বর্ষার কদম ফুল

নিয়ামুর রশিদ শিহাব
.
জ্যৈষ্ঠের প্রখরতায় অভিমানী আকাশ একটু পরপরই গোমড়া মুখ করে কালো মেঘকে সালিশের জন্য ডেকে এনে অঝোর ধারায় কান্না করে। নিমিষেই শুরু হয়ে যায় মুষলধারায় বৃষ্টি! মাঝেমধ্যে যখন কালো মেঘ ব্যস্ত থাকে, আকাশ তখন গাল ফুলিয়ে একা একাই কাঁদতে বসে। তখন রোদ-বৃষ্টি দুটোই একসাথে দেখা যায়। ছোট বাচ্চারা ছড়া কাটে, ‘রোদ হয় বৃষ্টি হয় খেঁকশিয়ালের বিয়ে হয়।’
সূর্য্যি মামার সাথে আকাশের মান-অভিমান খেলার নীরব দর্শক মাটির পুতুলেরা ততক্ষণে বুঝে নেয় আকাশের সাথে গ্রীষ্মের প্রখরতা কমাতে নেমে পড়েছে আম, জাম, কাঁঠালসহ নানা ফল। তাদের ঘ্রাণে মুখরিত চারপাশ। ঠিক তার পরপরই আগমন ঘটে বর্ষার সঙ্গী কদম ফুলের। আর এটাই বর্ষাকালের আগমনী বার্তা।
আষাঢ়-শ্রাবণ এই দুই মাস বর্ষাকাল। গাছে গাছে দেখা মেলে পরিবেশের আরেক অতিথি কদম ফুলের। এই কদম ফুল ললনাপ্রিয়, সুরভী, কর্ণপূরক, বৃত্তপুষ্প নামেও পরিচিত। দেখতে বলের মতো গোল, সরু সবুজ পাতার ডালে ডালে গোলাকার মাংসল পুষ্পাধারে অজস্র সরু সরু ফুলের বিকীর্ণ বিন্যাস আর পূর্ণ প্রস্ফুটিত মঞ্জরির সাদা-হলুদে মেশানো রঙ কদমকে করেছে অনন্য।
আর একটি ফুলের মাঝে এত ভিন্নতার ছোঁয়াতে কদমকে করে তুলেছে আরও গ্রহণযোগ্য। কদম ফুল নিয়ে আমাদের মধ্যে একটা ভুল ধারণা অনেক আগে থেকেই প্রচলিত আছে। আমরা একটি পূর্ণ মঞ্জরিকে সাধারণত একটি ফুল বলে মনে করি। কিন্তু আসলে প্রতিটি ফুল খুবই ছোট, তাদের বৃতি সাদা, দল হলুদ, পরাগচক্র সাদা এবং বহির্মুখী, গর্ভদণ্ড দীর্ঘ। ফল হিসেবে কদম মাংসল, টক তবে বাদুড় ও কাঠবিড়ালীর প্রিয় খাদ্য। আর ওরাই বীজ ছড়ানোর বাহন। রূপসী তরুর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কদম। কদমের কাণ্ড সরল, উন্নত, ধূসর থেকে প্রায় কালো এবং বহু ফাটলে রুক্ষ, কর্কশ। শাখা অজস্র এবং ভূমির সমান্তরালে প্রসারিত। পাতা হয় বড় বড়, ডিম্বাকৃতি, উজ্জ্বল-সবুজ, তেল-চকচকে এবং বিন্যাসে বিপ্রতীপ। বোঁটা খুবই ছোট।
শীতে কদমের পাতা ঝরে আর যখন কচি পাতা গজায় তখন আগমন ঘটে বসন্ত কালের। কদমের গাছ থেকে যেমন জ্বরের ওষুধ তৈরি করা হয়, তেমনি এ গাছ দ্রুত বাড়ে, বিধায় একে জ্বালানি কাঠ হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। অন্যদিকে কদম ফুল উষ্ণ জায়গায় দ্রুত বাড়ে, বিধায় বাংলাদেশ ছাড়া ভারত এবং চীনে এর দেখা মেলে। এ গাছকে তাই কদম্ব বলেও অনেকে চিনে। যার অর্থ ‘যা বিরহীকে দুঃখী করে’! আবিধানিক অর্থ এমন হলেও মূলত কমদ ফুল প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের মাঝেও সুখ ছড়িয়ে দেয়। তাইতো একরাশ কদম ফুল ছাড়া বর্ষা বার্তা জানাতেও আছে কৃপণতা। কদমের এ রূপের কারণে একে যুগে যুগে কবিরা তাদের কবিতার মাঝে অলঙ্কার হিসেবে সাজিয়েছেন। আর লিখেছেন-
‘বাদল-দিনের প্রথম কদম ফুল করেছ দান,
আমি দিতে এসেছি শ্রাবণের গান’।
.
নিয়ামুর রশিদ শিহাব
শিক্ষার্থী, বরিশাল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may use these HTML tags and attributes: <a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>