প্রজন্মে হাহাকারে উপকূলের জেলেজীবন

খাজা আহমেদ ।।
.
গত কয়েক দশকে বাংলাদেশে মাছের উৎপাদন ৪–৫ গুণ বাড়লেও জেলেদের জীবনমানের কোনো উন্নতি হয়নি। যদিও আবহমানকাল থেকেই এদেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক লোক জীবন ধারণের জন্য প্রধানত মৎস্য আহরণ ও তৎসম্পর্কিত পেশার ওপর নির্ভর করে আসছেন। দেশের বড় একটা সংখ্যা জেলে সম্প্রদায় থাকলেও সামগ্রিকভাবে জেলেরা বঞ্চনা ও বৈষম্যের শিকার আজো চোখে পড়ার মত। জীবনের নানাবিধ বাঁক পরিবর্তনে তাদের একের পর এক ধাক্কার সম্মুখীন হতে হয় আজও। সমুদ্রের উত্তাল তরঙ্গে যাদের অহর্নিশ লড়াই করে বাঁচতে হয় এবং বেঁচেও যাই তারাই আবার আমাদের ভদ্রপল্লিতে একান্ত নিরুপায়।
.
বাংলাদেশের জেলেদের বৃহত্তর একটা অংশের থাকার মত স্থায়ী ঘরবাড়ি নেই। কোনোভাবে অন্যের জায়গায় মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নেন। এমনও দেখা গেছে নদী কিংবা সমুদ্রের পাড়ে অস্থায়ী ঘর নির্মাণ করে কাটিয়ে দিতে হয় তাদের অনেক কাল। বউ, ছেলে-মেয়ে নিয়ে এই বিভৎস জীবনে তাদের কি মনে চায় না, শান্তি সুখের অবিচ্ছেদ্য কিছু অংশ তাদেরও থাকুক?
.
আমাদের জেলেরা যদি কাজ না করেন, তাহলে আমাদের মাছের চাহিদা পূরণ হবে না। মাছের চাহিদা পূরণ না হলে আমরা নানা রোগে আক্রান্ত হতে পারি। কারণ, মাছ আমাদের একটি অন্যতম সহযোগী খাবার। এই মহা সত্য বুঝতে আর কতো সময় আমাদের লাগবে!
.
উপকূলীয় জেলেদের অবস্থা আরো বেশি খারাপ এখন পর্যন্ত। আমাদের উপকূলীয় জেলেদের জীবনমান উন্নয়নের বিষয়টি দেখতে হবে সামগ্রিক আর্থসামাজিক উন্নয়নের নিরিখে। মাঝেমধ্যেই জলদস্যুদের আক্রমণের শিকার হয়ে নৌকা, জালসহ সহায়-সম্পদ হারান। কোনো কোনো ক্ষেত্রে জীবনহানির ঘটনাও ঘটে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, উপকূলীয় অঞ্চলে দারিদ্র্যের হার বেশি। সেখানে বছরের দীর্ঘ একটি সময় মানুষের কাজ থাকে না। কিন্তু এ সময়ে তাঁদের সঞ্চয় বলে কিছু থাকে না। ফলে মহাজনদের কাছ থেকে উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে তাঁদের জীবন বাঁচাতে হয়।
.
প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে দারিদ্র্যের শেকলে বাঁধা হাহাকারে  উপকূলের জেলেজীবন। সমুদ্রে দস্যু আর দুর্যোগের আতংক কাটিয়ে কিনারে ফিরতে না ফিরতেই পড়তে হয় এই সব দাদনদার মহাজনদের কবলে। তাই অনেক সময় তাঁরা কম দামে মাছ আগাম বিক্রি করে দেন।
.
আমাদের জেলে সম্প্রদায়ের মধ্যে অনেকাংশে এখন পর্যন্ত শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে আমরা পারিনি। উপকূল ও চরাঞ্চলের অনেক স্থানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নেই। ফলে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অভিভাবকেরা সন্তানদের লেখাপড়ার ব্যবস্থা করতে পারেন না। তাদের এই শূন্যতা পূরণ করতে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা সহ আমরা কি কি ভূমিকা পালন করতে পারি তা পর্যালোচনা করা আজ সময়ের দাবি।
.
লেখকঃ শিক্ষার্থী বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *