শিমুল সুলতানা ।।
কবিতাটি গল্পের মত
আজ রাতে মৃত্যু দরজায় রসিকতা করছে
কবিতাও নয় ঠিক এটি,
একটি বুলডোজার এসেছে পাশে
আমার হৃদপিন্ডের আবাসটি
নড়েচড়ে প্রায় হেলেদুলে উঠছে,
কারন আমার দাদাবাড়িটি অত্যন্ত পুরোনো
এখানে আমার দাদির সংসার ছিল,
মায়ের বিয়ের বয়স একচল্লিশ
সেও এখানে এত বছর।
পুরোনো কুয়া থেকে দাদী পানি তুলত
দাদা শেষ বয়সে প্যারালাইজড হয়ে নিজ ব্যবসায়
মন দিতে পারেনি
কোটিপতি দাদার সিন্দুক দিন দিন খালি হয়ে গেল
শেষে আমরা তিন ভাই বোন
এক জ্যামিতি বক্স, এক ক্যালকুলেটরে
সাইন্সে পড়তাম।
চাইলেও সবকিছু জোটেনি
মায়ের একুশ ভরি গয়না থেকে
একটি বালা আর একটি সীতা হারে এসে ঠেকল।
এর পর অনেক গল্প
সব গল্প বলা যায় না।
আজ তো বলতে চেয়েছি ধনীক শ্রেণির গল্প,
আমাদের গল্প তো সেটা নয়
একটি পুরাতন বাড়ি লাগোয়া পাশের বাড়ি ভেংগে
আট তলা ভবন আর মার্কেট নির্মানের প্রস্তুতি।
চলছে আলোচনা, মামলা আরো কত কি
না এসব আমাদের বিষয় নয়,
সেই শ্রেণি বৈষম্য তো চিরকালের
বুলডোজার তো আসতেই পারে
স্বাভাবিক সেটি কেন গল্প হয়ে ওঠে!
গল্পটি এখানেই শেষ হতে পারে,
আমাদের পুরোনো দোতালা বাড়িটি
ঠকঠক করে কাঁপছে,
আমার বাবা যার হার্টে রিং বসানো
মানুষটিকে ঘুমের অসুধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছি।
যাতে তিনি বুঝতে না পারেন
একটি বুলডোজার এসেছে।
হয়তো আমার পুরোনো দোতলা বাড়িটি
সেই আটতলা ধনীকের শ্রেণিগত বৈষম্য সইতে
না পেরে বার্ধক্যবশত নিজেই অথবা
না আর
লিখতে পারছি না,
হাত কাঁপছে
আমার বারো বছরের সন্তান ছাদ থেকে চিৎকার করে
বলছে থামাও বুলডোজার।
শ্রমিকেরা থামিয়ে দিয়েছে আপাতত কিন্ত
আবার শুরু হবে কাজ যে কোনো সময়ে।
মৃত্যু কাছে এলে
ভয় সবাই পায়।
কিছু মৃত্যু তো স্বপ্নেরও হয়।
হতে পারে এটাই শেষ গল্প
এটাই দারিদ্র্যের নিয়তি।
দোষ হয়ত ধনীকের নয়
আমাদের বাড়িটা নিজেই ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে
বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে কারো
আলিশান প্যালেসের
সৌন্দর্যহানী ঘটাতে।
আর নিজেই যখন ভগ্নদেহ
সে তো প্যালেসের গর্জন এমনি ই
সইতে পারবে না স্বাভাবিক।
তাই এ গল্পটি না হয় মুখ
থুবড়ে পড়ে থাক বুলডোজার চাপায়।