হুমায়রা সুরভি ।।
তোমার বিষন্নতা তোমার নিজের বাগানে চিরটাকাল ফুল ফোটাবে
ভাবছো নাকি অন্তহীন দয়ার সুকোমল হাত জল সেচে
বিষন্নতার বিরাণ প্রান্তরে ছেয়ে দেবে বৎসন্ন আকাশ !
কল্লোলিত তারার চাদরে জ্যোৎস্নার প্লাবনে
কে তোমার সাথী হবে হাস্নাহেনার সুবাস সন্ধানে !
জোনাকের নাচ কিংবা ছায়াপথে নক্ষত্রের ছুটোছুটি
দেখার সময় কারো নেই
তোমার একলা রাতে জাগার সাথী কেউ নেই।
তোমার কবিতার আনন্দ-সমুদ্রে সাঁতার কাটবে কে? বলো !
সংসার মানে আগামীর সঞ্চয়ের সুখ
হিসেব-নিকেশ, লাভ-ক্ষতি, জোড়াতালি।
তোমার কবিতার জমিন অকর্ষিত রয়ে যাবে সেখানে
তোমার একটু ভাবনা বিলাস
এক লাল টিপ স্বপ্ন
তৃষ্ণার্ত বসন্তে একরাশ কোকিলের গান
কারো বুকের অঙিনায় একচিলতে পদচ্ছাপও রাখবে না
তোমার ভিতর যে বিষন্নতার আদ্র নগর
সেখানে বসে কবিতার আবাদ হোক তোমার একক হাতে
সেই তোমার সাতরঙা আসমান
তোমার একলা রাতের পরম সাথী।
অধরা মাধূরী চিরকাল অধরাই রবে
যদি না তারে খুঁজে নাও কবিতার বাঁধনে।
তথ্যসূত্র:
বোরহানউদ্দিন সাহিত্য একাডেমির প্রকাশনা সাহিত্য পত্রিকা ‘উৎস’ প্রথম সংখ্যা।
সম্পাদক: আযাদ আলাউদ্দীন প্রকাশকাল: ২০০১
কবি পরিচিতি
কবি হুমায়রা সুরভি ১৯৬৯ সালের ১৮ জুলাই ভোলা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মাহবুবুর রহমান চৌধুরী ভৈরবগঞ্জ ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার ইংরেজির অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। মা কাজী আরজমুান আরা। বাড়ি ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার টবগী ইউনিয়নের মুলাইপত্তন গ্রামে। দক্ষিণ হাসান নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তার শিক্ষা জীবন শুরু হয়। এরপর ভোলা শহরের মাসুমা খানম বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে থাকাবস্থায় ১৯৮২ সালে আবদুল্লাহ আল মামুন খসরু সম্পাদিত সাহিত্য পত্রিকা ‘অনির্বান’ এ তার প্রথম লেখা গল্প প্রকাশিত হয়।
এরপর ১৯৯৮৫ সালে ভোলা সরকারি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়ার সময় দৈনিক বাংলায় তার লেখা ‘নারী দশকের বিস্ময়’ শিরোনামে কবিতা প্রকাশিত হয়। সেবছর জাতীয় মঙ্গলের কবি মোজাম্মেল হকের জন্মশত বার্ষিকী অনুষ্ঠানে ‘শবমেহের’ নামে স্বরচিত কবিতাটি পাঠ করে সবার দৃষ্টি কাড়েন তিনি। ওই অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন কবি নাসির আহমেদ। তিনি কবিতাটি শুনে মুগ্ধ হয়ে সেটি নিয়ে যান। পরবর্তীতে দৈনিক বাংলা পত্রিকায় ‘নারী দশকের বিস্ময়’ শিরোনাম দিয়ে কবিতাটি প্রকাশ করেন।
স্কুল ও কলেজ জীবনে কবি হুমায়রা সুরভি বিভিন্ন জাতীয় দিবসের সাহিত্য সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করে একাধিক পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন। ভোলা জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগার আয়োজিত একুশের সাহিত্য-সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেও তিনি পুরস্কৃত হন।
নেত্রকোনা থেকে প্রকাশিত সাহিত্য পত্রিকা ‘সৃজনী’তে তার ‘অসামান্য আলোকচিত্র’ শিরোনামের কবিতা পড়ে ভূয়সী প্রশংসা করে কবি যতীন সরকার।
ভোলা সরকারি কলেজে গ্রাজুয়েশন করার সময় দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক সংবাদ. দৈনিক বাংলা, দৈনিক জনকণ্ঠসহ বিভিন্ন পত্রিকার সাহিত্য পাতায় কবি হুমায়রা সুরভির একাধিক কবিতা ছাপা হয়েছে।
এছাড়াও সাহিত্য পত্রিকা এবং ম্যাগাজিন বৈভব, উৎস, আহবান, বিহঙ্গ, মুক্তবুলি সহ অনেক লিটল ম্যাগে তার লেখা প্রকাশিত হয়।
কবি হুমায়রা সুরভীর স্বামী শেখ ফরিদ একজন উন্নয়ন কর্মি ও ‘মাইরাইট’ নামক এনজিওর প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর ছোট ভাই কামরুল আহসান চৌধুরী বোরহানউদ্দিন উপজেলার টবগী ইউনিয়নের নির্বাচিত চেয়ারম্যান। ছোটবোন সুবর্ণা ফারহানা চৌধুরীও একজন কবি। তিনি সাম্য ও গল্প নামে দুই সন্তানের জননী।