বেগম ফয়জুন নাহার শেলী :
আমি রায়ের বাজার।
হ্যা, তোমাদের, জাতির উত্তরসূরীকে
আহ্বান করছি
এইখানে এই বদ্ধভূমিতে একটু থেমে যাও
শুনে যাও
জাতির জীবনের এক কালো অধ্যায়ের কথা
চৌদ্দ ডিসেম্বর
এইখানে এইদিনে নিষ্ঠুর বর্বরতা
ঝাপিয়ে পড়েছিল সভ্যতার সোনালি দেয়ালে
জাতির শির উঁচু করে
তাঁদের চলার পথ মসৃণ করতে
এদেরকে হতে হয়েছিল বলি।
শোনো, কান পেতে শোনো এই দেয়ালে
এর পরতে পরতে শুনতে পাবে
স্বজন হারানোর হাহাকার
সন্তানের করুণ আর্তনাদ
পিতার বেদনার্ত উদাস দৃষ্টি
পাগলিনী মায়ের বুকফাটা চিৎকার
আর
উদ্ভ্রান্ত স্ত্রীর স্বামী সনাক্তকরণের করুণ দৃশ্য।
মনের আরশিতে একবার
চোখ মেলে দেখো
অকারণ নিষ্ঠুরতা কীভাবে কেড়ে নিল
স্বাধীনতা পিয়াসী আত্মাকে
নিস্তব্ধ করে দিল
জাগ্রত জীবনের স্পন্দন।
দেখে নাও
স্নেহাতুর পিতার গুলিবিদ্ধ বুক
নিষ্ঠুর হত্যার রেখে যাওয়া
স্নেহ -প্রেম ভালোবাসা আর মায়া-মমতার
অকাল মৃত্যু
স্বজন হারানো কান্নার ব্যাকুলতা
জাতির বোদ্ধা,জাগ্রত বিবেককে
কণ্ঠরুদ্ধ করার অপপ্রয়াস।
হে নতুন প্রজন্মের শিশু
আমি বিজয়ের বার্তাবহ
উচ্চকণ্ঠে ডাকছি
এখানে একটু থেমে যাও
দেখে যাও
থমকে যাওয়া সভ্যতা
শ্রদ্ধায় সম্মানে নত হও।
বিজয়ের পূর্বক্ষণে
কাপুরুষের হিংস্র থাবায়
অকালে হারিয়ে যাওয়া
শহীদুল্লাহ কায়সার, আনোয়ার পাশা, মুনীর চৌধুরীর
উত্তরসূরী আমি
আমি
সিরাজুল হক, সেলিনা পারভীন, সন্তোষ ভট্টাচার্যের
জাগ্রত বিবেক
আমি
মোফাজ্জল হায়দার, শফিকুর রহমান, আবদুল আলীমের
বাঙালি জাতিসত্ত্বা।
মানবতার এই অপমৃত্যুতে
আমি লজ্জিত হই না
হই না নতজানু
শোককে শক্তিতে পরিণত করে
সোচ্চার হই, সমবেত হই
শীর উঁচু করি বিজয়ের গানে
সত্যের আবাহনে
তাই
প্রতি ১৪ ডিসেম্বর
বাঙালি আবারও জেগে ওঠে
তার জাতিসত্তায়
এ মহান মৃত্যু
যুগে যুগে শতজন্মের
সুবারতা এনে দেয়।