বেগম ফয়জুন নাহার শেলী ।।
আমি সেই নারী
যার সমস্ত বুক জুড়ে
মাতৃত্বের হাহাকার
কিন্তু এই আমিই আমার কন্যাশিশুকে
ভ্রূণেই নষ্ট করি প্রতিনিয়ত
না, আমি কন্যার মা হতে চাইনা
নয় কোন প্রজন্ম রক্ষার কারণে
না কোন লজ্জা বোধ থেকে।
পারস্যের এক মহিলা কবি
বলেছিলেন, তার জন্মবারতার
‘ধাইমা কেঁপে উঠেছিল
স্বর্ণমূদ্রার এনাম হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায়
আর সম্ভাব্য খৎনা উৎসবের মিষ্টান্ন প্রাপ্তির অপমৃত্যুতে।’
ব্রীড়াবনত হয়েছিল তার মায়ের কুণ্ঠিত দৃষ্টি।
আমার মেয়ের জন্মবারতায়
লজ্জায় হতাশায় কুণ্ঠিত হবনা আমি
ভরে দিতে চাই ধাইমার হাত
স্বর্ণমূদ্রা আর মিষ্টান্নে
কিন্তু
পারিনা আমি পারিনা
ভয়ে শিউরে উঠি
একটি মানুষকে ‘মেয়েমানুষ’ তৈরির আতঙ্কে
শঙ্কিত হই
প্রতিক্ষণে ধর্ষিতা লাঞ্ছিতা হবার ভয়ে
আৎকে উঠি
মানবিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করার আশঙ্কায়
ব্রীড়াবনত হই
‘মেয়েমানুষ’ বলে অবহেলার পুতুল করার লজ্জায়
আমি সেই মা
শিক্ষার আলো দিয়ে
কন্যা সন্তানের ডানা তৈরি করি
আহা, বাছা আমার
নিশ্চিন্তে নির্ভয়ে মনের সুখে
সংসার অভয়ারণ্যে উড়ে বেড়াবে
কিন্তু সমাজের কাঁচি দিয়ে
আমারই হাতে কাটি
সযত্নে গড়ে তোলা সেই সুন্দর ডানাদুটো
অবশেষে
উড়ে বেড়াবার ব্যাকুলতা নিয়ে
মুখ থুবড়ে পড়ে থাকে সে গৃহকোণে
নিজের দুঃখ-বেদনা হাসি-কান্না
বন্দী রাখে অব্যক্তের খাঁচায়।
ব্যাক্তিত্ব নিয়ে পথ চললে
হবে ভ্রষ্টা
স্বাধীন হতে চাইলে – উশৃঙ্খল
পরের জমিতে ফসল ফলাবে
অথচ নিজেকে নিজেই পয়সায় বিকোয়
হতে হয় যৌতুকের বলি
কী লজ্জা!
কী অপমান!
মাতৃত্বের অসীম হাহাকার বুকে নিয়েও
ভ্রূণেই নষ্ট করি আমি আমারই আত্মজাকে
আমাকেই আমি হত্যা করি
বারবার পুনবার।
হে পৃথিবী
আমার কন্যাসন্তানটির নিরাপত্তা দাও
দাও আমাকে সেই দুনিয়া
যেখানে আমার কন্যাটি ঝলসে যাবেনা
ধর্ষিতা হবে না–ঝরে যাবেনা অকালে
করতে হবে না মানববন্ধন
ধরতে হবে না আইনের রশি
আমি মা হতে চাই
মা হতে চাই
মা হতে চাই
একটি কন্যাশিশুর মা।
শুভ কামনা আপনার জন্য।