হালিমা আজাদ ||
আসলে লেখালেখির জগতে অনাখাঙ্কিত কারণবশত খানিকটা অনভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। কিন্তু সময় থেমে নেই। সে চলছে তার নিয়ম গতিতেই। জীবনের গৎবাঁধা তত্ত্বের ভীড়ে হঠাৎ একদিন আযাদ আলাউদ্দীন ভাইয়ের মেসেজ,’আপু আপনার ঠিকানাটা পেলে ‘….,
খাম খুলতেই মুক্তবুলির কয়েকটি সংখ্যা পর পর বেরিয়ে এলো। ম্যাগাজিনটি দেখে এবং হাতে নিয়ে আমার অনুভবে দেখে নিলাম তার মান বাঁধায় লেখা এক কথায় অসাধারণ। সম্পাদক ভাইয়ের সুন্দর অনবদ্য উপস্থাপনায় বিমুগ্ধ না হয়ে পারলাম না! লেখা পড়ি আমি আরো অভিভূত।
কারণ মুক্ত বলি ম্যাগাজিনে এ সংখাতে প্রথম থিমটা ছিল হারিয়ে যাওয়া বিলুপ্তপ্রায় আগের দিনের চিঠিপত্র নিয়ে। চিঠি শব্দটা মানেই মধুর স্মৃতি বিষণ্নতা উৎফুল্ল উচ্ছ্বাসের প্রকাশ। এক্সক্লুসিভ জীবনের সুখ বেদনার উপখ্যান। আগেকার দিনে আমরা দিনের পর দিন এই চিঠির জন্য অপেক্ষা করতাম। এখনকার সময়ের ডিজিটাল মোবাইল মেসেজ কিছুই ছিল না। বইয়ের ভিতর সব লেখা পড়ে আমি নস্টালজিক হয়ে যাই। ফিরে যাই সেই অতীতে।
মনে পড়ে গেলো নিজের সাথে ঘটা বিদুরচারণ। নিজের সাথেই ঘটা সেই চিঠির অপরাধের কথা। কৈশোরি বয়সে কলেজ ঘাঁটে পা দিতেই সাগর নামের ছেলের এক চিঠি। আমার হিন্দু সম্প্রদায়ের এক বান্ধবীর হাতে দেওয়া হয়েছিল আমার কাছে পৌঁছে দিতে আমার সেদিন কলেজে যাওয়া হয়নি। বান্ধবীটির নাম ছিল রিমা। যা হোক চিঠি কিন্তু পড়ল মায়ের হাতে। এ সম্পর্কে আমি কিছুই জানতাম না। সত্য কথা কি তখন আমি তেমন কিছুই বুঝতাম না।
আমার আম্মাজান ছোট থাকতেই আমি সবকিছু মুখস্থ করে ফেলেছিলাম তাই শিশুশ্রেণী না পড়িয়ে বয়স বাড়িয়ে একেবারে ক্লাস টুতে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলেন। ফিরে আসি চিঠির কথায়। দুইদিন পর আম্মুর ডাক , তোমাকে চিঠি দেয়ার সাহস কোথায় পেলো ছেলেটা? তোমাকে বিয়ে দিয়ে দিব ইত্যাদি ইত্যাদি কথা শোনালো। আমিতো অবাক! কিছুই জানিনা। পরে আম্মু চিঠি বের করে আমাকে দেখান। আমার আর বুঝতে বাকি রইল না আমার উপরে কেন ক্ষেপলেন আম্মু।
কিছুদিন পর সত্যি সত্যিই আমাকে বিয়ে দিয়ে দিলেন। খানিকটা তাড়াহুড়ো করে কারণ মেয়ে বড় হচ্ছে আজ একজন চিঠি দিয়েছে অন্য দিন হয়তো বা কেউ ডিস্টার্ব করবে। আসলে এখনকার দিন আর তখনকার দিন অনেক তফাৎ এখন মেসেঞ্জারে হোয়াটসঅ্যাপে নানা প্রযুক্তিতে মানুষ অনেক এগিয়ে একে অপরের সাথে কথা বলছে ছবি, ইত্যাদি চলে নির্দ্বিধায়। আর তখন মায়েরা একটা চিঠিতেই ভয় পেয়ে যেত,সম্মান এর ভয় পেত আর এখন সবকিছু সহজ হয়ে গিয়েছে। আর আমরা মেনে নিতে আর মানিয়ে নিতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি অনেক কিছুই।
চিঠি নিয়ে নিজের স্মৃতিচারণ করে ফেললাম। আসলে চিঠি মানে স্মৃতিকাতরতা! জীবনে সবারই কমবেশি আছে। কিন্তু এটা একদম হারিয়ে যাচ্ছে এমনকি আমরা হাতে লিখতেও অন অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি এখন।তাই আমাদের মাঝে মাঝে এই চিঠি লেখার অভ্যাস থাকা উচিত। নিয়ম করে না হোক তবুও লেখা দরকার। এখন আমার উনি যদি এই কালেও একখানা চিঠি দিতো।
ইতি তোমার প্রিয়তম।
শুধু এতটুকুন কথা দিয়ে তবে মন্দ হতো না। লেখাটি তার দৃষ্টিগোচর হবে ইনশাল্লাহ।
পরিশেষে মুক্তাবুলি ম্যাগাজিনের উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করছি। তার লেখা পড়ে ফিরে গেলাম দেড়যুগ আগে। রোমান্থোন করলাম অতীত! পরিশেষে বলবো মুক্তবুলি ম্যাগাজিন এগিয়ে যাক তার লক্ষ্যপানে দৃঢ়তার প্রত্যয় নিয়ে, শুভকামনা অবিরত অবিরাম অহনির্শ।
হালিমা আজাদ
যশোর সদর
Muktobuli | মুক্তবুলি Muktobuli is the most popular online blog to publish the rare news.
