কদর রাত্রির প্রার্থনা

আল মাহমুদ ।।

হে আল্লাহ
হে সমস্ত উদয় দিগন্ত ও অস্তাচলগামী আলোকরশ্মির মালিক
আজকের এই পবিত্র মহাযামিনীর সব রকম বরকত আমাকে দাও।
আমাকে দাও সেই উত্তেজক মুহুর্তের স্বর্গীয় পুলক- যাতে
একটি সামান্য গুহার প্রস্তুরীভূত শিলাসহ কেঁপে উঠেছিলেন
মহানবী মোহাম্মদ (সাঃ)
না, আমি তো পড়তে পারছি না এই অন্ধকারের অন্তস্থলে
বিদ্যুতের ঝলকানি কোন্ অক্ষর আর ইঙ্গিতময় বাণী ক্রমাগত লিখে যাচ্ছে
শুধু আমার মাতৃভূমিকে পেঁচিয়ে আবর্তিত হচ্ছে
এক কুটিল অন্ধকার।

অন্ধকার,
যেন শয়তানের নিঃশ্বাসের উষ্ণ কালো ধোঁয়ার আবর্তিত কুন্ডলী,
আর বহুস্তর অন্ধকারের ওপর চাবুকের দাগের মতো ঝলসে উঠেছে
অক্ষরের পর অক্ষর।
ইঙ্গিতময় বাক্যের পর বাক্য।
আমি পড়তে না পারলেও শব্দের ত্বরিত গুঞ্জনের
নিগূঢ় তত্ত্ব আমি জানি। আমি জানি
আমার চোখ ও হৃদয়কে তুমি সৌন্দর্যের জারকে চুবিয়ে
কেন নির্মান করেছিলে।
কেন আমি কবি? কেন প্রতিটি শব্দের জ্ঞাত অর্থের
অতিরিক্ত অর্থ আমার জানা?
আমরা বৃষ্টির জন্য তোমার দরবারে হাত তুললে
তোমার বজ্র ও বিদ্যুৎ আমাদের অন্ধ করে দিয়েছে।
আমরা বৃষ্টি প্রার্থনা করে তোমার কাছে পেলাম
আমাদেরই অনুতপ্ত অশ্রুবারি
তোমার বিন্দুমাত্র ক্ষুব্ধ নিঃশ্বাসেই দুমড়েমুচড়ে উড়ে গেল
কত গ্রাম আর অসহায় মানুষের বাসস্থান
উহ, গাছগুলোর দিকে তাকালে অন্তরাত্মা না না
করে উঠে। যেন যুদ্ধ শেষে
অসংখ্য বল্লম বিজয়ীরা মৃতের ময়দানে উল্টো করে পুঁতে রেখেছে।

হে আল্লাহ,
পবিত্রতম মহাযামিনীর অধিপতি,
তুমি তো একের পাপ অন্যের ঘাড়ে বর্তাও না।
পিতার পাপ পুত্রকে স্পর্শ না করার, হে প্রতিশ্রুতিদানকারী
দ্যাখো সহস্রাধিক মানুষের লাশ নিয়ে আমরা পবিত্র কোরআন নাজিলের
পুণ্য রজনীতে এখন সিজদারত
আমাদের রাজ-রাজড়াদের পাপে তুমি যেন আমাদের ধ্বংস করে দিয়ো না।
কেন এক প্রাচীন তৌহীদবাদী জনগোষ্ঠীর স্বাধীনতার রুজ্জু
তুমি পরাক্রান্ত পৌত্তলিকদের হাতে তুলে দিতে চাও?
আমরা কি বংশানুক্রমে তোমার দাস নই?
আমরা তোমার নামের কোন জেহাদেই অতীতে পৃষ্ঠপ্রদর্শন করিনি।
তোমার অনুগ্রহ থাকলে
আমাদের সিজদারত সন্ততিরাও রক্ত ও বারুদের সমাধানই
শেষ পর্যন্ত বেছে নেবে
এই পুণ্য রজনীতে আমাদের আবরিত স্ত্রী ও কন্যাদের সমস্ত গোনা প্রভু
মাফ করে দাও।

হে অনুকম্পার মহান অধিপতি,
এই মহানগরীর ভদ্রবেশী বেশ্যা, লম্পট, হিরোইনসেবী ও ছিনতাইকারীর
প্রাত্যহিক পাপের দেনায় আমরা এমনিতেই অতিষ্ঠ,
এর সাথে যোগ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মহান পন্ডিতেরা
শিক্ষার প্রতিটি প্রাঙ্গন কিশোর হত্যার মহাপাপে এখন রক্তাক্ত, পঙ্কিল।
প্রকৃত পাপীদের বিনাশ ত্বরান্বিত করতে তুমি কি বাংলাদেশের
প্রতিটি বিদ্যাপিঠকেই বিরান করে ফেলবে?
এমনিতেই গ্রামে গ্রামে ধসে পড়া স্কুলবাড়িগুলোর ভেতর থেকে
শেয়াল আর পেঁচার ডাকে প্রাইমারি স্কুলের আবু মাস্টারের ঘুম নেই
তার ওপর তারই একমাত্র শহুরে পড়ুয়া মেয়েটির গলার চেন ও হাতের বালা
জগন্নাথ হলের পাশের রাস্তা থেকে ছিনতাই হলো। বুকের ওপর ছুরি রেখে
খুলে দে হারামজাদী,  চুপ্।

আমরা তো চুপ করেই আছি, তবু হে পরোয়ারদিগার
জনতে সাধ জাগে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কি ডাকাতদের গ্রাম?
বাল্যে যেমন কোনো গাঁয়ের পাশ দিয়ে নাও বেয়ে ফিরতে গেলে
মুরুব্বীরা বলতেন, ওপথে যেও না অমুকটা হলো ডাকাতের গ্রাম।
প্রভু-
ডাকাত, ছিনতাইকারী, পন্ডিত ও বেশ্যাদের হাত থেকে
তুমি কি ইলম্কে রক্ষা করবে না? –রাব্বি যিদ্নী ইলমা-
প্রভু, আমাদের জ্ঞানদান করো।

তথ্যসূত্র: কাব্যগ্রন্থ- এক চক্ষু হরিণ

কবিতাটির ভিজ্যুয়াল আবৃত্তি শুনতে ক্লিক করুন।

One comment

Leave a Reply to খৈয়াম আজাদ Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *