সুয়েজ করিম ||
সাহিত্য সম্পাদক ইমতিয়াজ রুবেলের মুঠোফোন একনাগাড়ে বেজেই চলেছে। সকালে ঘুম থেকে উঠে রুবেল তখন শৌচাগারের আনুষ্ঠানিকতায় ব্যস্ত ছিলেন। সে অবস্থায়ই দ্রুত ফোন রিসিভ করতে বের হয়ে আসেন। ফোন রিসিভ করে সালাম বিনিময় শেষে জিজ্ঞেস করলেন – কে বলছিলেন প্লিজ?
– ভাইয়া, আমি কাব্য মরটিন বলছি।
‘কাব্য মরটিন’ নামটি শুনে রুবেলের মধ্যে বাড়তি আগ্রহের সৃষ্টি হল। জানতে চাইলেন এটা কী আপনার আসল নাম?
– না ভাইয়া, আমার আসল নাম মতিন। ব্যতিক্রমী ও আধুনিকতার মিশেলে নিজেই নামটিকে মরটিনে সংস্কার করেছি। আর আমি কবিতাকে মনে প্রাণে ওষ্ঠে ধারণ করার জন্য নামের সদর দরজায় কাব্য জুড়ে দিয়েছি।
– ওহ! তাই। এখন কী জন্য ফোন করেছেন?
– ভাইয়া, আমি সাহিত্য পাতার ইমেইলে প্রায় ছয় ডজন কবিতা প্রেরণ করেছি একটি কবিতাও আলোর মুখ দেখেনি। আর কবিতাগুলোও বিশ থেকে ত্রিশ লাইনের মধ্যে। যদি দয়া করে দেখতেন।
– হয়তো মানসম্মত হয়নি তাই আলোর মুখ দেখেনি। আর সাহিত্য পাতার জমিন খুব ছোট তাই ছোট কবিতা পাঠায়েন, দেখবো।
ইদানিং ইমতিয়াজ রুবেল সাহিত্য সম্পাদকের দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে নবীন লেখকদের কাছে তিনি একজন সেলিব্রিটি। ফেসবুকের ফলোয়ার সংখ্যা হু হু করে বেড়েই চলেছে। কোনো কিছু পোস্ট দিলে মুড়ির মতো লাইক কমেন্টে ছেয়ে যায়। ম্যাসেঞ্জারে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট একসেপ্ট করার অনুরোধ আসে। সেই সাথে নবীন লেখকরা লেখা পাঠিয়ে ম্যাসেঞ্জারে নক করে, কিছুদিন যেতে না যেতে লেখাটি ছাপা হবে কী না তা জানতেও আবার নক করে। রুবেল কারো রিপ্লাই দেয় বা দেয় না। কিছুদিন এসব বিষয় ভালোভাবে উপভোগ করলেও এখন মাঝেমধ্যে বিরক্ত আসে তবে তা অপ্রকাশ্য। নবীন লেখকদের এই উৎপাত যে ভার্চুয়াল তা নয়, সেদিন পত্রিকা অফিসে বিকেল বেলা যখন সম্পাদনার কাজে মহা ব্যস্ত তখন একজন নবীন লেখিকা তাঁর সামনে হাজির। রুবেল তাঁর কাজ খানিকটা বিরতি দিয়ে তাকে সময় দিলেন। প্রথমে নাম জানতে চাইলেন। উত্তরে সে বলল- আমার নাম জরিনা শাখাওয়াত হোসেন।
রুবেল জিজ্ঞেস করল – আপনার স্বামীও কী লেখক?
– আরে না! আমি সিংগেল।
– তাইলে নামের শেষাংশে শাখাওয়াত হোসেন সে কে?
– ওহ! আমি বেগম রোকেয়া শাখাওয়াত হোসেনের খুব ভক্ত। তার মতো হতে চাই। তাই তার নামের শেষাংশ আমার নামের সাথে ধারণ করেছি।
ইমতিয়াজ রুবেল লেখিকার লেখা ছাপানোর আশ্বাস প্রশ্বাস দিয়ে তাকে শুভ বিদায় জানালেন । এবার সাহিত্য পাতার মেইলে চোখ নিবিষ্ট হলো তাঁর। দেখলেন ছররা গুলির মতো শত শত কবিতা ঝাঁকে ঝাঁকে এসে ইনবক্স পরিপূর্ণ হল। দীর্ঘ সময় তা পাঠ করতে করতে মেইলের উপরই ঘুমিয়ে পড়লেন। এই কবিতার মহাসমুদ্র সেচে চার থেকে পাঁচটিকে মনোনীত করা খুব কষ্টসাধ্য ব্যাপার। মাঝেমধ্যে লেখা ছাপা না হওয়া লেখকদের বাংলা গালাগালের স্বাদ নিরবে আস্বাদন করেন। তার সাথে আছে কোমল হুমকি ধামকিও। ম্যাসেঞ্জারে আদি বাংলা গালাগাল ভয়েস রেকর্ড করে অনেক বঞ্চিত লেখকরা ফেইক আইডি থেকে পাঠিয়ে থাকেন। তাঁরা মনে করেন যাদের লেখা ছাপা হয় উনারা সম্পাদকের শালা – শালি টাইপের কেউ হবে।
রাত বারোটা বাজে। রুবেল তাঁর স্ত্রী সহ শুয়ে আছেন। হঠাৎ ম্যাসেঞ্জারে অডিও কল। রুবেল কল রিসিভ করতে চাইলেন না। এতে তাঁর স্ত্রীর ভেতরে সন্দেহের অগ্নুৎপাত শুরু হয়। স্ত্রী রুনা বেগম নিজেই ফোন রিসিভ করে বসলেন। অপর প্রান্তে মেয়ে কন্ঠে ভেসে উঠলো, ‘ভাইয়া ওইযে সেদিন অফিসে গিয়েছিলাম আমি সেই জরিনা শাখাওয়াত হোসেন। আমার লেখাটা কবে ছাপা হবে সেই চিন্তায় ঘুম আসে না তাই একটু জানতে চাওয়ার জন্য ফোন দিয়েছি।’ রুনা বেগম উত্তরে বললেন, ওহ! তাইলে আপনি নিয়মিত অফিসেও যাতায়াত করেন তাই না! এ কথার পরপরই ফোনের লাইন বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলো। রুবেলের উপর তাঁর স্ত্রীর মুখ থেকে অতর্কিত শব্দ হামলা শুরু হয়। এক পর্যায়ে রুবেলকে তাঁর স্ত্রী বলল, ‘আমার কোনো কবিতা তোমার পত্রিকায় ঠাঁই হয় না কেন আজ বুঝলাম।’ রুবেলের স্ত্রী রুনা বেগমও একজন কবি। সেদিন স্ত্রীর কবিতা ছাপানোর শর্তে ইমতিয়াজ রুবেল কোনরূপ রক্ষা পেল।