পালকির সেকাল-একাল

সাব্বির আলম বাবু

‘হুহুমনা-হুহুমনা পালকি চলে, হুহুমনা-হুহমনা দোলকি চালে’
বেহাদের এমন সুরে গ্রামের মেঠোপথ এক সময় মুখোরিত হতো। কিন্তু সেগুলো এখন ইতিহাসের সাক্ষী। বিশ্ব সভ্যতা আজ প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় অনেকদুর এগিয়ে গেছে। অপরদিকে এই প্রযুক্তির দ্রুত বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে এক সময়ের অনেক ঐতিহ্যবাহী পণ্য-সামগ্রী-বাহন ইত্যাদি আজ বিলুপ্তির দ্বার প্রান্তে। এর মধ্যে পালকি অন্যতম। এই ঐতিহ্যবাহী ও বাংলা সংস্কৃতি,কৃষ্টির প্রতীক আজ বিলুপ্ত প্রায়। অথচ মাত্র অর্ধশতাব্দি কাল আগেও এ বাহন সামাজিক ও পারিবারিক মর্যাদার প্রতীক হিসাবে ব্যবহার হতো। পালকি আবিষ্কারকের নাম এবং কত বছরের সনাতনি তা নিরূপন করা যায়নি আজো।
বৃটিশ জমিদারি আমলে এর প্রচলন ছিল ব্যাপক। তখন সমাজের শ্রেণীভেদে আট বেহারা এবং ষোল বেহারার পালকি ব্যবহার হতো। বেহারাদের আলাদা একটি সম্প্রদায়ও তখন জন্ম হয়েছিল। জমিদাররা ব্যবহার করতেন ষোল বেহারার পালকি আর তার অধীন সেরেস্তাদার বা অন্যরা ব্যবহার করতেন আট বেহারার পালকি। পাশাপাশি পর্যায়ক্রমে চার বেহারার পালকি তখন প্রচলন হয়েছিল সম্ভ্রান্ত পরিবারের বিয়ে-শাদিতে। যা পাকিস্তান আমলেও প্রচলিত ছিল। গামে গঞ্জে মেঠোপথে বেহারাদের সুরেলা আওয়াজে উৎসুক শিশু-কিশোর-আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা উঁকিঝুঁকি দিত বর-কনেকে এক নজর দেখার জন্য। নতুন জীবন শুরুর প্রত্যয়ে বর-কনে দুজন পালকির মধ্যে মুখোমুখি বসতেন। যদিও এই ছোট্ট একটি কাঠের বাক্সের মাঝে বসে থাকা ছিল দুঃসহ কষ্টকর তবুও নব আনন্দে দুজনই ভূলে যেতেন সবকিছু।
এক সময়ের সম্ভ্রান্ত পরিবারের ঐতিহ্যের প্রতীক এই পালকির জায়গা বর্তমানে দখল করেছে ট্যাক্সিও মাইক্রোবাস। ইদানিং আকাশ যানেও বিয়ের ঘটনা ঘটছে কোথাও কোথাও। প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে হারিয়ে যাচ্ছে পালকি। সেই সাথে বেহারা সম্প্রদায়ও। কিন্তু এসবই আমাদের কৃস্টি, সংস্কৃতি আর গ্রামীণ জনপদের গৌরবময় ঔতিহ্যের ধারক। কালের পরিক্রমায় এসব আজ স্থান পেতে যাচ্ছে জাদুঘরে। হয়তো বাংলার আগামী প্রজন্মকে এগুলো সম্পর্কে চেনাতে শুধু বইয়ের আশ্রয় নিতে হবে। বাস্তবে দেখানো যাবে না।

সাব্বির আলম বাবু
লালমোহন, ভোলা
০১৭১৬২৯৪৪১০

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *