আযাদ আলাউদ্দীন ।।
জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পদক ২০২২ এ বরিশাল বিভাগে শ্রেষ্ঠত্বের পর- এবার জাতীয় পর্যায়ে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করলেন মুক্তবুলি ম্যাগাজিনের লেখক লায়লা জেরীনা আকতার। বরিশাল সদর উপজেলায় সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার পদে কর্মরত রয়েছেন তিনি।
প্রাথমিক শিক্ষা পরিবারে তিনি দক্ষতা ও যোগ্যতার সাথে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ, মননশীলতা ও সৃজনশীলতা এবং ব্যক্তি চরিত্রের বলিষ্ঠতার কারণে তার এই শ্রেষ্ঠত্বের পদক অর্জন সম্ভব হয়েছে।
লায়রা জেরীনা আকতার (ডাকনাম মুন্না)। ১৯৭১ সালের ১ এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন। দশ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি অষ্টম, তার দশ ভাই-বোন সবাই শিক্ষিত। ছয় বোনের মধ্যে বড় বোন ঢাকা শিক্ষাবোর্ড ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজে-এ শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত ছিলেন, বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত। মেঝো বোন সরকারি ব্রজমোহন কলেজ-এ অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ছিলেন, বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত। সেঝো বোন শহীদ জিয়া কলেজের অধ্যাপক। চতুর্থ বোন ঢাকা শিক্ষাবোর্ড ল্যবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যাপক। ৫ম বোন তিনি নিজে সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার এবং ৬ষ্ঠ বোন উত্তর কাউনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক।
চার ভাইয়ের মধ্যে বড় ভাই সোনালী ব্যাংক-এর কর্মকর্তা ছিলেন, বর্তমানে অবসর প্রাপ্ত। মেঝো ভাই ও ছোট ভাই ব্যবসা করেন এবং সেঝ ভাই কোরআনে হাফেজ। লায়লা জেরীনের বাবা ছিলেন একজন গেজেটেড ‘কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা’। তার মা গৃহীনি থাকলেও তাদের দশ ভাইবোনের শিক্ষিত হওয়ার পিছনে তাঁর মায়ের ভূমিকা অতুলনীয়।
লায়লা জেরীনা আকতার ১৯৮৬ সালে বিজ্ঞান থেকে প্রথম বিভাগে এসএসসি, ১৯৮৮ সালে একই বিভাগ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। এরপর সরকারি ব্রজমোহন কলেজের ম্যানেজমেন্ট বিভাগ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি অত্যন্ত সফলতার সাথে অর্জন করেন। তিনি মাস্টার্সে ডিপার্টমেন্টের সবার মধ্যে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছিলেন। এছাড়াও তিনি বিএড এবং এমএড সম্পন্ন করেছেন।
২০০০ সালে তিনি ‘সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার’ পদে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে যোগদান করেন। পড়াশুনা চলাকালীন তিনি কবিতা গল্প লিখতেন। এখনো তিনি লেখনি চালিয়ে যাচ্ছেন। তার প্রকাশিত তিনটি কবিতার বই রয়েছে। এছাড়াও প্রাথমিক শিক্ষার শিশুদের জন্য ‘যুক্ত বর্ণের সমাহার’ নামে একটি বই লিখেছেন লায়লা জেরীনা আকতার।
লায়লা জেরীনা আকতারের স্বামী এটিএম মজিবুল হক বরিশাল সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ছিলেন। বর্তমানে এইচ.এস.টি.টি.আই-এর উপপরিচালক। তার এক মেয়ে বরিশাল সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেছে এবং ছেলে জাহানারা ইসরাইল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ( ইংলিশ ভার্সন) ক্লাস সিক্সে অধ্যয়নরত।
তিনি ২০১৯ সালেও বরিশার জেলায় ‘শ্রেষ্ঠ সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার’ -এর পদক অর্জন করেছিলেন। বর্তমানে বরিশাল সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ক্লাস্টারের সকল বিদ্যালয় সুন্দর করে সাজিয়ে শিশু বান্ধব পরিবেশ তৈরি করেছেন। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন বিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্ণার, শেখ রাসেল কর্ণার, সততা স্টোর্স, মানবতার দেয়াল তার আওতাধীন প্রায় সকল স্কুলেই চলমান রয়েছে।
কাজ পাগল এই কর্ম কর্ততার সকল বিদ্যালয়ের শিশুদের ১০০% রিডিং অ্যান্ড রাইটিং স্কীল উন্নয়নের জন্য শ্রেণিকক্ষে শিশুদের প্রকটিক্যাল রিডিং পড়াচ্ছেন। যারা দূর্বল শিশু তাদের জন্য লিখেছেন ‘যুক্ত বর্ণের সমাহার’। কারণ বেশির ভাগ শিশু দেখা গেছে রিডিং পড়তে পারলেও যুক্তবর্ণ পড়তে পারছে না। তাই তাদের আলাদা বসিয়ে যুক্তবর্ণের সমাহার থেকে যুক্তবর্ণ শিখিয়ে পড়িয়ে রিডিং দক্ষতা অর্জন করাচ্ছেন।
তার নিরন্তর এই প্রচেষ্টা সফল হোক।
2 comments on “জাতীয় পর্যায়ে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করলেন লায়লা জেরিনা আকতার”
অভিনন্দন
আমার সহধর্মিণী লায়লা জেরীনা আকতার একজন প্রচার বিমুখ লোক।যখন তাঁর বিভাগীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ হওয়ার খবরটি জানতে পারি, আমি আমার ফেসবুক আইডিতে দিতে চাইলে তিনি আপত্তি করেন। মুক্তবুলি সম্পাদক আযাদ আলাউদ্দীন ভাইয়ের মাধ্যমে আমার ইচ্ছাটি তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশের জন্য ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।