মোহমুক্তি

কামরুল ইসলাম :
সে বহুদিন আগের কথা। আমি একবার খালা বাড়িতে গিয়েছিলাম বেড়াতে। খালাতো বোন বয়সে আমার চেয়ে চার-পাঁচ ক্লাস বড় হলেও আমার সাথে ব্যক্তিগত অনেক কিছুই শেয়ার করে যদিও তার অনেক কিছুই আমি বুঝতাম না। তাদের ঘরের সামনে ছিল একটা গাদা ফুলের বাগান। গাছগুলো যেরকম হয়েছে ফুলগুলো সেরকম হয়নি। ফুলগুলো আকৃতিতে খুবই ছোট। দেখলে মন খারাপ হয়ে যায় এমন একটা অবস্থা।

-আপা এত সুন্দর আর স্বাস্থ্যবান গাছ আর ফুলগুলো কি রকম হয়েছে!

-অসুবিধা নেই যা হয়েছে তাতেই আমি খুশি। জানিস এখানে একটা খুব মজার বিষয় আছে।

– কী আপা?
আমার কথার উত্তর না দিয়ে সে একটা ফুল ছিড়ে আমার হাতে দিল।
-গুণে দেখ তো কয়টা পাপড়ি এখানে।
-আপু, আটটা।
-হুম। ঠিক বলেছিস। এখন বলতো ইংরেজিতে ”আই লাভ ইউ“ লিখতে কয়টা বর্ণ লাগে।
গুণে দেখলাম আটটি বর্ণ। বিষয়টা আসলেই তো মজার। আর কয়েকটা ফুল গুণে দেখলাম একই ফলাফল। বাহ!
সেদিনের পর থেকে এই ছোট জাতের গাদাই আমার প্রিয় বনে গেছে। কিন্তু এই ফুলেই যে আমার সর্বনাশ হবে সেটা কোনোদিন কল্পনায়ও ভাবি নি।
সঞ্চিতার পিছু নিয়েছি বছর খানেক হবে। কিন্তু কখনো নিজের মনের কথা খুলে বলা হয়ে ওঠে নি। অনেকবার বলার চেষ্টা করেও মুখ খুলতে পারি নি। আজ পণ করেছি বলবই। এসপার ওসপার একটা করেই ছাড়বো।
এক বুক নিঃশ্বাস ছেড়ে সাহস সঞ্চয় করে সঞ্চিতার সামনে এসে দাড়ালাম। হৃদস্পন্দন বেড়ে যাচ্ছে টের পেলাম। তবুও আজ পিছু হটবো না। আমার হাতে আমার সেই প্রিয় ফুল।
-সঞ্চিতা শোন।

আমার ডাক শুনে দাড়ায় সে। ওর কথা শুনে মনে অভয় পেলাম। মনে হলো সেও আমার কথাটা শুনতে আগ্রহী। অনেক ভূমিকা টেনে শেষ পর্যন্ত মনের কথা বলে ফেললাম । গাদা ফুলটা সামনে এগিয়ে দিলাম।
-আই লাভ ইউ, সঞ্চিতা!
আমার হাতে ফুলটা দেখে বিরক্ত হয় সঞ্চিতা।
-এটা কী?
-ফুল। আমার প্রিয় ফুল!
-আই হেইট ইউ। আই হেইট ইওর ফ্লাওয়ার!
কিছু বুঝলাম না। এমন হলো কেন? পরে গুণে দেখি ইংরেজিতে ”আই হেইট ইউ” লিখতেও আটটি বর্ণই প্রয়োজন।
আমার সঙ্গে এরকম না ঘটলেও পারতো!

কামরুল ইসলাম সহকারী শিক্ষক (ইংরেজি), পিরোজপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, পিরোজপুর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *