পুনর্মিলনী থেকে ফিরে

মোহাম্মদ নূরুল্লাহ :

বারান্দার বেলী ফুল গাছটা মরেই গেছে বলে ধরে নিয়েছিলাম, কিন্তু না; বাংলা বিভাগের পুনর্মিলনী

থেকে ফিরে দেখি – নবপল্লবে কিশলয়গুলো হারানো
জীবন ফিরে পেয়ে আবার ফুরফুরে মেজাজে।
নয়নযুগল সরাতে পারে না দৃষ্টি !
ও যেন কী বলতে চায়।
শত জনমের না বলা কথাগুলো আজ ও বলবে।
কর্ণযুগল অধীর আগ্রহে মনোনিবেশ করে কোন কথা যেন হারিয়ে না যায়।

বাংলা বিভাগের ভালোবাসার বৃক্ষটি রোপিত হয়েছিল বাহাত্তরের কোন এক ভোরে।
বাইশে এসে বেলী ফুল গাছটির মতো তরতাজা হয়ে উঠেছে তেইশে ডিসেম্বরে।

সুদীর্ঘ পঞ্চাশটি বছর পার করেছে অনেকটা বহতা নদীর মতো খড়কুটা কচুরিপানা ওকে আটকাতে পারেনি।

উজ্জ্বল, অত্যুজ্জ্বল ইতিহাস নির্মাণ করেছে স্বীয় প্রতিভার স্বাক্ষর দিয়ে।
আবেগে উদ্বেলিত কবি নয়ন,পথিক, খৈয়াম,মামুন, শুভেন্দু,রোমান,
শামীম,বাবু,মুন্নী, শীলা বড়ুয়া বয়সের ব্যবধান ভুলে
বাংলা বিভাগের শাখা প্রশাখাকে করে তুলেছে মুখরিত।

ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।

উৎকণ্ঠিত আবেগে অনেকেই দিশেহারা ;
কী বলবো! বলার কিছুই নেই ।

হারানো সন্তান ফিরে পাওয়া মায়ের মতো।

মা কি কখনো সন্তানকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলে:
“বাবা আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।”

অনেকটা এমন ছিল বাইশের তেইশে ডিসেম্বর।

পৌষমাসের ঠান্ডা এ সকালে আমি ফিরে গিয়েছিলাম উনিশ শ ছিয়ানব্বই সালের বদিউর রহমান স্যারের নাস্তা না খাওয়া সাড়ে আটটার ক্লাসে।

বন্ধুদের সাজ সকালে দেখতে পাব এ আশায় ,
অধীর আগ্রহ নিয়ে ছুটে যাই প্রিয় ক্যাম্পাসের পানে।
হতাশ করেনি বন্ধুরা । শ্মশ্রুমন্ডিত দীনারকে চিনতে একটুও ভুল হয়নি আমার !

আমি সম্বিত ফিরে পাই বেলী গাছটির মতো।

বেঁচে থাকার সার্থকতা খুঁজে পাই বন্ধুদের আলিঙ্গনে।
না বলা কথাগুলো আর বলা হলো না।

দীর্ঘ দিনের বিরহ কাটিয়ে মিলনের এ সার্থকতা
সত্যিই আদম সন্তানকে পিতা আদম ও হাওয়ার কথা
মনে করিয়ে দেয়।

শতফুলের মালা গেঁথে বাদশা,আযাদ আমাদের চির ঋণী করলে ।
তোমাদের এ ঋণ শোধিবার নয়।

আল্লাহ তোমাদের ভালো রাখুন,হৃদয়ের সবটুকু উজার করে করে যাই এ দোয়া।
কলি,পাপড়ি,মলি,মুজিব,হিমু, বাচ্চু ,বুশরা,খায়ের
আর যতো বন্ধুরা তোমরা আমারই ছিলে,আছো ,থাকবে।
যদি চলে যাই ওপারে দোয়া মাগিও প্রভুর কাছে এ
অধমের তরে।

হৃদয় আজি মোর খুলেছে দোর,
আবার আসিবে এমন একটি ভোর।
যেদিন মিলিব সকলে সকলের তরে।

অনুচ্চারিত নামের বন্ধুরা নিওনা কষ্ট একটুও মনে।
আমি তোমাদের মাঝে থাকতে চাই অযুত বর্ষ ধরে।

তারপরও আফছোছ থেকে যাবে,
যারা আসতে পারে নি এ সম্মিলনে তাদের তরে।
যুদ্ধে গিয়ে হারিয়ে যাওয়া সন্তানের মতো।
যুদ্ধশেষে যে ফেরেনি ঘরে!

বিমল স্যার, নুরুল আমিন স্যার যে স্নেহের
আতিশয্যে আলিঙ্গন করলেন, তাতে আত্মতৃপ্তি
পেয়েছি স্যারদের শিষ্য হতে পেরে।
দেবাশীষ স্যারতো সিনিয়র কলিগ হওয়া সত্ত্বেও আমাকে নিলেন আপন করে;
স্মৃতির পাতা থেকে আমাকে নিয়ে গেলেন দুই হাজার বারো শালের কয়েকটি ভোর, দুপুর আর বিকেলের চায়ের আড্ডার টেবিলে ,

আই ই আরের করিডোরে,
ক্লাসরুমে।
শ্রদ্ধেয় মরহুম মিজান স্যারের প্রসঙ্গটিও বাদ পড়ে নি
আলোচনা থেকে।
বিএম কলেজে অধ্যয়ন করেছি, অধ্যাপনা করিনি,
ফেরদৌসী, দেবাশীষ স্যার আমাকে কী যেন স্বপ্ন
দেখালেন না বলা কথার মাঝে!

হে বিভাগ আমার!
দক্ষিণ বঙ্গের মহীরূহ হয়ে জগতকে করে যাও আলোকিত।
এ আশা রেখে আবারো দেখা হবে পৌষের কোন এক ভোরে!
কবিরা লিখবে কবিতা, কথাসাহিত্যিক লিখে যাবে গল্প, উপন্যাস।
গবেষক করবে গবেষণা। তোমাকে ঘিরে প্রিয় বিদ্যাপীঠ আমার !

অক্ষত অমলিন থাকো চিরদিন।

মোহাম্মদ নূরুল্লাহ
ছায়ানীড়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *