পশতুন গ্রামগুলোয় একটি প্রচলিত শ্রুতি হচ্ছে, পাগড়ি পরার মাধ্যমেই প্রতিটি ছেলে কৈশোর থেকে যৌবনে পা দেয়।
ভৌগোলিকভাবে আফগানিস্তানের অবস্থান দক্ষিণ এশিয়া এবং মধ্য এশিয়ার (বা মধ্যপ্রাচ্যের) সংযোগস্থলে। যে কারণে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বিভিন্ন সংস্কৃতি এবং জাতিসত্তার সমাবেশ ঘটেছে এই ভূখণ্ডে। আফগানিস্তানজুড়ে বিরাজমান আকর্ষণীয় টুপি ও পাগড়িগুলোর দিকে তাকালেই এর প্রমাণ পাবেন আপনি।
আফগানিস্তানে টুপি বা পাগড়ি শুধু মাথা ঢাকার পোশাক না। একজন ব্যক্তির সামাজিক অবস্থান এবং তিনি দেশের কোন অংশ থেকে এসেছেন বা কোন জাতিগোষ্ঠীর অন্তর্গত, তা-ও নির্দেশ করে এই টুপি-পাগড়ি।
উদাহরণস্বরূপ, উজবেক টুপি দেখতে গোলাকার এবং উপরে সমতল। রঙিন পশমি সুতোয় কারুকার্য করা এই টুপি মাথায় আঁটসাঁটভাবে পরা হয়। মাজার-ই-শরীফ, ফারিয়াব এবং জাওজানের মতো উত্তরাঞ্চলের আফগানদের মাথায় এই টুপি দেখা যায়।
আফগানিস্তানের সবচেয়ে বড় জাতিগত গোষ্ঠী, পশতুনরা মূলত কালো পাগড়ি পছন্দ করে। ক্ষমতাসীন তালেবানের সিংহভাগ সদস্যই পশতুন, যে কারণে তাদেরকে এমন কালো পাগড়ি পরতে দেখা যায়।
একটি টুপির উপর শক্তভাবে মোড়ানো এই পাগড়ির পিছনে লেজের মতো একটি অংশও থাকে। পশতুন গ্রামগুলোয় একটি প্রচলিত শ্রুতি হচ্ছে, পাগড়ি পরার মাধ্যমেই প্রতিটি ছেলে কৈশোর থেকে যৌবনে পা দেয়।
দক্ষিণ কান্দাহারে তরুণ যুবারা এক ধরনের পাতলা টুপি পরে থাকেন, যেটির কপালের অংশটায় হালকা ফাঁকা থাকে। আর বয়স্ক পুরুষরা (বিশেষ করে কৃষকেরা) পাগড়ি এবং হাজি রুমাল পরতে পছন্দ করেন।
কিছু গ্রামীণ এলাকায় আফগান মহিলারাও তাদের শালের উপর বা নীচে এমব্রয়ডারি করা টুপি পরেন।
তাজিকদের মাথায় দেখা যায় ‘পাকোল’ নামের এক ধরনের টুপি। ভেড়ার পশম দিয়ে বানানো এই টুপির চারপাশে মোটা রোল থাকে। শীতকালে মাথা উষ্ণ রাখতে সাহায্য করে এই টুপি।
প্রয়াত তালেবান-বিরোধী কমান্ডার আহমদ শাহ মাসুদ এই টুপির প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন। তিনি (এবং পানশির উপত্যকায় তার যোদ্ধারা) মাথার পিছনের দিকে পরতেন এই টুপি।
সামাজিক অনুষ্ঠানের মধ্যে বিয়ের জন্য আলাদা টুপি রয়েছে আফগানিস্তানে। বিয়ের অনুষ্ঠানে বর সাধারণত ‘গিলগিট টুপি’ পরেন। এই টুপি অনেকাংশে পাকোলের মতোই। তবে এতে একরকম অভিজাতের ছোঁয়া আছে। দামী কাপড়ের এই টুপির সামনে একটি পালকও লাগানো থাকে।
আফগানিস্তানে প্রচলিত টুপিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন টুপি হচ্ছে কারাকুল। মেষশাবকের পশম দিয়ে তৈরি এই টুপি পাকিস্তানে ‘জিন্নাহ টুপি’ নামে পরিচিত। কারণ, পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ জনপ্রিয় করেছিল এই টুপি। তবে কাবুলে এই টুপি জনপ্রিয় করেছেন দেশটির সাবেক রাষ্ট্রপতি হামিদ কারজাই।
সূত্র: আল জাজিরা।