বেলায়েত বাবলু ।।
২৭ জুন। দক্ষিণাঞ্চলের সাহসী সাংবাদিক ও জাতীয় দৈনিক ইত্তেফাকের বরিশাল অফিস প্রধান লিটন বাশারের মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১৭ সালের এইদিনে সকলকে কাঁদিয়ে তিনি না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। মরহুম লিটন বাশার সাহসী সাংবাদিকতার পাশাপাশি একজন দূরদর্শী সম্পন্ন সাংবাদিক নেতাও ছিলেন। তিনি বরিশালের ঐতিহ্যবাহী শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নেতৃত্ব দেয়ার পাশাপাশি তাঁর নেতৃত্বগুণে অনেকেই ক্লাবের নেতৃত্ব দিতে পেরেছেন। তাঁকে বরিশাল প্রেসক্লাবের নির্বচনের বিজয়ের মহানায়ক অথবা বিজয়ের নেপথ্য নায়ক হিসেবে সকলে অভিহিত করতেন। তিনি নির্বাচনে যে প্যানেলের দায়িত্ব নিতেন সেই প্যানেলের বিজয় অনেকটা সুনিশ্চিত এটাই মানতো সবাই। ২০১৭ সালের নির্বাচনে সাহস করেই তিনি সভাপতি পদে প্রার্থী হয়েছিলেন। তিনিসহ তাঁর প্যানেলের ১৭ জনকে বিজয়ী করতে তিনি নির্বাচনের মাঠে নেমে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলেছিলেন। মাত্র ১ ভোটে তিনি পরাজিত হলেও তাঁর নেতৃত্বের গুনে প্যানেলের ১৩ জন বিজয়ের স্বাদ গ্রহণ করেছিলেন। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হচ্ছে অন্যকে জিতাতে তিনি ছিলেন অনেক পারদর্শী। আমাকে তিনি একবার বলেছিলেন এবার তুই জিততে পারবিনা, আমি কিন্তু সেবার হেরেছিলাম। আবার তিনি দায়িত্ব নিয়েছিলেন বলেই আমি অল্প বয়সে ভোটের মাধ্যমে সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হয়ে তাঁর উত্তরসূরি হতে পেরেছিলাম। লিটন বাশার পেশাদার সাংবাদিকদের সংগঠন বরিশাল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদকেরও দায়িত্বে ছিলেন কয়েকবছর। তাঁর সময়ে সংগঠনের কার্যক্রমে গতি ফিরে এসেছিলো। অভিভাবকের ন্যায় তিনি অনেক সাংবাদিককে আগলে রেখেছিলেন।
আমি ২০১৭ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পর তিনি আমার চিকিৎসার সকল দায়িত্ব নিয়েছিলেন। আমাকে ঢাকায় নিয়ে সুস্থ করে বরিশাল নিয়ে এসেছিলেন। এর দুই মাসের মধ্যেই তিনি আকস্মিক না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। সাংবাদিক লিটন বাশার আমিসহ অনেকেরই অভিভাবকতূল্য ছিলেন। তিনি সহজেই মানুষদের আপন করে নিতে পারতেন। তাঁর কারণে অনেক অনুষ্ঠানই হয়ে উঠতো প্রাণবন্ত। লিটন বাশার কয়েকটি পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্বে ছিলেন। বরিশাল প্রতিদিন, ভোরের আলো ও দখিনের মুখ তার মধ্যে অন্যতম। বরিশালের অন্যতম মাসিক পত্রিকা আনন্দ লিখনের সাথেও যুক্ত ছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন তিনি বরিশালের অন্যতম নাট্য সংগঠন প্রজন্ম নাট্যকেন্দ্রের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় তিনি সবসময় ছিলেন অগ্র সৈনিক। এর জন্য তাঁকে নির্যাতনের শিকারও হতে হয়েছে। তবুও তিনি সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষার ব্যাপারে কখনো পিছপা হননি। সময়ের বির্বতনে তিন বছর হলো লিটন বাশার আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। তাঁর এই চলে যাওয়ায় আমার মতো অনেকেই অভিভাবক শূন্য হয়েছেন। তিনি না ফেরার দেশে চলে গেলেও আজো শ্রদ্ধার সাথে তাঁর নাম উচ্চারিত হয়। অনেকেই আফসোস করে বলে থাকেন আজ যদি লিটন ভাই বেঁচে থাকতেন…। মৃত্যুবার্ষিকীর এই দিনে লিটন বাশারকে শ্রদ্ধাবনত চিত্তে স্মরণ করি। দয়ালু সৃষ্টিকর্তা তাঁকে জান্নাতবাসী করুন এই দোয়া করি।
এভাবেই বরিশাল প্রেসক্লাবের প্রতিটি কাজে সাংবাদিকদের মধ্যমণি হয়ে সকলকে নিয়ে কাজ করতেন সাংবাদিক লিটন বাশার।
বেলায়েত বাবলু : সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বরিশাল সাংবাদিক ইউনিয়ন।