সুুুুয়েজ করিম
আলিফ লায়লা, আলিফ লায়লা
আলিফ লায়য়য়য়লা….
দেখো সব নতুন কাহিনী,
মন ভরে দেখার বাণী,
কত যুগ পেরিয়ে গেছে,
নতুন তবু রয়ে গেছে।
মনের মাঝে আজো বেজে উঠে ছোটবেলায় বিটিভির পর্দায় শুরু হওয়া আলিফ লায়লার সেই জিঙ্গেলটা। যারা অন্তত একবার একটি পর্ব হলেও দেখেছেন নিশ্চয় বুঝতে পারছেন কত আকর্ষণ ছিল এই টিভি সিরিয়ালটির।এখনো হয়ত আপনার মনের পর্দায় ভেসে উঠছে কোন একটি বিশেষ পর্ব।
আরব্য রজনীর কল্পিত বিখ্যাত গল্প। সম্রাট শাহরিয়ার কে তাঁর স্ত্রী শেহেরযাদ বাসর ঘরে কাহিনী গুলো ধারাবাহিকভাবে শোনাতে থাকে।গল্পে মজে গিয়ে সম্রাট তাঁকে হত্যার কথা ভুলে যায় এবং হাজারো রজনী এভাবে গল্প শুনে পার করে দেয়।
তখন আমাদের চিত্ত বিনোদনের জন্য এন্ড্রয়েড মোবাইল, ফেইসবুক, ইউটিউব এসব ছিল না। এটাই ছিল তখনকার অন্যতম বিনোদন।
দিন গুণতে থাকতাম কখন শুক্রবার আসবে। রাত ৮.৩০ মিনিট হবে। আমরা যারা গ্রামে বাস করতাম কিছু গ্রামে বিদ্যুৎ ছিল, তবে বেশিরভাগ গ্রামেই ছিল না। টিভি ও ছিল হাতেগোনা কয়েকটি বাড়িতে। যেসব বাড়িতে বিদ্যুৎ ছিল মজার বিষয় হল আলিফ লায়লা শুরু হওয়ার আগে প্যাভিলিয়নে চলে যেত।তারপর সকলে ২ টাকা ৫ টাকা চাঁদা তুলে ম্যানুয়াল ব্যাটারি ভাড়া করে সেই ব্যাটারি মাথায় তুলে বাজার থেকে নিয়ে আসতাম। টিভি ছিল সাদাকালো। ডিস লাইন ছিল না। বাহিরে লম্বা বাঁশের উপরে থাকত এন্টেনা। প্রায়ই ঝির ঝির করত।সিরিয়াল শুরুর আগে একজন বাহিরে গিয়ে বাঁশ মোড়াইত আর বলত ঠিক আছে? জানালা দিয়ে উত্তর আসত- না, আরো খারাপ, এইবার? হয় হয় রাখ, আরে আবার গেছে, আরো মোড়া, এখন ঠিক হইছে, চলে আয়। মোটামুটি একটা পর্যায়ে এনে টিভির সামনে হোগলা বিছিয়ে বসে পড়ত সবাই। সিরিয়ালের সময় ছিল ৩০ মিনিট। এর মধ্যে ১৫ মিনিট এড চলত তিন পর্বে। বিপুল উৎসাহ আর মনযোগ দিয়ে চোখ আটকে রাখতাম টিভি পর্দায়। পলক ফেলার জো নাই একমাত্র এড ছাড়া। মাঝে মধ্যে বিদ্যুৎ থাকা অবস্থায় সিরিয়াল দেখতেছি, দেখা গেল শুরুর ৫ বা ১০ মিনিটের সময় বিদ্যুৎ উধাও। তখন কি যে লাগত ওহ! সিট। যে যার মত করে মাতৃভাষায় গালাগাল। বাচ্চারা মুরব্বি ও মানত না এত আবেগি।
যখন সিরিয়াল দেখতাম তখন নিজেকে নায়ক সিন্দাবাদ ভাবতাম। এখনো চোখে ভাসে একহাত নেই, এক চোখ কানা জলদস্যু কেহেরমান হু হু হা হা করে ভয়ংকর হাসি দিয়ে মাথার কিছু অংশ চুল টেনে ছিঁড়ে ফুঁৎকার দিতে। নায়ক সিন্দাবাদ তার সোলেমানী তলোয়ার খাপ থেকে বের করে বলছে ইয়া আল্লাহ্ সাহায্য কর । শিং ওয়ালা বিশালদেহী দৈত্য হু হা হা করে সিন্দাবাদের গতিরোধ করছে। সমুদ্রের মাঝে প্রকাণ্ড তিমি মাছ কে দ্বীপ মনে করে জাহাজ নোঙ্গর করার দৃশ্য। মালিকা হামিরা মানুষরূপী রাক্ষসী তাঁর মানুষের রক্ত পান করা এবং বিচ্ছু সদৃশ আকরাম কে দিয়ে শয়তানি যাদু প্রয়োগ। তখন সবার মুখে মুখে থাকত এসব কাহিনী। স্কুলের খাতার কভারে থাকত আলিফ লায়লার ছবি। দোকানে গিয়ে বলতাম আলিফ লায়লা খাতা দেন তা না হলে কিনতামই না। বিচ্ছু সদৃশ আকরাম ও বাজারে বের হয়েছিল তখন। এগুলো যার কাছে থাকত সে সবার কাছে এক বিশেষ মর্যাদাবান ছিল। সেই সোনালী অতীত মনকে নাড়া দিয়ে যায়। আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায়।