রিয়াজুল ইসলাম রিয়াজ
জুয়া অন্যান্য নেশাকর অসামাজিক অনাচার ও অপরাধের মধ্য অন্যতম। জুয়াড়ী ব্যক্তি অন্যান্য নেশাকর কর্মকান্ডের মতই সমাজ জীবনে অশান্তি ও নিরাপত্তাহীনতায় পশু-জীবন হতেও অধঃপতনের নীচে নেমে যায়। ফলে সমাজে পারস্পরিক কলহ-বিবাদ, মারামারি এমনকি হত্যা পর্যন্ত সংঘটিত হয়ে থাকে। জুয়া খেলা এক প্রকার সামাজিক মারাত্মক অপরাধ। ইহা ব্যক্তি চরিত্র হতে সমাজ চরিত্রকেও কলুষিত করে। পৃথিবীর কোন ধর্মই জুয়াকে সমর্থন করে না। আর ইসলামের দৃষ্টিতে জুয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং হারাম।
জুয়া বর্তমান যুগেরই অপরাধ নয়। বরং এটি আরবের তৎকালিন যুগ থেকেই যাত্রা সূরু করে এবং এটি তাদের ঘোরতর আসক্তিতে (নেশা) পরিনত হয়েছিল। আর এ নেশায় তারা অষ্ট প্রহর ডুবে থাকত। এর অবৈধতা সম্পর্কে মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন: “তারা আপনার কাছে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবে, আপনি তাদেরকে বলে দিন, উভয়ের মধ্যেই নিহিত রয়েছে মহা পাপ। যদিও উহাতে মানুষের জন্য কিছুটা উপকারিতাও রয়েছে। তবে এর উপকারিতার চেয়ে পাপই বড়” (সূরা আল বাকারাহ: ২১৯)। মদ ও জুয়ার মধ্যে যে সম্পদের অপচয়, আয়ূ ও সময়ের বিনাশ, বুদ্ধি ও বিবেকের ক্ষতি সংগঠিত হয় তাতে ঐ দুটো নেশা দ্রব্যের সাথে মুসলিম জাতির নূন্যতম কোন সম্পর্ক নেই এমনাকি থাকা উচিতও হবে না।
জুয়াকে আরবিতে ‘মায়সির’ ও ‘কিমার’ বলা হয়। যার আভিধানিক অর্থ বন্টন করা বা ভাগ করা। আর ‘ইয়াছার’ বলা হয় বন্টনকারীকে। বস্তুত ‘মায়সির’ ও ‘কিমার’ এমন খেলাকে বলা হয় যা লাভ ও ক্ষতির মধ্যে আবর্তিত থাকে অর্থাৎ যার মধ্যে লাভ বা ক্ষতি কোনটাই স্পষ্ট নয়। তাফসীরে মা’আরেফুল কুরআনে উল্লেখ রয়েছে, যে ক্ষেত্রে কোন মালের মালিকানায় এমনসব শর্ত আরোপিত হয় যাকে মালিক হওয়া না হওয়া উভয়েরই সম্ভাবনা থাকে। ফলে এতে লাভ কিংবা লোকসান উভয় দিকই বজায় থাকে।
জাহেলী যুগে নানা প্রকার জুয়ার প্রচলন ছিল। তম্মধ্যে এক প্রকার জুয়া ছিল এরুপ যে উট জবাই করে তার অংশ বন্টন করতে গিয়ে জুয়ার অশ্রয় নেয়া হতো। এতে কেহ একাধিক অংশ পেতো আবার কেহ বঞ্চিত হতো। বঞ্চিত ব্যক্তিকে উটের পূর্ণ মূল্য দিতে হতো। আর গোশত দরিদ্রদের মাঝে বন্টন করা হতো। নিজেরা ব্যবহার করত না। এ বিশেষ ধরনের জুয়ায় যেহেতু দরিদ্রদের উপকার ছিল এবং জুয়াড়ীদের দানশীলতা প্রকাশ পেত, তাই এ খেলাতে গর্ববোধ করা হতো। আর যারা অংশগ্রহণ করতো না তাদেরকে কৃপণ ও হতভাগ্য বলে মনে করা হতো। বন্টনের সাথে সম্পর্কের কারণেই এরুপ জুয়াকে ‘মাইসির’ বলা হতো। সমস্ত সাহাবী রা. ও তাবেয়ীগন এ ব্যাপারে একমত যে, সকল প্রকার জুয়াই ‘মাইসির’ শব্দের অন্তর্ভূক্ত এবং হারাম। বর্তমান সমাজে প্রাচীন পদ্ধতি ছাড়াও জুয়ার ক্ষেত্রে আরো বহু নতুন নতুন পদ্ধতি আবিস্কৃত হয়েছে যেমন: হাউজি, দাবা, কেরাম বোর্ড, ঘোড় দৌড়, লুডু খেলা, তাস খেলা, পয়সা ঘুরিয়ে খেলা ইত্যাদি বাজির মাধ্যমে আধুনিক নামে জাতীয় ক্ষতিকর কাজই জুয়ার অন্তর্র্ভূক্ত এবং হারাম। উহা কখনও মানুষের কল্যাণ বয়ে আনতে পারেনা। মোটকথা জুয়া হলো যে ব্যাপারে কোন মালের মালিকানায় এমনসব শর্ত আরোপিত হয় যাতে মালিক হওয়া না হওয়া উভয় সম্ভাবনাই সমান থাকে। আর এরই ফলে পূর্ণ লাভ কিংবা পূর্ণ লোকসান উভয় দিকই বজায় থাকে। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে যে শুধু নাম পরিবর্তনের কারনে বস্তুর হাকীকত (মূল প্রকৃতির) এবং হুকুম পরিবর্তন হয় না। কাজেই প্রাচীনকালে প্রচলিত জুয়া সম্পর্কে যে বিধান প্রযোজ্য ছিলো, আধুনিক কালের জুয়ার ক্ষেত্রেও সে বিধান প্রযোজ্য হবে। ইসলামী শরীয়তে জুয়া হারাম হওয়ার একাধিক আয়াত এবং হাদীসে সুস্পষ্ট বিবরন রয়েছে।
“হে ঈমান্দারগণ! নিশ্চিত জেনো, মদ, জুয়া, মুর্তি এবং তীর নিক্ষেপ এসবগুলোই নিকৃষ্ট শয়তানী কাজ। কাজেই এসব থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাক। যাতে তোমরা মুক্তি ও কল্যাণ পেতে পার। শয়তান মদ ও জুয়ার দ্বারা তোমাদের মধ্যে পারস্পারিক শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করতে চায়, আর আল্লাহর যিকির ও সালাত থেকে তোমাদেরকে বিরত রাখাই হল শয়তানের একান্ত কাম্য, তাই তোমরা এসব জিনিস হতে বিরত থাকবে কি ?” (সূরা মায়েদা-৯০,৯১)। এ আয়াতে মদ ও জুয়াকে ঘৃণ্য বস্তু হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এগুলোকে শয়তানের কাজ বলা হয়েছে। মদ ও জুয়াকে একই পর্যায়ভূক্ত করে মূর্তিপুজার সাথে মিলিয়ে বর্ণনা করা হয়েছে। আয়াতে এগুলো থেকে দূরে থাকার হুকুম করা হয়েছে। আরো বলা হয়েছে, এতে পরস্পরের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি হয়। অধিকন্তু এর দ্বারা শয়তান মানুষকে আল্লাহর স্মরন থেকে বিমুখ রাখে। কাজেই মদের জুয়াও হারাম। এর হারাম হওয়ার বিষয়টি কুরআন মাজিদের অকাট্য দলিল দ্বারা প্রমানিত। যদি কেউ এ বিধানকে অস্বীকার করে তবে সে কাফির বলে গণ্য হবে” এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সা. বলেন: “কেউ যদি তার সাথীকে বলে এসো জুয়া খেলব (তাস খেলব, লুডু খেলব, দাবা খেলব) তাহলে এ কথার অপরাধের কারণে সাদাকাহ করা তার উপর ওয়াজিব তথা অপরিহার্য। অতএব জুয়াকে (এর অনুরুপ খেলাকে) অর্থ উপার্জনের উপায় হিসাবে গ্রহণ করা যেমন কোন মুসলমানের জন্য জায়েজ নেই। তেমনি একে খেলা, মনের সান্তনা, তৃপ্তি ও অবসর বিনোদনের উপায় রূপে গ্রহণ করাও বৈধ হতে পারে না। যদিও এতে কিছুটা উপকারও রয়েছে তবে ক্ষতি অনেক বেশী। এর লাভ সম্পর্কে সকলেই অবগত আছেন। যদি খেলায় জয়লাভ করে তাহলে একজন দরিদ্র লোক এক দিনেই ধনী হয়ে যেতে পারে। কিন্তু এর আর্থিক, সামাজিক এবং আত্মিক ক্ষতি সম্পর্কে অনেক কম লোকই অবগত। জুয়া খেলা একজনের লাভ এবং অপর জনের ক্ষতির উপর পরিক্রমশীল। জয়লাভকারীর কেবল লাভই লাভ ; আর পরাজিত ব্যক্তির ক্ষতিই ক্ষতি। কেননা এ খেলায় একজনের মাল অন্য জনের হাতে চলে যায়। এ জন্য জুয়া সামগ্রিকভাবে জাতির ধ্বংশ এবং মানব চরিত্রের অধপতন ঘটায়। যে ব্যক্তি এতে লাভবান হয়, সে পরোপকারের ব্রত থেকে দূরে সরে রক্ত পিপাসূতে পরিণত হয়ে পরে। পক্ষান্তরে অপর ব্যক্তির মৃত্যু ঘনিয়ে আসে। অথচ প্রথম ব্যক্তি আয়েশ বোধ করতে থাকে এবং নিজের পূর্ণ সামর্থ এতে ব্যয় করে। ক্রয়-বিক্রয় এবং ব্যবসা-বানিজ্যে এর বিপরীত। কেননা এতে উভয় পক্ষের লাভ লোকসানের সম্ভাবনা থাকে। ব্যবসা দ্বারা মাল হস্তান্তরে ধন-সম্পদ বৃদ্ধিপায় এবং উভয় পক্ষই এতে লাভবান হয়ে থাকে। জুয়ার একটি মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে এই যে, জুয়াড়ী প্রকৃত উপার্জন থেকে বঞ্চিত থাকে। কেননা তার একমাত্র চিন্তা থাকে যে, বসে বসে একটি বাজির মাধ্যমে মুহুর্তের মধ্যেই অন্যের মাল হস্তগত করবে, যাতে তার পরিশ্রমের প্রয়োজনই নেই। কোন কোন মনীষী সর্ব প্রকার জুয়াকেই ‘মাইসির’ বলেছেন। কারণসরূপ বলেছেন যে, এতে অতি সহজে অন্যের মাল হস্তগত হয়। জুয়া খেলা যদি দু,চার জনের মধ্যেও সীমাবদ্ধ থাকে, তবে তাতেও আলোচ্য ক্ষতি পরিলক্ষিত হয়। কিন্তু বর্তমান যুগ যাকে অনবিজ্ঞ, দূরদর্শিতা বিহীন মানুষ উন্নতির যুগ বলে অভিহিত করে থাকে। নতুন নতুন রকমারি শরাব বের করে নতুন নতুন নাম দিচ্ছে। স্বাদেরও নতুন নতুন পদ্ধতি আবিস্কার করে বিভিন্ন পদ্ধতিতে তার প্রচলন ঘটাচ্ছে। অনুরূপভাবে জুয়ারও বিভিন্ন প্রকার পন্থা বের করা হয়েছে। এর মধ্যে অনেক দিক রয়েছে যা সামগ্রিক। এমন নতুন পদ্ধতিতে সম্মিলিতভাবে গোটা জাতির কাছ থেকে কিছু কিছু টাকা নেয়া হয় এবং ক্ষতিটা সকলের মধ্যে বন্টণ করা হয়। ফলে তা দেখার মত কিছু হয় না। আর যে ব্যক্তি এ অর্থ পায় তা সকলের দৃষ্টিতে ধরা পরে। ফলে অনেকেই তার ব্যক্তিগত লাভ লক্ষ্য করে জাতির সমষ্টিগত ক্ষতির প্রতি ভ্রুক্ষেপও করে না। এ জন্য অনেকেই এ নতুন প্রকারের জুয়া জায়েজ বলে মনে করে। অথচ এতেও সেসব ক্ষতিই নিহিত যা সীমিত জুয়ায় বিদ্যমান। একদিক দিয়ে জুয়ার এই নতুন পদ্ধতি, প্রাচীন পদ্ধতির জুয়া অপেক্ষা অধিক ক্ষতিকর এবং এর প্রতিক্রিয়া সুদুর প্রসারী ও সমগ্র জাতির পতনের কারণ হয়ে দাড়ায়। কারণ এর ফলে জাতির সাধারণ মানুষের সম্পদ দিন দিন কমতে থাকে। আর কয়েকজন পুঁজি পতির মাল বাড়তে থাকে। এতে সমগ্র জাতির সম্পদ কয়েক ব্যক্তির হাতে কেন্দ্রীভূত হওয়ার পথ খুলে যায়। পক্ষান্তরে ইসলামী জীবন-ব্যবস্থার বিধান হচ্ছে, যে সকল ব্যবস্থায় সমগ্র জাতির সম্পদ মুষ্টিমেয় কয়েক ব্যক্তির হাতে জমা হওয়ার পথ খোলে সে সকল পন্থাই হারাম। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুআনের বক্তব্য হলো: সম্পদ বন্টন করার যে নিয়ম কুরআন যে নিয়ম নির্ধারণ করেছে তার উদ্দ্যেশ্য হচ্ছে এই যে, ধন দৌলত যেন কয়েক জন পূঁজি পতির হাতে পুঞ্জীভূত না হয়ে পড়ে।
জুয়া ও অবৈধ ও নিষিদ্ধ হুকুমের মধ্যে অন্যতম। কারণ এর মধ্যে বিভিন্ন ধরণের ক্ষতি ও অপকার নিহিত রয়েছে। এ প্রসঙ্গে আল্লামা আলী সাবুনী রহ. বলেন: জুয়া খেলায় যখন মানুষ মত্ত হয় তখন অনুভূতি ও বিবেচনা শূন্য হয়ে পড়ায় মূল্যবান সময় নষ্ট হতে বাধ্য হয়। জুয়ায় মানুষ নিজেকে নিজের পকেটের অর্থ অনেক বেশী পাওয়ার লালসায় নিয়োগ করে। এভাবে ক্রমান্বয় অতি লালসার কারনে সে নগদ অর্থ হারানোর পর মূল্যবান আসবাবপত্র। জমি-জমা, এমনকি ভিটে-মাটি বিক্রি করতে বাধ্য হয়। অবশেষে সবকিছু হারিয়ে সে যখন পথে উঠে তখন তার মধ্যে সম্পদ ও মর্যাদা হারানোর অনুভূতি অতি তীব্র হতে দেখা যায়। আর এ কারনে তখন পরস্পরের মধ্যে হিংসা বিদ্বেষ ও প্রতিশোধ মনোভাব সৃষ্টি হয়। ফলশ্রুতিতে অনেক যুদ্ধ বিগ্রহ, দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও মৃত্যু পর্যন্ত সৃষ্টি হতে দেখা গিয়েছে।
জুয়াড়ী ব্যক্তির হাতে টাকা-পয়সা না থাকলে সে সম্পদ বিক্রি করে প্রয়োজনে ঘরের সামান-পত্র এমনকি ঘর বিক্রি করেও এ খেলায় অংশ গ্রহন করে থাকে। তাতেও সম্ভব না হলে চুরি, ডাকাতি করে হলেও জুয়ায় অংশগ্রহণ করে থাকে। জুয়া খেলার সাথে চোর ডাকাতের এবং দুশ্চরিত্রের খারাপ লোকদের সম্পৃক্ততাই সবচেয়ে বেশী। মোটকথা এই খেলায় যেমন অর্থনৈতিক ভারসাম্য নষ্ট হয় তেমনি এতে মানুষের চারিত্রিক ক্ষতিও রয়েছে চরমভাবে। জুয়ায় অভ্যস্ত ব্যক্তি ক্রমান্বয়ে উপার্জনের ব্যাপারে অলস, উদাসীন ও নিস্পৃহ হয়ে যায়। তার এক মাত্র চিন্তা থাকে ঘরে বসে ব্যক্তির মাধ্যমে অন্যের মাল হাতিয়ে নেওয়া। যাতে কোন পরিশ্রমের প্রয়োজন হয় না।
এমনিভাবে অলস হয়ে তারা দেশ ও দশের উন্নয়রনে আর কোন অবদান রাখতে পাবে না। জুয়ারী ব্যক্তি জুয়ার নেশায় মদখোর ব্যক্তির ন্যায় মাতাল অবস্থায়ই থাকে সর্বদা। এ কারনে সে ছেলে-মেয়ে, স্ত্রী ও আত্মীয় স্বজনের কারোর খবর রাখতে পারেনা। বরং তারা ও পিতার দেখা দেখী ঐ সর্বনাসা খেলায় অংশ গ্রহনের প্রয়াস পায়। এমনি করেই জুয়াড়ী ব্যক্তির পরিবার ধংশ হয়ে যায়। জুয়াড়ী ব্যক্তির মেজাজে সর্বদা রুক্ষতা ও নিষ্ঠুরতা বিরাজমান থাকে। লাভবান ব্যক্তি আরো লাভের নেশায় মাতাল হয়ে উঠে। আর পরাজিত ব্যক্তি প্রতিশোধের নেশায় উম্মাদ হয়ে ওঠে। তাই স্ত্রী, ছেলে-মেয়েদের সাথে তার ঝগড়া-বিবাদ ও অশান্তি সর্বদা লেগেই থাকে। বর্তমানে স্ত্রী কর্তৃক স্বামী হত্যা বা স্বামী কর্তৃক স্ত্রী হত্যা এ জাতীয় লোম হর্ষক ঘটনার পেছনে জুয়ার প্রভাবকে খাটো করে দেখা যায়না। সুতরাং জুয়া সমাজ ও সভ্যতার জন্য অত্যন্ত মারাত্মক বিষয়। পবিত্র কুরআন বিশেষভাবে এ ক্ষতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এই জুয়ার অভিশাপে কতইনা পরিবার, সমাজ ও প্রতিষ্ঠান ধ্বংশ হয়ে গেছে? মুলত জুয়া এবং এ জাতীয় কর্মের মাধ্যমে শয়তানের বিশেষ উপকার সাধিত হয়। যেমন স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এ প্রসঙ্গে এরশাদ করেছেন। শয়তান শরাব ও জুয়ার দ্বারা তোমাদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ, শত্রুতা ও ঘৃনা সৃষ্টি করতে এবং তোমাদেরকে আল্লাহর যিকির ও সালাত থেকে বিরত রাখতে চায়।
ফলে বুঝাযায় যে, কোন বস্তু কিংবা কোন কাজে দুনিয়ার সাময়িক উপকার বা লাভ থাকলেই শরীয়ত একে হারাম করতে পারে না। যেহেতু এ সবের উপকারের চাইতে ক্ষতি মারাত্মক। তাই কোন বিবেক বুদ্ধি সম্পন্ন লোক এ গুলোকে উপকারী বা হালাল বলবে না। ইসলামী শরীয়ত জুয়াকে এই দৃষ্টিকোন থেকেই হারাম বলে ঘোষনা করেছে। কারণ, জুয়ার সবচেয়ে মারাত্মক ক্ষতির দিকটি হলো, এ খেলায় মানুষ আল্লাহ বিমুখ এবং সালাত, সাওম তথা ইবাদাত বন্দেগীর ব্যাপারে চরমভাবে উদাসীন ও গাফিল হয়ে যায়। কেননা জুয়াড়ী ব্যক্তির একমাত্র ধ্যান-ধারণা হলো কেমন করে আরো টাকা-পয়সা, হাসিল করা যায় অথবা কেমন করে পরাজয়ের প্রতিশোধ নেয়া যায়। কাজেই জুয়ার এ সর্বনাশা গ্রাস থেকে বেচে থাকা অপরিহার্য।
সর্বপরি এটাই প্রতীয়মান হয় যে, ফিকহি মাসয়ালা অনুসারে উপকার হাসিল করার চেয়ে ক্ষতি রোধ করাকে অগ্রাধিকার দেয়া বিধেয়। অর্থাৎ কোন একটি কাজে কিছু উপকারও হয় আবার ক্ষতিও হয়। এ ক্ষেত্রে ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য লাভকে ত্যাগ করতে হবে। এমন উপকার সর্বাবস্থায় পরিত্যাজ্য, যা ক্ষতি বহন করে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে উল্লেখিত বিধান মেনে চলার তাওফিক দিন। আমিন।
লেখক : অধ্যাপক ও গবেষক
আসসালামু আলাইকুম । প্রিয় এডমিন এবং পাঠক আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষন করছি। যদি আপনারা লেখা পড়ে কমেন্ট না করেন তাহলে আমরা লিখব কেমনে???????????? ধন্যবাদ। ভালো থাকেন সবাই।