আযাদ আলাউদ্দীন ।।
জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পদক ২০২৩ প্রতিযোগিতায় ভোলার ০৭ উপজেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষিকার মধ্যে জেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষিকা মনোনীত হয়েছেন মুক্তবুলির লেখক বিবি ফাহিমা (আমেনা ফাহিম)। তিনি ভোলা জেলার দৌলতখান মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
প্রাতিষ্ঠানিক সনদে তাঁর নাম বিবি ফাহিমা। তবে তিনি আমেনা ফাহিম নামেই বেশি পরিচিত। আমেনা ফাহিম একাধারে একজন কবি, গীতিকার, ছড়াকার, গল্পকার ও বাচিক শিল্পী। পেশায় তিনি একজন শিক্ষক ও বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষা পরিবারের গর্বিত সদস্য।
কবি আমেনা ফাহিম এর জন্ম বাংলাদেশেের বৃহত্তম দ্বীপজেলা ভোলার দৌলতখান উপজেলায়। বাবার নাম জাহাঙ্গীর আলম এবং মায়ের নাম জাকিয়া বেগম।
তিন বোন দুই ভাইসহ মোট পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে তিনি প্রথম সন্তান। ছোটবেলা থেকেই সংস্কৃতিপ্রেমী পরিবারে তার বেড়ে ওঠা। মা বাবা দু’জনেই তাকে সকল কাজে উৎসাহ উদ্দীপনা যুগিয়েছেন।
দৌলতখান মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে, দৌলতখান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেন ২০০৪ সালে। ভোলার দৌলতখান সরকারি আবি আবদুল্লাহ কলেজ থেকে এইচএসসি সম্পন্ন করেন ২০০৬ সালে । এইচএসসি পাশের পর মামা মোশাররফ হোসেন সেলিমের কাছে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের জন্যে বাড়ি থেকে চলে যান চট্রগ্রাম। আমেনা ফাহিম এর জীবনের সফলতায় তার মামা সেলিম এর অবদান তিনি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।
চট্রগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজ থেকে অনার্স করে ঢাকা ইডেন কলেজ থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। পরে বিএড ও ডিপিএড প্রশিক্ষণও গ্রহণ করেন।
২০১৪ সালে তিনি তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীনে আইসিটি ট্রেনিং কোর্স সম্পন্ন করেন এবং সার্টিফিকেট অর্জন করেন। চাকুরির পূর্বে তিনি ঢাকায় সেল অ্যান্ড কর্নেল নামক একটি সফটওয়্যার কোম্পানিতে প্রায় দুবছর কন্টেন্ট ডেভলপার পদে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে দক্ষতা ও সুনামের সাথে তিনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার মতো মহান পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন।
তিনি করোনাকালে অনলাইন পাঠদানের জন্য করোনাযোদ্ধা শিক্ষক সম্মাননা পান শিক্ষারআলো ডটকম সংগঠন থেকে। শিক্ষক বাতায়নের একজন নিবেদিত শিক্ষক। মুক্তপাঠ এর বিভিন্ন কোর্সে অংশগ্রহণ করে সার্টিফিকেট অর্জন করেছেন।
তিনি মাইক্রোসফট এডুকেটর সেন্টার এবং উই স্কুল টিচ ফর গুড থেকে মাইক্রোসফট ইনোভেটিভ এডুকেটর সার্টিফিকেট অর্জন করেন। এছাড়াও লিড ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন সহ করোনাকালে দেশ বিদেশের বিভিন্ন সংগঠন থেকে ট্রেনিং গ্রহণ করেন।
শিক্ষক বাতায়ন ও শিক্ষক সংস্কৃতি আয়োজিত যৌথ অনুষ্ঠানে তিনি সেরা আবৃত্তিশিল্পী হিসেবে সম্মাননা পান। ভোলা পিটিআইতে ডিপিএড প্রশিক্ষণকালীন তিনি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে নজরুল সঙ্গীত ও নৃত্যে প্রথম স্থান এবং আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান লাভ করেন।
গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রনালয়ের জাতীয় আর্কাইভস ও গ্রন্থাগার অধিদপ্তরের তিনি একজন নিবন্ধিত কবি। গীতিকার হিসেবে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) প্রকাশিত হয় তার প্রথম গান রুপকথার গল্প। গানটি ভীষণ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
শৈশব থেকেই আমেনা ফাহিম লেখালেখি করেন। ২০১৫ সালের দিকে তার শুভাকাঙ্ক্ষীদের অনুপ্রেরণায় তার লেখা প্রকাশ হতে থাকে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার সাহিত্য পাতায়। তারপর থেকে তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি, থেমে থাকেনি তারা সাহিত্যাঙ্গনে পথচলা, অনেক সাহিত্য গ্রুপ সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্যে তাকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করেন। দেশে বিদেশের অসংখ্য অনলাইন এবং জাতীয় পত্রিকায় তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়েছে এবং হচ্ছে।
কলকাতার বই মেলায় হার্টবিটে কবিতার আনাগোনা নামক একটি যৌথকাব্যে তার ‘ভালোবাসি’ কবিতাটি প্রকাশিত হয় ২০১৮ সালে। ২০১৯ সালেও কলকাতা বই মেলায় হার্টবিটে কবিতার আনাগোনা ২ বইতে তাঁর আরও একটি কবিতা প্রকাশিত হয়। এছাড়া কয়েকটি যৌথ কাব্য এবং ম্যাগাজিনে তার প্রকাশিত হয়েছে অসংখ্য কবিতা।
অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০২২ এ প্রকাশিত হয়েছে আমেনা ফাহিম-এর প্রথম একক কাব্যগ্রন্থ ‘গোধূলীর আত্মকথন।’ বইটিতে ৪৭ টি কবিতা রয়েছে। কবিতায় প্রকৃতি, প্রেম, দেশাত্মবোধ, সমসাময়িক এবং বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে রচিত লেখাগুলো স্থান পেয়েছে। ইতিমধ্যে বইটি পাঠক মহলে স্থান করে নিয়েছে।
খুব শীঘ্রই কলকাতায় প্রকাশিত হতে যাচ্ছে দ্বিতীয় একক ধারাবাহিক কাব্যগ্রন্থ অন্তদর্শন। পাঠকমহল ছুঁয়ে দেখার অপেক্ষায় বইটি।
আমেনা ফাহিম এর লেখা উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হলো- বঙ্গবন্ধু একটি মানচিত্র, আমি সেই মহাকাল, নারী তুমি রক্তাক্ত সেই পতাকা, একটা দ্রোহের কবিতা লিখলাম, আমিও মানুষ ইত্যাদি। আমেনা ফাহিম নারী জাগরণের নতুন প্রেরণা হিসেবে নতুন প্রজন্মের নিকট দায়বদ্ধ।
অভিনন্দন কবি আমেনা ফাহিম। কাব্যিক শুভেচ্ছা। কবিতার মতো শৈল্পিক জগতে আপনার নিরন্তর বিচরণ বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করবে, ভোলা’র মাটি আর মানুষের হৃদয়ে আপনি সতত হয়ে উঠুন অনিবার্য আলোর দিশারী। শুভ কামনা আর অবিরাম ভালোবাসা।