রহিম ইবনে বাহাজ ।।
সৃজনশীল মানুষ চিরকাল ই অমর। তাদের কৃতি, সৃষ্টি সূর্যের মতো জ্বলতেই থাকে এ ভূখন্ড ধ্বংস হওয়ার আগ পর্যন্ত মানুষ মনে রাখে। কালে কালে যুগে যুগে গবেষণা হয়ে আসছে এখনো হচ্ছে, কর্ম ও কৃতিত্বের উপর আজকের লেখাটা একান্তই আমার।
১৯৯৮ সালে আমি তখন অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। আমাদের বাড়িতে সাংবাদিক শাহ জামাল ভাই একদিন তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত শিল্প সাহিত্যের কাগজ সৈকত পেপার নিয়ে আসেন, ওখানে ছড়া কবিতার বিশাল সমাহার, পঞ্চম শ্রেণির ছাত্ররা কবিতা প্রকাশ করেছেন। আমি মুগ্ধ হই। আমার খুব ঈর্ষা হয়। পণ করি পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র কবিতা লিখতে পারলে আমি পারবো না কেন। ছড়া কবিতার চিন্তায় পাঠ্য বইয়ে মন বসে না। আরবি পাঠ্য বইয়ে একটা গল্প ছিল তোমরা কে কি হতে চাও, সবাই ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, উকিল, শিক্ষক হতে চাইলেও কেউ কবি হতে চাইনি। গল্পটিতে কবির কথাও উল্লেখ ছিল, স্যার আমাকে প্রশ্ন করলেন- তুমি কি হতে চাও? আমি দাঁড়িয়ে বললাম আমি কবি হতে চাই, আমার উত্তর শুনে সকলেই দু পাটি দাঁত বের হাসতে থাকলো সারাক্ষণ অস্থির তোলপাড় চলে চিত্তে। সামনে বার্ষিক পরীক্ষা সময় ঘনিয়ে আসে। যথাসময়ে পরীক্ষা শেষ হলো।
হঠাৎ একদিন ভোরের আলো ফোঁটার আগেই বালুআটা গ্রামের বয়ষ্ক এক ব্যক্তি আমার দরজায় কড়া নাড়েন। উনি লোক মুখে শুনেছেন আমি কবিতা লিখি, তিনি অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। নাম মির্জা মহিউদ্দিন বাচ্চু, বিভিন্ন পেপারে প্রকাশিত ছড়া কবিতার সাহিত্য পাতাগুলো নিয়ে আসছেন। তিনি আবৃত্তি শুনালেন স্বরচিত ছড়া, কবিতা। আমি মুগ্ধ হই, এতো ছন্দ মিলিয়ে কিভাবে লেখেন । তিনি আমার একটি ছড়া নিয়ে যান। বললেন- জামালপুর সাপ্তাহিক সচেতন কন্ঠ পেপার দিবেন, ৪ই জুন প্রথম ছড়া ‘পুতুলের বিয়ে ’ প্রকাশিত হয়, উনি পেপার সহ বাড়ীতে আসেন। অন্য কবি লেখক এর মতো আনন্দে আত্মাহারা হই। পেপারের ঠিকানায় কবিতা পাঠিয়ে দেই, মাঝেমধ্যে প্রকাশ হয়।
একদিন জামালপুর শহরে যাই সচেতন কন্ঠ অফিসে, সম্পাদক এর নাম বজলুর রহমান, সেদিন কি কথা হয়েছিল মনে নেই। আমার পাশের গ্রাম মহিরামকুলে শেখ ফজল একজন কবি আছেন। তাঁর বাড়িতে যাতায়াত করি, আমার লেখাগুলো দেখাই। তিনি বললেন, এভাবে লিখতে হবে, অক্ষরবৃত্ত, মাত্রাবৃত্ত, ছন্দবৃত্ত এই তিন ফরম্যাটে কবিতা লেখা যায়। শুধু ছন্দ মিলালে লেখা হয়না। ভাব উপমা ছন্দের অন্তমিল প্রয়োজন হয়, আধুনিক কবিরা আজকাল অবশ্য গদ্য কবিতা ও লিখে থাকেন। প্রচুর পরিমাণ পড়তে হবে। তাঁর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের কয়েকটি বই দিলেন, শিশুতোষ ছড়ার বই ‘মায়ের আশা মায়ের ভাষা’ ‘প্রিয় ভালোবাসা তোমাকে দিলাম’ তাঁর ছেলের সম্পাদনায় প্রকাশিত ম্যাগাজিন ‘কলম কলি’ আমাকে দেয়, এবং ‘দশ আকাশ’ যৌথ কাব্যগ্রন্থটি হাতে পাই, যতদূর মনে পড়ে, গ্রন্থটি কবি সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল, কবি ধ্রুব জ্যোতি ঘোষ মুকুল, ছড়াকার মির্জা মহিউদ্দিন বাচ্চু ও কবি শেখ ফজল-এর, তাদের কবিতা পাঠ করি। দশম শ্রেণি পড়াকালে জামালপুর হতে প্রকাশিত সাপ্তাহিক সচেতন কন্ঠ প্রতি রবিবার প্রকাশ হতো।
আমি হকার হিসেবে যোগ দেই, ১০০ কপি পেপার ভোর বেলা কিনে নেই ২০০ টাকায়। ৫ টাকায় প্রতিকপি বিক্রি। একেবারে অজপাড়াগাঁয়ে আমি প্রথম পেপার নিয়ে আসি, শিকড় নিবাস তেঘরিয়া, মহিরামকুল, ভাবকীবাজার, শিহাটা, ফুলকোচা, কমলাবাড়ি, ঢালুয়াবাড়ি, হাজরাবাড়ি বাজার এলাকায় ৮০০ টাকা ঋণ নিয়ে পুরাতন একটা সাইকেল চালিয়ে পেপার বিক্রি করতাম। পড়াশোনা খরচের একটা শুভ ফল পাই, যেদিন আমার কবিতা প্রকাশ হতো পেপার ২০ কপি বেশি বিক্রি হতো। হাজরাবাড়ি বাজারে জাতীয় দৈনিক পেপার আসতো, শুক্রবার হলে কিছু পেপার কিনতাম। দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকায় শিশু কিশোর পাতা প্রকাশিত হতো, একবার ডাকযোগে একটি ছড়া পাঠিয়েছিলাম একমাস পর প্রকাশিত হয়। সেদিন খুব আনন্দে মাতি।
ক্রমশ লেখালেখি চলে। জেলা উপজেলা সাহিত্য সংস্কৃতির আড্ডা হলে কবি শেখ ফজল, কবি সাজ্জাদ আনসারী, ছড়াকার আশরাফুল মান্নান বাড়িতে লোক পাঠাতেন, আমি সেসব আড্ডায় অংশগ্রহণ করতাম। আমার প্রথম পাঠক/শ্রোতা ছিলেন মা, যিনি মূর্খ মানুষ- লেখাপড়া কিছিই জানেন না। তবুও মাকে কবিতা শুনাতাম। মা পাড়ায় পাড়ায় বলে বেড়াতেন- আমার পোলা কবি। কবিতা লেখে একদিন বড় কবি হবে। গ্রামে ধানকাটা শেষ হলে মুদি দোকানিরা হালখাতা করত, বাউল শিল্পীরা রাতভর গান করতো। আমার বাবা পুঁথি পাঠ করতেন- খুব উপভোগ করতাম। দশম শ্রেণি পড়াকালেই কাজী নজরুল ইসলাম এর মতোই ঝাকড়া চুল রাখি। মাদ্রাসার ছাত্র এতো বড় চুল রাখা ঠিক না, গ্রামের মুরুব্বিগণ ভালো চোখে চায়না। আমিও নাছোড়বান্দা চুল রাখবোই। দাখিল পরীক্ষার আগে চুল গুলো কাটতে হয়েছিলো। ভীষণ কষ্ট পেলাম তখন। বাংলা সাহিত্যের প্রতি দূর্বল ছিলাম- চোখের সামনে যা পড়ত তাই পড়তাম। কবিতা লেখার সুবাদে কয়েকজন বন্ধু ডায়েরি/কলম উপহার দিতো, রাতভর ডায়রি লেখালেখি করি, শুক্রবার হলেই কবি শেখ ফজল ভাই এর বাড়িতে আসতাম। আমার কিছু লেখা পড়ে বেশ ভালো হয়েছে বলে জানায়। ফজল ভাই কে বলতাম মানুষ আমাকে কবে কবি বলে ডাকবে? তিনি আমার কথা শুনে হাসতেন। বললেন- সময় হলেই মানুষ তোমাকে কবি বলে ডাকবে। তাঁর জন্য প্রয়োজন প্রচুর পড়াশোনা, সাধনা, নজরুল, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জীবনানন্দ দাশ, হোমার, জালালুদ্দিন রুমি, রফিক আজাদ, শামসুর রাহমান, তাদের বইগুলো সংগ্রহ করে পড়।
রাতের আঁধারে নিজেদের গাছের সুপারি গাছ হতে সুপারি চুরি করে জামালপুর থেকে বই কিনি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, জীবনানন্দ দাশ এর বই কিনি। লেখালেখির সূচনা হতেই আমি কবিতার প্রতি দূর্বল এ ধারা এখনো অব্যাহত রয়েছে। বাজার হতে বাবা লুঙি নিয়ে আসলে লুঙ্গির ভাঁজে ভাঁজে পেপার থাকতো। আমি ঐ পেপার খুঁটে খুঁটে পড়তাম, পড়ার প্রতি ব্যাপক নেশা। ২০০০ সালে প্রথম একটি ম্যাগাজিন সম্পাদনা করি ‘নকশী আঁকা দুল’ জেলা উপজেলার কবিদের, ছড়া, কবিতা, গল্প প্রকাশিত হয় এই লিটল ম্যাগে।
আমার বেড়ে ওঠা কোন মধ্যবিত্ত পরিবারে নয়, নিম্মবিত্ত পরিবারে, বাবা দিন মজুরের কাজ করতন, সংসারের অশান্তিকে দূর করার জন্য দুই তিন বছর লজিং ছিলাম কোনামালঞ্চা, ভাংগুনীডাংগা দেউলাবাড়ী গ্রামে, প্রতি পূর্নিমার রাতে কবিতার আসর জমাতাম, একক স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করতাম। আমার লেখালেখি লজিং ওয়ালা পছন্দ করেনি, আমাকে বিদায় করে দিলে অন্যত্র চলে যাই, জীবন যে সংগ্রামী, জীবন যে জটিল, জীবন যে মহাযুদ্ধময়। আমার সংগ্রাম তো দু’মুঠো সাদা ভাতের ক্ষুধা মেটানোর যুদ্ধ, দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত যে জীবন। তবুও সমাজের উচ্চবর্গের মানুষগুলো আমাকে ভন্ড উপাধি দিয়েছিলেন, লেখনির মাধ্যমে জবাব দিয়েছি, ‘আমি নাকি ভন্ড ছেলে কিছু লোকে কয়/লম্বা চুল রাখিলে/ভন্ড সেই নয়/মন যদি ভালো থাকে/দেহ পরিস্কার/সৎ তুমি যাকে/সেই অন্ধকার/কালো টাকা ভালো লোক/সাদা জামা পড়ে/বর্তমানে সর্বলোকে/তাকে শ্রদ্ধা করে/আমি কোন ভন্ড নই/সত্যি বড় দুখ/বর্তমানে কালো টাকা/তারাই ভালো লোক। এই ছড়াটি যেদিন প্রকাশিত হয়, ১৫০ কপি পেপার বিক্রি হয়েছিল।
বৃক্ষ, প্রকৃতি, ঝিনাই নদী, প্রজাপতি, ফুল ফল পাখির কলরব শুনতে শুনতে সবুজের বুক চিরে ছুটেছি দশ দিগন্তে। ২০০১ সালে প্রথম রমজানের দিন মা পরপারে চলে গেলেন। ভীষণ কষ্ট পেয়েছি। মাকে নিয়ে অজস্র লেখা শুরু করলাম। ২০০৪ সালে বাবার সাথে অভিমান করে বাড়ি হতে বের হয়ে গিয়েছিলাম, সাথে ছিলো মাত্র ১৭ টাকা আর কবিতার ডায়েরি এবং বিভিন্ন কবি লেখকের বই।
মহিরামকুল হতে বাসে উঠলাম মাদারগঞ্জের উদ্দেশ্যে, বাস স্টেশন থেকে দিকবিদিক ঘুরছি বাস ভাড়া ১০ টাকা দিয়ে মাত্র ৭ টাকা সম্ভল, একটা গ্রামের দিকে টেম্পুতে উঠলাম ভাড়া ৫ টাকা পরিশোধ করে জাংগালিয়া বাজার স্কুল মাঠে বসে আছি। একটু পরে সূর্য অস্ত যাবে। কোথায় থাকব নানান চিন্তায় নয়ন পাতা ভিজে উঠেছে, চিত্তাকর্ষক বিষয়গুলো মুচড়ে মাথার চুল ক্রমশ ছিঁটতে থাকি। সাহস, শক্তি, দৃঢ়মনবল আমার কবিতা, কবিতাই আমার সম্পদ, বেঁচে থাকার প্রেরণা। এমন সময় কয়েক যুবক এসে আমার পরিচয়, নানান প্রশ্নের জালে আবদ্ধ করে। মিনিট দশেক আমার জবানি শুনে তাদের বাড়িতে নিয়ে যায়, খেতে দেয়। রাতে কবিতার আসর জমাতাম রাতটুকু থেকে ভোর বেলা উদ্দেশ্যহীন যাত্রা করি, পথিমধ্যে আমাদের এলাকার মসজিদের সাবেক ইমামের সাক্ষাৎ হলো- তিনি এলাকায় কওমি মাদ্রাসার শিক্ষক। তিনি আমাকে মাদ্রাসায় নিয়ে যান। দুই দিন মাদ্রাসায় থাকি, এরপর বললেন- তুমি পাঠাদহ কয়ড়া বাজার এলাকায় যাও, ওখানে কবিতার আসর ভালো হবে, পাটাদহ জামে মসজিদে আমার পরিচিত ইমাম আছেন, আমার কথা বলবে। আমাকে ৫০ টাকা দিয়ে গাড়িতে তুলে দেন। আমি যথাস্থানে আসি, ইমাম এর তিন বেলা খানা আসতো বিভিন্ন বাড়ি থেকে, তিনি কম খেয়ে আমাকে খেতে দিতেন। মসজিদ সংলগ্ন একজন শিক্ষক ছিলেন- নাম দেলোয়ার মাস্টার, তাঁর কাছে আমাকে নিয়ে যান আমাকে। তিনি আমার কথা শুনে বললেন- আমাদের গ্রামে কবিতার আসর হবেনা, সিটি ঢিভি দেখে ছেলেরা।
ইমাম সাব বিকালে কয়ড়া বাজারে নিয়ে আসলেন। বললেন তুমি এ বাজারে কাজ করো। আমি তাতেই রাজি হলাম। বিভিন্ন মুদি দোকানে নিয়ে ঘুরলো কেউ কাজে নেয়না। শেষে এক হোটেলে কাজের ব্যবস্থা হলো। হোটেল মহাজন বললেল, কোন টাকা পয়সা দিতে পারবোনা, তয় খাওন থাকা ফ্রি। আমি শুনে কোন দ্বিমত পোষণ করিনি। ইমাম সাহেব চলে গেলেন, রাত ১১ টায় হঠাৎ বাবাকে মনে পড়লো। চাপা কান্নায় হোটেলের খাবার টেবিলে- কবিতার ডায়েরি, জীবনানন্দ ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বই বালিশ বানিয়ে নয়ন পাতা বন্ধ করে একটু নিদ্রার চেষ্টা করি।
না জগতের নিয়ম শৃঙ্খলা আচার-আচরণ শুভ মনে হয় না। এসব ভাবতে ভাবতে কখন যেন ঘুমিয়ে গেছি। একটু পর মুয়াজ্জিনের আজান শুনতে পেলাম, আমার সাথে আরো দুজন হোটেল বয় ছিলো, তারা বললো- উঠো তারাতাড়ি সকালের নাস্তা বানাতে হবে। দুই দিন পর বিকালে ওই ইমাম সাহেব খোঁজ খবর নিতে আসেন, হোটেল মহাজন বললেন, কাজ কাম ভালোই পারে তয় সমস্যাও আছে, আমার তো ছোট হোটেল- লোক লাগেনা, আপনি ওরে নিয়ে যান। ইমাম সাহেব কোন অনুরোধ বিনয় করেননি- বললেন, ধৈর্য্য ধরো। ইমাম সাহেব পাশের এক দোকানের কথা বলেন, বাজারের দক্ষিণ দিকে যেতে থাকি, করাতকল, চিঁড়া মিলস্, ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস্প। ইমাম সাহেব এখানে কথা বলে চাকরির ব্যবস্থা করে দিলেন মাসিক বেতন ৩০০ টাকা।
এতোক্ষণ যা শুনলেন বানানো কোন গল্প নয়- আমার জীবন থেকে নেয়া, এই কয়ড়া বাজার এলাকা হতেই মিডিয়া জগতে প্রবেশ, কয়ড়া বাজার এলাকায় চৌধুরীর বাগান কবিতা লেখার খুব প্রিয় জায়গা। প্রিয় পাঠক, জীবনে যে যুদ্ধ কত ঘাত-প্রতিঘাত, মহাপ্রলয়, ঝড়। সমস্ত কিছু হজম করে শুধু কবিতার জন্য বেঁচে থাকা। আমি যে সংগ্রাম করেছি কতটুকু বিজয় অর্জন করেছি। মেলান্দহ, মাদারগঞ্জ, কয়ড়া বাজার এলাকার মানুষগুলো জানে। জীবন সম্পর্কে কোন অভিজ্ঞতা কমতি রাখিনি গতানুগতিক কালের ধারা এখনো চলমান আছে। রোদ, বাদল, ঝড় উপেক্ষা করে জীবনটা সপে দিয়েছি কবিতায়।
কবি আল মাহমুদের ‘কবিতা এমন’ কবিতার মতোই- কবিতাতো কৈশোরের স্মৃতি, সেতো ভেসে ওঠা ম্লান, আমার মায়ের মুখ, নিম ডালে বসে থাকা হলুদ পাখিটি…
কয়ড়া বাজার এলাকায় আমার সাহিত্যের চাষ পুরোদমে এগিয়ে গিয়েছিলাম। এখানেই প্রণয় এবং না পাওয়ার বিরহ, অনল, মিডিয়া জগতে প্রবেশ। আমার সম্পাদনায় সৃজনশীল ম্যাগাজিন সাহিত্যের আলো নিয়মিত ভাবে প্রকাশ হয়। বাংলাদেশের জাতীয় দিবস গুলোতে গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ হতো। ইমাম সাহেব যেখানে চাকরির সুযোগ করে দিয়েছিলেন। চাকরিটা বেশিদিন করতে হয়নি, নির্মাতা মোস্তফা সরোয়ার ফারুকীর একান্ত বডিগার্ড মাসুদ রানার সাথে পরিচয় হয়। তার মাধ্যমেই রূপালি জগতে প্রবেশ। ক্যামেরার পিছনে কাজ করি। মাসে ১৫/২০ দিন শুটিং, বাকী দিন গা ভাসিয়ে চলি। এখানেও দারুণ অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। শাহবাগ ছবির হাটে অবসরে কবি টোকন ঠাকুরের সাথে আড্ডা চলতো, আজিজ মার্কেটে হুদাই ঘুরতাম। টিএসসি মোড়ে রাজু ভাস্কর্যের উল্টোপাশে সারাদিন বসে থাকতাম। পকেটে টাকা না থাকলে কারো হতে সিগারেট চেয়ে নিতাম। ভাব উদয় হলেই ডায়েরি খুলে লেখার চেষ্টা করি। ফুটপাথে মাদুর বিছানো বইগুলো দেখতাম- প্লেটোর সাহিত্য দর্শন, সেখানে পড়লাম কবিরা হলেন- লঘু মনের চঞ্চল, অপার্থিব জীব এবং কবিরা একমাত্র তখনই বেরিয়ে আসে, যখন দেবতা তার মনকে দখল করে নেন। ফলে তিনি আত্মহারা হয়ে পড়েন এবং বিবেক বুদ্ধি বা যুক্তি একেবারে লোপপায়।
কবিতা শুধু আনন্দই দেয়না, মানুষের কল্যাণে কাজে আসে। কবিতা চিত্তের বিনোদন ও সামাজিক প্রয়োজন উভয়ই যদি মেটাতে পারে- তাহলে লাভ আমাদেরই।
রহিম ইবনে বাহাজ
কবি ও কলাম লেখক