বর্ষার দূত কদম ফুল

সাকী মাহবুব ।।
ষড়ঋতুর লীলাক্ষেত্র আমাদের এ বাংলাদেশ। ঋতুচক্রের আবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যায় এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ। ফুলে ফুলে সুশোভিত হয়ে ওঠে এদেশ। কত রকমের ফুলই না ফোটে এখানে।বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রাচুর্য, পাহাড় বেষ্টিত সবুজ মেঘলা, অরণ্যময় প্রকৃতি নানা ফুল উৎপাদনের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। প্রত্যেক ঋতুতেই তার বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী ফুল উপহার দিয়ে থাকে। রিমঝিম বর্ষায় ফোটে সুদৃশ্য কদম ফুল। গ্রীষ্মের  প্রখরতা দমাতে যখন মিষ্টি আম আর সুস্বাদু কাঁঠালের ম  ম ঘ্রাণে মুখর চারপাশ, ঠিক সে সময় আষাঢ়ে ঝরো ঝরো বাদলের দিনে আগমন ঘটে কদম ফুলের।
তাইতো বৃষ্টির অবিরাম বর্ষনের সঙ্গে সহসাই ভেসে আসে কদম ফুলের রেনুর মিষ্টি সুবাস। এদেশে কদম আর বর্ষা একে অপরের আলিঙ্গন করে রয়েছে বহুকাল  ধরে। এ জন্যই কদম ফুলকে বলা হয় বর্ষার দূত।
বর্ষার বাতাসে ভেসে আসা কদমের গন্ধ মনকে আকুল করে তোলে। বর্ণে গন্ধে এ গাছটি বাঙালির খুব প্রিয়।কদম গাছ ও ফুলের পরিচিতিতে জানা যায়, কদম গাছ বেশ উচু  হয় এবং এর বহু শাখা প্রশাখা থাকে। ডাল সোজা। বাকলের রং ধূসর থেকে প্রায় কালো। পাতা বেশ বড় ও ডিম্বাকৃতির। রং উজ্জ্বল সবুজ। আর ফুলের রং সাদা-হলুদে মেশানো। আমরা যাকে ‘কদম ফুল’ বলি তা আসলে বহু ফুলের সমষ্টি। বলের মতো গোল, মাংসল পুষ্পাধারে অজস্র  সরু সরু ফুলের বিকীর্ণ বিন্যাস অতি চমৎকার। সব মিলিয়ে সোনার বলের মতো ঝলমলে। বর্ষার মেঘের সাথে কদম ফুলের মিতালি বলে অনেকে  এর নাম দিয়েছে মেঘাগমপ্রিয়।
আর নারীর সৌন্দর্যের সঙ্গে  তুলনা করে অনেকেই বলে ললনাপ্রিয়। এ গাছের আদি নিবাস বাংলাদেশ, ভারত ও চীন। কদম হলুদ, সোনালি  বা লাল রঙের হয়। তবে লাল কদম দূর্লভ। জুন থেকে আগস্ট মাসে ফুল ফোটে।
বাংলা সাহিত্যের একটি বিশাল অংশ জুড়ে রয়েছে কদম ফুলের আধিপত্য। কদম ফুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে বাংলা সাহিত্যের নোবেলজয়ী কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন-
‘বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল করেছে দান
আমি দিতে এসেছি শ্রাবনের গান।’
কদমের এ মুগ্ধকর রূপের কারণে একে যুগে যুগে কবিরা তাদের কবিতা ও গানের মাঝে অলংকার হিসেবে সাজিঁয়েছেন। তাইতো পল্লি কবি জসীম উদ্দীনের সেই বিখ্যাত গানের কথা মনে পড়ে–
‘প্রাণ সখীরে
ওই শোন কদম্ব ডালে
বংশী বাজায় কে?
বংশী বাজায় কে রে সখী
বংশী বাজায় কে
আমার মাথার বেণী বদল দেবো
তারে আই না দে।’
সহজ কথায় বলা যায়  আদিকাল থেকে কদম ফুল বর্ষার প্রকৃতিকে রাঙিয়ে যাচ্ছে। কদম ফুল ছাড়া বর্ষা যেন একেবারে একা, নি:সঙ্গ। আর তাই প্রকৃতির ঐতিহ্য রক্ষায় অনন্য গাছের পাশাপাশি কদম গাছও রোপন করা জরুরি।
সাকী মাহবুব, সহকারি শিক্ষক, নাদির হোসেন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়,
                     গ্রাম +পোস্ট: কশবামাজাইল, পাংশা, রাজবাড়ী।
তথ্যকোষ:
১. উচ্চতর বাংলা ব্যাকরণ ও রচনা অধ্যাপক নিরন্জন অধিকারী ও অধ্যাপক ড. সফিউদ্দীন আহমদ
২. নাগরিক সংবাদ ২৩ জুন২০২২
৩. দৈনিক সমকাল ১৬ জুলাই ২০২২
৪. দৈনিক নয়াদিগন্ত ৩০ জুন ২১
৫. বাংলা ট্রিবিউন ১৯ জুন ২০২১
৬. সিলেটের ডাক ১২ অক্টোবর ২০২১

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *