সাব্বির আলম বাবু।।
Tag: সাব্বির আলম বাবু
বিজয় দিবসের হাহাকার
সাব্বির আলম বাবু ।।
স্বাধীনতার আজ প্রায় অর্ধ শতাব্দী পর
চারিদিকে যখন বাজছে বিজয়ের ঘন্টা
বাংলার ঘরময় তখন নিদারুন
বেকারত্ব আর অভাবের হাহাকার,
ভেদ করে আমার শিরা-উপশিরা।
ডিসেম্বর কি দিয়েছে আমাদের?
শোষক আর দূর্নীতির কালো হাত ছুঁয়েছে
আজ বাংলার সমস্ত অস্তিত্ব জুড়ে।
আমি ঘুমাতে পারিনা চারদিকের বারুদের গন্ধে।
বিজয় দিবসে দাড়িয়ে আমি বলতে পারিনা
আমার দেশ আজ ক্ষতবিক্ষত।
মৌলবাদের নামে চলছে বিভিষীকাময় জঙ্গিবাদ।
হায়েনার দল কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে সার্বভৌমত্ব।
প্যারেড ময়দানে দাড়িয়ে কাঁদে হৃৎপিণ্ড
চিৎকার করতে চায় হাতের রাইফেল,
যুদ্ধ চায় আবার যুদ্ধ
কারন আমার শরীরে যে শহীদেরই রক্ত।
আমার সাংবাদিকতার ইতিবৃত্ত
সাব্বির আলম বাবু
এক
ছোটবেলার কথা মনে পড়ে প্রায়শই। ভীষণ আলোড়িত হই। তখন চট্টগ্রামের পতেঙ্গাতে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী জহুরুল হক ঘাঁটিতে আব্বার চাকুরীর সুবাদে বিএএফ শাহীন স্কুলে ৫ম শ্রেনীতে পড়া অবস্থায়ই স্কুলের পাঠ্যপুস্তকে বিভিন্ন গল্প-কবিতা পড়ার আগ্রহ দেখে আব্বা একদিন সাহিত্যিক সুকুমার রায়ের একটি শিশুতোষ বই ‘অবাক জলপান’ আমাকে এনে দিলেন। তখন আমার খুশি আর ধরে না। বইটি পড়ার চেয়ে মলাট আর বইটির গন্ধ শুঁকতাম প্রায়ই। কতবার যে পুরো বইটি পড়েছি তা মনে নেই। ধীরে ধীরে পড়ার পরিধি বাড়তে লাগলো। ঠাকুমার ঝুলি, রকিব হাসানের তিন গোয়েন্দা, কাজী আনোয়ার হোসেনের কুয়াশা, মাসুদরানা, নজরুল, রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র, শেক্সপিয়র, আল মাহমুদ, সৈয়দ ওলিউল্লাহ, সৈয়দ মুজতব আলী, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, সমরেশ মজুমদার, হুমায়ুন আহমেদ, ইমদাদুল হক মিলন, জাফর ইকবাল থেকে শুরু করে নবীন-প্রবীন কত কবি-লেখকদের লেখা গো-গ্রাসে পড়েছি আর লুকিয়ে কখনো কেঁদেছি কখনো হেসেছি সেই কৈশোর বেলায় তার কোন সংখ্যা নেই। পরবর্তীতে ধর্মীয় বইয়ের প্রতিও আমার আগ্রহ জন্মে। পবিত্র কুরআন মাজিদ, বাইবেল, তৌরাত, যাবুর, রামায়ন, মহাভারত ইত্যাদির বঙ্গানুবাদ, মনীষিদের জীবনী প্রচুর পড়েছি। পাঠক থেকে কিভাবে যেন হাটি হাটি পা পা করে লেখক বনে গেলাম। মাঝে মাঝে অপটু হাতে ছোট কবিতা-গল্প লিখতে লাগলাম। সেগুলো আবার দেশের বিভিন্ন দৈনিক, মাসিক পত্রিকায় ও লিটল ম্যাগে পাঠাতে লাগলাম আবার কিছু কিছু ছাপা হতে লাগলো। এক সময় দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও লেখা পাঠাতে শুরু করলাম। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ছত্রিশগড়, মুম্বাই, চায়না রেডিও, ভয়েস অফ আমেরিকা, রেডিও তেহরান থেকে প্রকাশিত বাংলা ম্যাগাজিন, শফিক রেহমান সম্পাদিত ঢাকার মৌচাকে ঢিলেও লেখা পাঠাতাম। এই অভিজ্ঞতা আমার সাংবাদিক জীবনে বেশ কাজে লেগেছিল। পাঠক ও লেখক হিসাবে শৈশব-কৈশোরের জমানো বইয়ের একটি সংগ্রহশালা ছিল আমার। বলা যায় ছোটখাট ব্যাক্তিগত লাইব্রেরি। মাঝে মধ্যে যখন সাজানো বুক শেল্ফের উপর নজর বুলাতাম নিজেই অবাক হয়ে যেতাম যে সত্যিই এই বইগুলো কি আমি পড়েছি বা এতে আমার লেখা আছে, নিজেই বিশ্বাস করতে পারতাম না। এক অজানা ভালো লাগায় মনটা ভরে যেতো। তবে বেরসিক প্রকৃতি কখনোই কাউকে পূর্নতা প্রাপ্তি হতে দেয় না। বিস্বাদের ছায়া যেন সেখানে থাকবেই। যেন একই মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠ। একদিন জমানো বই গুলোর উপর পরে থাকা ময়লা পরিষ্কার করতে গিয়ে দেখলাম বাইরে থেকে সাজানো গোছানো দেখালেও বেশীর ভাগ বইগুলোর ভেতরে উঁইপোকা খেয়ে ফেলেছে। দারুন এক কস্ট পেয়েছিলাম। সেই থেকে আর কখনো বই সংরক্ষণে ইচ্ছা করিনি। যাই হোক, কৈশোরে আব্বার চাকুরী থেকে অবসরের পর নিজ পৈত্রিক এলাকা ভোলা জেলার লালমোহন উপজেলার ডাওরী হাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৭ম শ্রেনীতে ভর্তি হই। শ্রেনীকক্ষে গিয়ে দেখলাম সহপাঠীরা আমার থেকে বিভিন্ন পাঠ্য বিষয়ে অনেক পিছিয়ে। এটি শহর ও গ্রামের শিক্ষা ব্যবস্থার পার্থক্য বুঝতে পারলাম। আরেকটি বিষয়ে চমকে গেলাম যে, শিক্ষক যে বিষয়ের উপর কোন কিছু লিখতে দেন বা পরীক্ষার প্রশ্নে আসে তাই আমি কমন না পড়লেও ১০/১৫ লাইন আইডিয়ার উপর লিখতে পারি। নিজের এই সুপ্ত প্রতিভা নিজেই জানতাম না। আমার সাংবাদিকতা জীবনে যা কাজে লেগেছিল।
দুই
গ্রামের পোস্ট অফিসের সাথে আমার ছিলো অন্তরঙ্গ সম্পর্ক। সরকারি ছুটি ছাড়া এমন কোন দিন নেই যে পোস্ট অফিসের বারান্দায় আমি পা দেইনি। তখন দৈনিক পত্রিকায় সংবাদ পাঠানো, বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার লিটলম্যাগ ও বিদেশের লিটলম্যাগে পঞ্চাশ পয়সা বা এক টাকার ডাকটিকেট লাগিয়ে খোলা হলুদ খামের উপর বুকপোস্ট বা খোলাডাক লিখে লেখা পাঠাতাম। এবার আসি কিভাবে সাংবাদিকতায় এলাম। আগেই লিখেছি আমি শৈশব থেকেই একজন নিয়মিত পাঠক ছিলাম, আমার আব্বাও তাই। তিনি ছিলেন সাহিত্য-সংস্কৃতিমনা রাজনৈতিক সচেতন পাঠক। অভ্যাসগতভাবে দৈনিক পত্রিকা তার পড়তেই হতো। দৈনিক সংবাদ ও সাপ্তাহিক আজকের সূর্যোদয় পাঠক ছিলেন তিনি। পরবর্তীতে দৈনিক আজকের কাগজ পত্রিকা হকার বাসায় দিতে শুরু করলো। সেই পত্রিকার বিভিন্ন বিভাগের মাঝে কাগজ পাঠক ইউনিট (কাপাই) নামক শিক্ষার্থী ও পাঠকদের জন্য একটি বিভাগ ছিল যেখানে পাঠকদেরও লেখালেখির সুযোগ ছিল। নিয়মিত লেখকদের আবার পরিচিতি কোড নম্বর ছিল। আমিও একদিন কৌতুহলবশত একটি কবিতা সেই বিভাগের ঠিকানায় পাঠালাম। হঠাৎ একদিন দেখলাম কবিতাটি ছাপা হয়েছে। এই প্রথম কোন জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় আমার লেখা ছাপা হলো। উত্তেজনায় দুই কান লাল হয়ে গেলো। এরপর একদিন দেখলাম সেই কাপাই বিভাগে একটি ঘোষণা এলো যে, ভোলা জেলার সকল কাপাই বন্ধুদের লালমোহন ডাকবাংলোয় একসাথে মিটিংয়ের আমন্ত্রণ। নির্দিষ্ট তারিখের আগের রাতে ঘুমাতে পারিনি রোমাঞ্চকর অনুভূতির কারনে। কখন আসবে সেই মহেন্দ্রক্ষণ, যখন সকল লেখক-পাঠকদের সাথে পরিচিত হতে পরবো। অতঃপর নির্দিষ্ট তারিখে পড়ন্ত বিকেল বেলায় ভোলার সকল কাপাই বন্ধুরা একত্রিত হলাম। মোঃ জসিম জনি, রিপন শান, সাইফ বাবলু, জাকির আশরাফ, বাশার ইবনে মোমিন, মাহমুদ হাসান লিটন, ফখরে আজম পলাশ, জাকির হোসেন, আবু ছিদ্দিক, ইয়াসিন সিরাজী, রাশেদ হেলালী, তপতী সরকার, আফরোজা শিখা প্রমুখ নতুন নবীন-প্রবীন লেখক-পাঠকদের সাথে পরিচিত হলাম। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আমাদের প্রানবন্ত আড্ডা হলো। আড্ডার এক পর্যায়ে জানতে পারলাম যে আমি ছাড়া সকলেই স্থানীয় সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে জড়িত। তোলপাড় কৃস্টি সংসার, নান্দিকার একাডেমী, অঙ্গিকার নাট্যমী, গীতিচয়ন শিল্পী গোষ্ঠী ইত্যাদি সংগঠন তখন বেশ দাপট ও জনপ্রিয়তার সঙ্গে কাজ করছে। বন্ধু মোঃ জসিম জনি আমাকে তোলপাড় কৃষ্টি সংসারের সদস্য করে নিলেন। আমার লেখালেখির প্রতি আগ্রহ দেখে তার সম্পাদিত ‘সময়ের শিখা’ পত্রিকায় লেখার আমন্ত্রণ জানালেন। উৎসাহ পেয়ে লিখতে শুরু করলাম। এমনই সময় একদিন ভোলা সদরের সিনিয়র সাংবাদিক-সংস্কৃতিকর্মী ও আবৃত্তিশিল্পী সামস-উল আলম মিঠু ভাই লালমোহনে আসলে বন্ধু মোঃ জসিম জনি আমার সাথে তার পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সাথে মিঠু ভাই গণমাধ্যম বিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ম্যাস-লাইন মিডিয়া সেন্টার (এমএমসি) পরিচালিত তৃনমূল সংবাদকর্মী প্রশিক্ষণ বিষয়ক কর্মশালায় অংশ গ্রহনের জন্য আমাকে আমন্ত্রন জানালেন। আমি সানন্দে প্রস্তাবটি লুফে নেই।
তিন
২০০৪ সালে ভোলায় অনুষ্ঠিত সেই প্রশিক্ষণ কর্মশালায় সাংবাদিকতার অনেক খুটিনাটি বিষয় ও কৌশল শিখলাম। সেখানেও সজিব শাহরিয়ার, মেজবাহউদ্দীন শিপু, আফজাল হোসেন লাভলু, মোজাহেরুল হক রুমেন, আব্দুল হালিম সহ আরো অনেক নতুন বন্ধু পেলাম যারা বর্তমানে স্ব স্ব স্থানে সমুজ্জ্বল। এরই মাঝে বরিশালের সংস্কৃতজন, সৈয়দ দুলাল ও সিনিয়র সাংবাদিক স্বপন খন্দকারের হাত ধরে বরিশালের আঞ্চলিক পত্রিকা দৈনিক আজকের পরিবর্তন বাজারে আসে। বন্ধু মোঃ জসিম জনি আমাকে সেই পত্রিকায় কাজ করার জন্য আমন্ত্রন জানায়। আমরা দুজনেই একসাথে সেখানে বেশ কিছুদিন কাজ করি। গ্রাম বাংলার আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সাধারন মানুষের সমস্যা-সম্ভাবনা, ইতিহাস- ঐতিহ্য-সংস্কৃতি কলমের মাধ্যমে সকলের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করছি। সমকালীন সময়ে একঝাঁক তরুন সংবাদকর্মীর সমন্বয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় লালমোহন রিপোর্টার্স ইউনিটি। সদস্য হিসাবে আমাকে রাখা হয় পরে লালমোহন প্রেসক্লাবের সদস্য করা হয়। হঠাৎ একদিন রোদসী কৃস্টি সংসারের একটি অনুষ্ঠানে বরিশালের দৈনিক বরিশাল বার্তার তৎকালীন বার্তা সম্পাদক আযাদ আলাউদ্দীন লালমোহনে এলে তাঁর সাথে পরিচয় হয়। তিনি আমাকে তাঁর পত্রিকায় কাজ করার আমন্ত্রণ জানান। কিছুদিন সেই পত্রিকায় কাজ করার পর তিনি অন্য পত্রিকায় চলে গেলেন। তাই আমিও সেখানে কাজ করার উদ্যম হারিয়ে ফেললাম। এর মধ্যে এমএমসি ও পাক্ষিক মেঠোবার্তার আরেকটি প্রশিক্ষণে ঝালকাঠী যাই। সেখানে ঝালকাঠীর সিনিয়র সাংবাদিক হেমায়েত উদ্দীন হিমু, মেঠোবার্তা সম্পাদক র. ম আরঙ্গজেব, আমীন আল রশীদ, আসমা নারগিস এ্যানী, বরিশালের মামুনুর রশিদ নোমানী, রফিকুল ইসলাম, বরগুনার আবু জাফর সালেহ, সাফায়েত আল মামুন, পিরোজপুরের জাকারিয়া এজাজ প্রমুখের সাথে নতুন করে সম্পর্ক হয়। পাক্ষিক মেঠোবার্তা ছিল তখন একমাত্র পত্রিকা যে মফস্বলের সাংবাদিকদের লেখার সম্মানি দিতো। দৈনিক শাহনামার বার্তা সম্পাদক মামুনুর রশিদ নোমানী তখন আমাকে তাঁর পত্রিকায় কাজ করার আমন্ত্রণ জানান। দীর্ঘদিন সেই পত্রিকায় কাজ করি। তৎকালীন সময়ে ভোলার সাপ্তাহিক লালসূর্য পত্রিকার সম্পাদক মোতাসিম বিল্লাহ ও বাংলার কন্ঠ পত্রিকার বার্তা সম্পাদক মোকাম্মেল হক মিলন ভাইয়ের সাথে পরিচয় হওয়ার সুবাদে কিছুদিন তাদের পত্রিকায়ও কাজ করি। একদিন বন্ধু মোঃ জসিম জনি ঢাকা থেকে প্রকাশিত জাতীয় দৈনিক ডেসটিনিতে কাজ করার জন্য পরামর্শ দিল। সে তখন এই পত্রিকায় লালমোহন থেকে কাজ করতো। আমার লেখালেখির আগ্রহ দেখে নিজের পত্রিকা আমাকে কাজ করার জন্য ছেড়ে দিলো। চরফ্যাসনের সিনিয়র সাংবাদিক অ্যাডভোকেট নোমান সালমানও সহযোগীতা করেছিল। পরে জনি দৈনিক যুগান্তরে কাজ করা শুরু করলো। ডেসটিনির সম্পাদক রফিকুল আমীন আটক হওয়ার পর দৈনিক ডেসটিনি প্রকাশনা অনিয়মিত হয়ে পরলে আমি ঢাকার সিনিয়র সাংবাদিক আবু জাফর সূর্য ভাইয়ের জাতীয় দৈনিক সংবাদ প্রতিদিনে কাজ করি। করোনা মহামারীতে অর্থনৈতিক সমস্যায় পত্রিকা প্রকাশনা অনিয়মিত হয়ে পড়লে জাতীয় দৈনিক গণকন্ঠে কিছুদিন কাজ করে বর্তমানে দৈনিক জবাবদিহি পত্রিকায় ভোলা জেলা প্রতিনিধি হিসাবে কাজ করছি। তবে মিডিয়াতে কাজ করতে গিয়ে লালমোহনের এমভি নাসরিন ও কোকো-৪ লঞ্চ দুর্ঘটনার নিউজ ও সংসদ নির্বাচনের (উপ-নির্বাচন) নিউজ কভার করায় দৈনিক ডোসটিনি পত্রিকা আমাকে বেশ পরিচিতি এনে দিয়েছিল। অনলাইন নিউজ পোর্টালের আবির্ভাবে পাঠক এখন আরো আধুনিক ও ডিজিটাল হয়ে ঘরে বসেই সব খবর দেখতে ও পড়তে পারছে। প্রিন্ট থেকে এখন অনলাইন নিউজ পাঠক ও সংবাদকর্মী বেড়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। সেই স্রোতে পা দিয়ে লালমোহন নিউজ২৪, দ্বীপকন্ঠ নিউজ২৪, ভোলাবানী২৪, বাংলার চোখ প্রতিদিন২৪, বরিশাল খবর২৪, অস্ট্রীয়ার আন্তর্জাতিক অনলাইন নিউজ ইউরো সমাচার২৪, গ্রীসের বিডিনিউজ ইউরো২৪ পত্রিকায় বিশেষ প্রতিনিধি হিসাবে দ্বায়িত্ব পালন করছি। এভাবেই চলছে আমার সাংবাদিকতা । মিডিয়া জীবনের ১৬-১৭ বছর অতিবাহিত হতে চলেছে কিন্তু এখনো তৃষ্ণা নিবারণ হয়নি। এগিয়ে যেতে চাই আরো বহুদূর। সেজন্য সকলের দোয়া, ভালোবাসা আর সহযোগীতা কামনা করি।
সাব্বির আলম বাবু
সংবাদকর্মি, লালমোহন, ভোলা।
সুঁইয়ের ফোঁড়ে নারীর স্বপ্ন…
সাব্বির আলম বাবু
বাংলাদেশের আনাচে কানাচে নারীরা এখন আর পিছিয়ে নেই। তারা পুরুষদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে স্বাবলম্বী হতে শিখেছেন। তারা এখন আর অবলা নয়। ঘর সংসারের গন্ডি পেরিয়ে তারা এখন নিজস্ব কর্ম সংস্থানের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি তথা নিজের অধিকার অর্জন করে নিজের পায়ে দাড়াতে শিখেছে। নারীর পায়ের শিকল আর পরাধীনতার নাগপাশ এখন কেবল অতীত।
নারীদের কর্মক্ষেত্রের অন্যতম অবলম্বন নকসীকাঁথা। তরুনী, অর্ধ শিক্ষিত, স্বামী পরিত্যাক্তা ও প্রতিবন্ধি নারীরা এই পেশার সাথে বেশী জড়িত হচ্ছেন। দারিদ্রতার কারনে বেশীদূর এগোয়নি তাদের শিক্ষার গন্ডি। অনেকটা পরিবারের বোঝা হয়েই দিন কাটছিল তাদের। কিন্তু সুঁইয়ের ফোঁড়ের কল্যাণে পাল্টে গেছে তাদের জীবনের রং। এখন আর বোঝা নয় বরং নিজে স্বাবলম্বী হয়ে পরিবারকে সহযোগীতা করে কাটছে তাদের বর্তমান সময় ও জীবন। এমন পরির্বতনে ভাগ্য বদলে দিয়েছে সুই আর সুতার যাদুকরী মিলনে তৈরী হওয়া বাহারী নকশীকাঁথা।
কোমল হাতের ছোঁয়ায় আর মননের মিশেলে গ্রামীণ পটভূমির নারীরা নকশিকাঁথায় ফুটিয়ে তোলেন মনের গহীনে লুকিয়ে থাকা অব্যক্ত প্রেম ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ ফুল, পাখিসহ নানা আল্পনার তৈরির মাধ্যমে। ভোলার লালমোহনের শারীরিক প্রতিবন্ধি জেসমিন বেগম এ ধরনের স্বাবলম্বীতার বাস্তব দৃষ্টান্ত। তিনি বলেন, আল্লাহ অসুখ দিয়েছেন, কিন্তু তাই বলে আমি পরিবারের ও সমাজের জন্য বোঝা হয়ে থাকতে চাই না। আমি কাজ করে, পরিশ্রম করে বেঁচে থাকতে চাই এই সুন্দর পৃথিবীতে। আর তাই মায়ের কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে এখন নকশীকাঁথা আর শাড়ীতে আল্পনা সেলাই করছি। মোটামুটি ভালোই অর্ডার পাচ্ছি।
সরেজমিনে দেখা যায়, খুব মনযোগ সহকারে বিভিন্ন বয়সের নারীরা সুঁই আর সুতার কাজ করছেন। সুতা আর সুঁইয়ের কারুকার্যময় কাপড় বুননের নানা উপকরণ নিয়ে চলছে তাদের কর্মব্যস্ততা। যেন সুঁইয়ের ফোঁড়ে ফোঁড়ে এক একজন নারী তার নিজের ও পরিবারের স্বপ্ন বুনন করে চলছেন। রাবেয়া, রোজিনা, সালমাসহ একাধিক দরিদ্র কিশোরী জানায়, আগে ঘরে বসে অলস সময় কাটাতাম কিন্তু এখন ঘরে বসে টাকা আয় করছি এবং পরিবারের দারিদ্রতা ঘোচানোর চেষ্ট করছি।
কোন সরকারি বা বেসরকারি সংস্থা অথবা বিসিক যদি এই রকম সেলাইয়ের কাজ, এমব্রোয়ডারির কাজের ব্যাপারে আমাদের প্রশিক্ষণ ও ঋণের ব্যবস্থার পাশাপাশি বাজারজাত করনের কৌশল শেখাতো তাহলে নারীরা বেকার না থেকে এই কুটির শিল্পের পেশার সাথে জড়িত হয়ে দেশের অর্থনীতি ও নিজের ভাগ্য উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারতো। কিন্তু হতাশার বিষয় হচ্ছে গ্রামীণ এই বিশাল নারী গোষ্ঠীকে উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ মানব সম্পদে রূপান্তরিত করতে পর্যাপ্ত কোন ব্যবস্থা নেই।
সাব্বির আলম বাবু
লালমোহন, ভোলা
০১৭১৬২৯৪৪১০
পালকির সেকাল-একাল
সাব্বির আলম বাবু
‘হুহুমনা-হুহুমনা পালকি চলে, হুহুমনা-হুহমনা দোলকি চালে’
বেহাদের এমন সুরে গ্রামের মেঠোপথ এক সময় মুখোরিত হতো। কিন্তু সেগুলো এখন ইতিহাসের সাক্ষী। বিশ্ব সভ্যতা আজ প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় অনেকদুর এগিয়ে গেছে। অপরদিকে এই প্রযুক্তির দ্রুত বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে এক সময়ের অনেক ঐতিহ্যবাহী পণ্য-সামগ্রী-বাহন ইত্যাদি আজ বিলুপ্তির দ্বার প্রান্তে। এর মধ্যে পালকি অন্যতম। এই ঐতিহ্যবাহী ও বাংলা সংস্কৃতি,কৃষ্টির প্রতীক আজ বিলুপ্ত প্রায়। অথচ মাত্র অর্ধশতাব্দি কাল আগেও এ বাহন সামাজিক ও পারিবারিক মর্যাদার প্রতীক হিসাবে ব্যবহার হতো। পালকি আবিষ্কারকের নাম এবং কত বছরের সনাতনি তা নিরূপন করা যায়নি আজো।
বৃটিশ জমিদারি আমলে এর প্রচলন ছিল ব্যাপক। তখন সমাজের শ্রেণীভেদে আট বেহারা এবং ষোল বেহারার পালকি ব্যবহার হতো। বেহারাদের আলাদা একটি সম্প্রদায়ও তখন জন্ম হয়েছিল। জমিদাররা ব্যবহার করতেন ষোল বেহারার পালকি আর তার অধীন সেরেস্তাদার বা অন্যরা ব্যবহার করতেন আট বেহারার পালকি। পাশাপাশি পর্যায়ক্রমে চার বেহারার পালকি তখন প্রচলন হয়েছিল সম্ভ্রান্ত পরিবারের বিয়ে-শাদিতে। যা পাকিস্তান আমলেও প্রচলিত ছিল। গামে গঞ্জে মেঠোপথে বেহারাদের সুরেলা আওয়াজে উৎসুক শিশু-কিশোর-আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা উঁকিঝুঁকি দিত বর-কনেকে এক নজর দেখার জন্য। নতুন জীবন শুরুর প্রত্যয়ে বর-কনে দুজন পালকির মধ্যে মুখোমুখি বসতেন। যদিও এই ছোট্ট একটি কাঠের বাক্সের মাঝে বসে থাকা ছিল দুঃসহ কষ্টকর তবুও নব আনন্দে দুজনই ভূলে যেতেন সবকিছু।
এক সময়ের সম্ভ্রান্ত পরিবারের ঐতিহ্যের প্রতীক এই পালকির জায়গা বর্তমানে দখল করেছে ট্যাক্সিও মাইক্রোবাস। ইদানিং আকাশ যানেও বিয়ের ঘটনা ঘটছে কোথাও কোথাও। প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে হারিয়ে যাচ্ছে পালকি। সেই সাথে বেহারা সম্প্রদায়ও। কিন্তু এসবই আমাদের কৃস্টি, সংস্কৃতি আর গ্রামীণ জনপদের গৌরবময় ঔতিহ্যের ধারক। কালের পরিক্রমায় এসব আজ স্থান পেতে যাচ্ছে জাদুঘরে। হয়তো বাংলার আগামী প্রজন্মকে এগুলো সম্পর্কে চেনাতে শুধু বইয়ের আশ্রয় নিতে হবে। বাস্তবে দেখানো যাবে না।
সাব্বির আলম বাবু
লালমোহন, ভোলা
০১৭১৬২৯৪৪১০