বরেণ্য মনীষী জাতীয় অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসান

আযাদ আলাউদ্দীন ।।

২০০২ সালের ২৫ জুলাই প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক, সম্পাদক, অনুবাদক ও জাতীয় অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসান ইন্তেকাল করেন। তিনি ১৯২২ সালের ২৬ মার্চ মাগুরা জেলার আলোকদিয়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।

ঢাকার আরমানিটোলা সরকারি হাইস্কুল থেকে এন্ট্রান্স এবং ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ (বর্তমানে ঢাকা কলেজ) থেকে এফএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে ১৯৪৩ সালে স্নাতক এবং ১৯৪৪ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। যথাক্রমে ‘অল ইন্ডিয়া রেডিও’ কলকাতা কেন্দ্রে এবং ‘রেডিও পাকিস্তান’ ঢাকা কেন্দ্রে কর্মসূচি নিয়ামকরূপে চাকরি করেছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে লেকচারার হিসেবে যোগ দেন ১৯৪৯ সালে। ১৯৫৩ সালে সৈয়দ আলী আহসান করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান নিযুক্ত হন। ১৯৬০ সাল থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত বাংলা একাডেমির পরিচালক (প্রধান নির্বাহী) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন বাংলা বিভাগের প্রফেসর ও অধ্যক্ষ হিসেবে। আলী আহসান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন এবং ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক হিসেবে ভূমিকা পালন করেন ‘চেনাকণ্ঠ’ ছদ্মনামে।

১৯৭২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন। এরপর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার যোগ দিলেও ১৯৭৫ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

১৯৭৭-৭৮ সালে সরকারের শিক্ষা, সংস্কৃতি, ক্রীড়া ও ধর্ম সম্পর্কিত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের উপদেষ্টা ছিলেন। নোবেল কমিটির সাহিত্য শাখার উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন ১৯৭৬ সাল থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত। ১৯৮৯ সালে জাতীয় অধ্যাপক এবং সে বছরই বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। শেষ বয়সে দারুল ইহসান ইউনিভার্সিটির ভিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ :

কাব্যগ্রন্থ : অনেক আকাশ, একক সন্ধ্যায় বসন্ত, সহসা সচকিত, উচ্চারণ, আমার প্রতিদিনের শব্দ। প্রবন্ধ গ্রন্থ : বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত (আধুনিক যুগ) [মুহম্মদ আবদুল হাইয়ের সাথে], কবিতার কথা, কবিতার কথা ও অন্যান্য বিবেচনা, আধুনিক বাংলা কবিতা : শব্দের অনুষঙ্গে, রবীন্দ্রনাথ : কাব্য বিচারের ভূমিকা, মধুসূদন : কবিকৃতি ও কাব্যাদর্শ। আধুনিক জার্মান সাহিত্য। সম্পাদিত গ্রন্থ : পদ্মাবতী , মধুমালতী। অনূদিত গ্রন্থ : ইকবালের কবিতা, প্রেমের কবিতা, ইতিহাস। এ ছাড়াও বেশ ক’টি বই লিখেছেন।

পুরস্কার ও সম্মাননা : বাংলা একাডেমি পদক, দাউদ পুরস্কার (মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে প্রত্যাখ্যান), বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক একুশে পদক, মধুসূদন পুরস্কার, স্বাধীনতা পুরস্কার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *