মুক্তা অভিমুক্তি
.
জানো পার্থ,
আমার রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে।
না না ভয় পেওনা, ভয়ের কিছু নেই,
যেই রিপোর্ট পজিটিভ আসলে
সবাই খুশি হয়, তুমিও খুশি হবে–
আমার সেই রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে।
তুমি খুশি হওনি?
বিয়ের ছয় বছর পর
আজ আমার রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে।
জানো ওরা আমায় তাড়িয়ে দিয়েছে,
নেয়নি ঘরে।
একদিন তাড়িয়েছিলো ‘বাজা’ বলে,
আর আজ তাড়িয়েছে ‘রাক্ষসী’ বলে।
যেদিন বাজা বলে
মারধর করে তাড়িয়ে দিলো,
সেদিন হাতড়ে হাতড়ে গিয়ে
উঠেছিলুম তোমার কাছে।
তুমি ঢাকাতে নামকরা এক ইউনিভার্সিটির
চেয়ারম্যান ম্যাডামের গাড়ি চালাতে,
পরে আমিও ঝি চাকরানির
কাজ নেই লোকের বাসাতে।
জানতাম কি কোনোদিন?
এত সুখ সইবেনা কপালে!
দুজনেই চাকরিটা হারালাম,
দেশে করোনা আসাতে।
চলতি মাসের বেতনটাও দেয়নি হাতে।
একদিন শুনতে পেলাম,
এক হাসপাতালের এম্বুলেন্স ড্রাইভার
পালিয়েছে করোনা রোগীর ভয়ে।
যোগাযোগ করে তুমি
সেই চাকরিটা-ই পেয়ে গেলে।
মনে করলে স্বয়ং ভগবান-ই বুঝি এসে
দাঁড়িয়েছে সামনে।
কে জানতো বিধাতা তোমায়
এতো বাসতো ভালো!
ক’দিনের মাথায় তোমায় নিয়ে গেলো সেই
কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের বেডে।
সাদা কাপড়ে পেঁচিয়ে পুলিশ
বিদায় জানালেন চিরতরে!
শেষ দেখার সৌভাগ্যটুকু হয়নি, তাতে কি?
চোখের জল আমার শুকিয়ে।
নাই পেটে ভাত, মাথার ওপরে ছাদ,
বস্তির মালিক দিয়েছে তাড়িয়ে!
লকডাউনে গাড়ি-ঘোড়া বন্ধ,
শেষ সম্বলটুকু দিয়ে
মাছের ট্রাকে কোনোমতে,
হাতড়ে হাতড়ে গিয়ে–
আবার উঠলাম তোমার বাড়িতে।
আজও ওরা আমায় তাড়িয়ে দিয়েছে।
বলে “রাক্ষসী মাগী,
আবার আমাগোরেও খাবি?
ভাতার খাইছোস, সাধ মেটেনি তাতে?”
এখন আমি আশ্রয় নিয়েছি
ঝাউপাড়ার পতিতা পল্লীর সর্দারনীর কাছে।
যাদের জাতকে একদিন
ধিক্কার দিতাম চরিত্রহীনা বলে,
আজ তাদের ঘরেই আমার আশ্রয় মিলেছে!
কেউ জানেনা—
আমার রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে!
এই সমাজ কি আমাদের সন্তানকে,
জারজ বলে ধিক্কার দিবে?
আমার রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে!
Real story of Bangladesh.