মুক্তবুলি প্রতিবেদক ।।
সময়টা ১৭৮২। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ২৪ পরগনা জেলার চাঁদপুর গ্রামে শহীদ সাইয়েদ নেছার আলী তিতুমীরের জন্ম। কুখ্যাত জমিদার কৃষ্ণদেব রায় শত শত লোক জড়ো করে লাঠিসোঁটা, ঢাল-তলোয়ার, সড়কিসহ জুমার নামাজরত অবস্থায় মসজিদে আগুন ধরিয়ে দেয়। ফলে দু’জন শাহাদত বরণসহ বহু লোক আহত হয়। মুসলমানরা মামলা দায়ের করে। মুসলমানরা যখন প্রতিকার পেলো না তখন তিতুমীর লোকজন নিয়ে ১৭ অক্টোবর ১৮৩১ সাল নারকেলবাড়িয়া হিজরত করেন। ২৯ অক্টোবর কৃষ্ণদেব সহস্রাধিক লাঠিয়াল ও অস্ত্রধারী গুণ্ডাবাহিনীসহ নারকেলবাড়িয়া আক্রমণ করে বহু লোক হতাহত করে। মামলা দায়ের করতে গেলে কোনো ফল হলো না। ৬ নভেম্বর কৃষ্ণদেব আবার মুসলমানদের আক্রমণ করল।
বশিরহাটের দারোগা তিতুমীর সম্পর্কে কালেক্টর ও জয়েন্ট ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে অনবরত লিখতে থাকে। হিন্দু জমিদাররা এবং ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্নেল স্টুয়ার্ড ১০০ ঘোড়া, ৩০০ পদাতিক সৈন্য, দু’টি কামানসহ নারকেলবাড়িয়াতে রওনা হন ১৩ নভেম্বর, ১৮৩১ সালে। ইংরেজ আলেকজান্ডার হাবিলদার, একজন জমাদার, ৫০ জন বন্দুক ও তরবারিধারী সৈন্য নিয়ে নারকেলবাড়িয়া উপস্থিত হন। পরে বশিরহাটের দারোগা সিপাই-জমাদার নিয়ে তার সাথে মিলিত হয়। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অনেক লোক হতাহত হয়। ১৪ নভেম্বর তিতুমীরের লোকজন মোটা বাঁশের মজবুত খুঁটি দিয়ে বেষ্টনী তৈরি করেন। ইতিহাসে এটা ‘তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা’ নামে পরিচিত।
কর্নেল স্টুয়ার্ড তিতুমীরের হুজরার প্রধান দ্বারে পৌঁছে রামচন্দ্রকে বলল, ‘তিতুকে বলুন, তিতুমীর যেন আমার কাছে আত্মসমর্পণ করে। অথচ ধূর্ত রামচন্দ্র তিতুমীরকে বলল, ‘কোম্পানি সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে এখন জপমালা ধারণ করেছেন। আসুন, তরবারি ধারণ করে বাদশার যোগ্য পরিচয় দিই।’ শুনে তিতুমীর বললেন, ‘আমি কোম্পানি সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিনি। জমিদার-নীলকরদের অত্যাচার দমনের চেষ্টা করছি মাত্র।’ অথচ রামচন্দ্র স্টুয়ার্ডকে বলল, ‘হুজুর, তিতুমীর আত্মসমর্পণ করবে না, যুদ্ধ করবে। সে বলে, সে তোপ ও গোলাগুলির তোয়াক্কা করে না। সে নাকি এই দেশের বাদশা। রামচন্দ্র আগুনে ঘি ঢেলে দিলো। মেজর স্কটের সুশিক্ষিত ইংরেজ সৈন্যের ভারী কামানের গুলির সামনে লাঠি আর সড়কি নিয়ে কতক্ষণ টিকে থাকা যায়? তথাপি তিতুমীর, গোলাম মাসুম ও তার লোকজন শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়াই করে ২৫০ জন আহত হন এবং ৫০ জনের সাথে সাইয়েদ নেছার আলী তিতুমীর ১৮৩১ সালের ১৯ নভেম্বর ৪৯ বছর বয়সে শাহাদত বরণ করে ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে রইলেন।