়ি করবে না। বিনা প্রয়োজনে তুমি তোমার আওয়াজকে উঁচু কর।
পরিবারের শিক্ষা
আমরা অনেক বাবা- মাই সন্তানের সকল চাহিদা পুরণ করতে না পারলে নিজদেরকে ব্যর্থ মনে করি। আসলে বাবা- মা হিসেবে আপনি ব্যর্থ? সন্তানের মৌলিক চাহিদাগুলো আবশ্যই পালন করার চেষ্টা করবেন। আমরা অনেক বাবা-মাই জানিনা, সন্তান যেগুলো ডিমান্ড করছে, এগুলো তার বয়স এবং যোগ্যতার মাপ কাঠিতে দেয়া যায় কিনা? সে এগুলোর সঠিক ব্যাবহার করতে পারবে কিনা? তার চাওয়াটা কতটুকু যুক্তি সঙ্গত? এটাকি তার এ মূহুর্তে খুব বেশি প্রয়োজন? এ বিষয়গুলো আপনি অভিবাবক হিসেবে একটু ভাবা প্রয়োজন। আমি একটি উদাহরন দিচ্ছি, ধরুণ আপনি একটি ছুরি, কাচি অথবা এজাতীয় কোন জিনিস কোন ডাক্তারের ইনুস্ট্রুমেন্ট হিসেবে কিনে দিলেন, সে এগুলো দিয়ে কি করবে? অবশ্যই সে এগুলো দিয়ে ক্লিনিক্যালি কোন ভাল কাজে ব্যাবহার করবে। নিশ্চয় এটা একটি মহৎ কাজ! আর আপনি যদি এগুলো কোন পাগল, অবোধ বালক- বালিকার হাতে তুলে দেন সেকি এগুলোর সঠিক ব্যবহার করতে পারবে? আমরা সকলেই চাই আমাদের সন্তানগুলো মানুষের মত মানুষ হোক। কিন্তু আমরা সে মোতাবেক নিজদেরকে কৌশলি করে গড়ে তুলতে অনেকাংশেই ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে থাকি। অনেক সময় সন্তানের আবদার মিটাতে গিয়ে এ ভুল গুলো করে থাকি। কিন্তু মনে রাখতে হবে এ যুগের সন্তানদের ডিমান্ড অনেক বেশি। সব চাহিদা সব সময় পুরণ করতে নেই, কারন এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। আমরা অধিকাংশ পরিবারই সন্তানকে রিচ ফুড গুলো না খাওয়াতে পারলে নিজকে ব্যর্থ বাবা- মা হিসেবেই মনে করি। এমন অনেক পরিবারের গল্প আমরা শুনে থাকি, যে বাচ্চা রাত বারটা- একটা হোটেলের অথবা ফাস্ট ফুডের ঐ খাবারটা এখন তার চাই! আবেগি বাবা দোকানদারকে ঘুম থেকে জাগিয়ে সন্তানের জন্য কিনে নিয়ে এসেছে। এতে সন্তানের মাথায় কি মেসেজ দিলাম, কি শিখল আমার নিকট থেকে। আমরা একটুও ভাবিনা এখাবারটা এত রাতে খাওয়া কি খু্ৃব বেশি প্রয়োজন? এটা খাওয়ালে কি তাদের স্বাস্থ্যের কোন ধরনের ক্ষতির আশংকা রয়েছে কিনা? সন্তানদের চাহিদা পুরণ করতে পারলে আমাদের সবারই কম বেশি ভালো লাগে এটা ঠিক। তেমনি সন্তানকে এটাও শিক্ষা দিন, চাইলেই সব পাওয়া যায়না। অনেক সময় না পাওয়ার মধ্যেও আনন্দ আছে এটা তাকে শেখানোর চেষ্টা করুন। এতে সে সমাজ বাস্তবতাকে উপলদ্ধি করতে শিখবে। আসলে বাচ্চার আগুনে হাত দিতে চাইবে, পানিতে ঝাপ দিতে চাইবে, এগুলো বাচ্চাদের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। সচেতন পিতা-মাতা হিসেবে আপনাদেরকে এগুলোর প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। নিজদের সন্তানদেরকে আমরা সবাই হৃদয় থেকে ভালবাসি, এটা আমাদের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। এতে দোষের কিছু নাই। এটার মধ্যে রয়েছে কল্যাণ, মহানুভবতা, উদারতা এবং নিষ্কলুস ভালবাসা।
আপনার ছেলের এ মূহুর্তে আবদার একটি দামি মোবাইল ফোনের। কারন, তার বন্ধুর একটি দামি মোবাইল ফোন রয়েছে, এখন এটা তার চাই। কিন্তু আপনার কিনে দেওয়ার মত যথেষ্ট সামর্থও আছে। আপনার করনীয় কি? দ্বিধান্বিত হয়ে পরছেন নিশ্চয়ই! একটু ভেবে দেখুন, এ ফোনটি ব্যবহার করার মত সে য়োগ্যতা রাখে কিনা? এফোনটার দুটো দিকই রয়েছে, ভাল- মন্দ। এটার পার্থক্য করার মত মেন্টালিটি তার এখন পর্যন্ত সে অর্জন করতে পারল কিনা? এসব বিষয়গুগো অবশ্যই বিবেচনায় আনবেন। নাহলে ঐ ছুরি বা কাচির মত অবস্থাও হতে পারে। আব্রাহাম লিংকনের উপদেশ বাণীগুলো আজও স্বরণীয় হয়ে আছে। একজন পৃথিবী বিখ্যাত সফল রাষ্ট্র নায়ক হওয়া সত্বেও, তিনি তাঁর সন্তানকে সাধারণ একজন ছাত্রের মত করে গড়ে তোলার জন্য শিক্ষককে বলে দিয়েছেন। যাতে সে শিখতে পারে, কুঁড়িয়ে পাওয়া হজার টাকার চেয়ে, উপার্জন করা একটি টাকা অনেক বেশি উত্তম। আসুন আমাদের সন্তানদেরকে ভাল মানুষ হিসেবে গড়ে তুলি। জাতির কল্যাণে ভূমিকা রাখতে পারে। সচেতন হই, সাহসী হই, আবেগকে প্রধান্য না দিয়ে বাস্তবতাকে বোঝার চেষ্টা করি। তাহলেই পেতে পারি শোষণ, বঞ্চনামুক্ত একটি সমাজ। গড়ে তুলি নবীনের হাত ধরে বিজয়ের নতুন একটি পতাকা।

মো: মাকসুদুর রহমান, বোরহানউদ্দিন, ভোলা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *