বেলায়েত বাবলু ।।
পাঠক যারা, লেখক তারা- এই দৃপ্ত শ্লোগান নিয়ে পাঁচ বছর আগে বরিশাল থেকে প্রকাশ হওয়া শুরু করেছিলো সাহিত্য নির্ভর ম্যাগাজিন মুক্তবুলি। মাত্র পাঁচ বছর আগে যাত্রা শুরু করা মুক্তবুলি অল্প সময়ের মধ্যে পাঠক ও লেখকদের মধ্যে আলাদা করে জায়গা করে নিতে পেরেছে বলে আমি মনে করি। মুক্তবুলি তাদের প্রকাশনার ভিন্নতার কারণে যেমন অসংখ্য পাঠক সৃষ্টি করতে পেরেছে তেমনি সৃষ্টি করেছে অসংখ্য লেখক।
দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে সংবাদপত্রের সাথে জড়িত থাকার কারণে মুক্তবুলি’র প্রকাশক ও সম্পাদক আযাদ আলাউদ্দীনকে আমার ব্যক্তিগতভাবে অনেক আগে থেকে চেনা ও জানার সুযোগ হয়েছে। একজন সাংবাদিক হয়ে আযাদ আলাউদ্দীন মুক্তবুলির মতো একটি মানসম্মত ম্যাগাজিন নিয়মিত প্রকাশের যে সাহস দেখাচ্ছেন এর জন্য তাকে আমি সাধুবাদ জানাই। পাঁচ বছর পূর্তির এ শুভক্ষণে এর সাথে যুক্ত সকলকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি। আসলে একটি মানসম্মত ম্যাগাজিন প্রকাশনা নিয়মিত অব্যাহত রাখা কতোটা দূরুহ কাজ তা আমিও কম বেশি জানি। তার উপর প্রতি সংখ্যার জন্য বিষয় নির্ধারণ, লেখা সংগ্রহ করা, প্রকাশের ব্যয় ও বিপনন প্রতিটি কাজই অত্যন্ত কঠিন হলেও তা দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে আযাদ আলাউদ্দীন তার মনোভাবাপন্ন কিছু নির্লোভ কর্মি নিয়ে করে যাচ্ছেন।
মুক্তবুলি প্রকাশনার সাথে কারা কারা যুক্ত আছেন? অথবা কারা এর প্রকাশনা ব্যয় বহন করেন? তারা কোন রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাস করেন? -এ প্রশ্ন অতীব গুরুত্বপূর্ন হলেও আমি মনে করি সব কিছুর উর্ধ্বে থেকে মুক্তমনা লেখকদের নিয়ে মুক্তবুলি গত পাঁচ বছর নিয়মিত প্রকাশিত হয়ে সাহসের পরিচয় দিয়েছে। তাদের কোন সংখ্যা পড়ে কেউ বলতে পারবেনা ম্যাগাজিনটি কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠি দ্বারা প্রভাবিত। গত চার বছরে মুক্তবুলি নিরপেক্ষতা বজায় রেখে যেভাবে সংগ্রহে রাখার মতো অনেকগুলো সংখ্যা প্রকাশ করেছে সেই ধারা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে এই আশা করছি।
মুক্তবুলি পাঠকদের রায়ে প্রতি সংখ্যায় সেরা লেখক মনোনীত করে বিজয়ীদের সন্মানিত করে থাকেন। অবশ্যই এটি একটি ভালো উদ্যোগ। তবে এক্ষেত্রে আমার একটি পরামর্শ হচ্ছে চলমান ধারা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি সেরা লেখক নির্বাচনে মুক্তবুলি কর্তৃপক্ষও দায়িত্ব নিতে পারেন। আমার মতামত হচ্ছে, সকল লেখকের লেখাই প্রকাশযোগ্য বিধায় তা প্রকাশিত হয়। পাঠকের রায়ের পাশাপাশি মুক্তবুলি কর্তৃপক্ষ নিজস্ব একটি প্যানেল গঠন করে তারাও সেরা লেখক নির্বাচন করতে পারেন। তা না হলে দেখা যায়, পাঠকের রায় না পেয়ে অনেক ভালো লেখকও বিজয়ী হতে পারেন না। আবার কেউ কেউ একাধিকবার বিজয়ী হয়ে থাকেন তার নিজস্ব দক্ষতার কারণে। আমার মতামতই যে সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য হবে বা এই মতামতই কর্তৃপক্ষের গ্রহণ করতে হবে তা কিন্তু নয়। আমি শুধু চলমান প্রক্রিয়ার সাথে আমার একান্তই নিজস্ব মতামত প্রদান করলাম। বছর শেষে মুক্তবুলি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিতে সেরা লেখকদের অথবা নিয়মিত লেখকদের সন্মানিত করা যায় কিনা ভেবে দেখার জন্য দায়িত্বশীলদের প্রতি আহবান থাকবে। তাহলে হয়তো পাঠক যারা, লেখক তারা এর পাশাপাশি লেখক যারা, সবাই সেরা এই শ্লোগানটিও মুক্তবুলির সাথে যুক্ত হয়ে যাবে।
বিষয় ভিত্তিক লেখার পাশাপাশি সমসাময়িক বিষয়ের উপরও লেখা নিয়মিত প্রকাশ করা যেতে পারে। পাঠক মতামত কলামটি নিয়মিত করার আহবান থাকবে। আমি মূলত পাঠক হিসেবে আমার মতামতগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করছি। যারা লেখক তারা সকলে সৌজন্য সংখ্যা পায় কিনা জানিনা। তবে উচিত হবে- প্রকাশনা অব্যাহত রাখতে যেসকল লেখকদের লেখা প্রকাশিত হয় তারা যেন মাত্র পঞ্চাশ টাকা খরচ করে ম্যাগাজিনটি সংগ্রহ করেন।
এবার একটু ভিন্ন বিষয়ে আলোকপাত করতে চাই। গত দুই যুগেরও বেশি সময়ধরে আমি নিয়মিত লেখালেখি করলেও কবিতা লেখার মতো সাহস আমার ছিলোনা। মুক্তবুলির কারনেই বিগত কয়েকটি সংখ্যায় বিরতিহীনভাবে আমার কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। আমি সাংবাদিকতা পেশায় যুক্ত থাকলেও কখনো কবি হবার চিন্তাও করিনি। আমার লেখা কয়েকটি কবিতা ছেপে মুক্তবুলি আমাকে নতুন করে অন্য এক পরিচয়ে পরিচিত হওয়ার যেমন সুযোগ করে দিয়েছে তেমনি আরো নতুন নতুন লেখা লেখার সাহস ও অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।
মূলত আযাদ আলাউদ্দীনের কারণেই আমার সাথে মুক্তবুলির একটি সর্ম্পক তৈরি হয়েছে। বিশ বছরেরও অধিক সময়কাল ধরে আযাদ আলাউদ্দীনকে চিনি। আমি, আযাদ, সমকালের সুমন চৌধুরী, কালের কন্ঠের রফিক এবং চ্যানেল -২৪ এর কাওসার হোসেন (প্রাচুর্য রানা) এই কজন দীর্ঘদিন ধরে সাংবাদিকতায় যুক্ত থাকার কারণে এবং মানসিক দিক থেকে প্রায় এক হওয়ার কারণে নিজেদের ভালো বন্ধু হিসেবেই জানি।
আপাদমস্তক একজন সাংবাদিক আযাদ জন্মসূত্রে ভোলা জেলার বাসিন্দা হলেও পেশাগত কারণে বরিশালের সাথে তার একটি আত্মিক সর্ম্পক তৈরি হয়েছে। একটি জাতীয় দৈনিক, বন্ধ হয়ে যাওয়া একটি টেলিভিশন চ্যানেলে কাজ করার পাশাপাশি আযাদ বরিশালের একাধিক স্থানীয় দৈনিকে বার্তাসম্পাদক হিসেবে কাজ করেছে এবং এখনো কাজ করে যাচ্ছেন। বয়সের পার্থক্য থাকলেও আযাদ আলাউদ্দীনের সাথে আমার সর্ম্পকটা বন্ধুত্বের। দুজন দুজনকে আপনি করে সম্বোধন করলেও দীর্ঘ পথচলায় আমাদের বন্ধুত্ব গভীর থেকে আরো গভীর হয়েছে বলেই মনে করি।
সাংগঠনিক দক্ষতা সম্পন্ন আযাদ আর আমি একসাথে কোন স্থানীয় দৈনিকে কাজ করার সুযোগ না পেলেও বরিশাল প্রেসক্লাবে আমরা দুজনেই একাধিক সময়ে কার্যকরী সংসদের বিভিন্ন সম্পাদকীয় পদে দায়িত্ব পালন করেছি। অত্যন্ত বিনয়ী হিসেবে সাংবাদিক মহলে পরিচিত আযাদ আলাউদ্দীনকে যতোটুকু চিনি ও জানি তিনি কখনো উচ্চস্বরে কথা বলেছে এমন নজিরও নেই। দেখা হলে সালাম বিনিময়ের পাশাপাশি হাসিমুখে সবার সাথে কথা বলা তার একটি মহৎ গুণ। জীবন জীবিকার প্রশ্নে টিকে থাকার জন্য আযাদ সাতরং সিস্টেমস নামক একটি কম্পিউটার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্নধার হলেও সবার আগে তিনি সাংবাদিকতাকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। যখনই কথা হয় তখনই আযাদের বেশির ভাগ কথা জুড়ে থাকে সাংবাদিকতা নিয়ে।
অত্যন্ত সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে মুক্তবুলি নামক যে ম্যাগাজিন তিনি প্রকাশ করছেন তা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। মাত্র পাঁচ বছর পেরুনো মুক্তবুলিকে যেতে হবে অনেকদূর। আর কঠিন এ কাজটি সামনে থেকে আযাদকেই সম্পন্ন করতে হবে।
মুক্তবুলি পরিবারের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে স্বকীয়তা বজায় রেখে তারা যেন সবসময় নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে নতুন নতুন বিষয় ভিত্তিক লেখা পাঠকদের উপহার দেয়। রাজনৈতিক দর্শন যাই হোক না কেন তাদের প্রকাশিত কোন লেখায় তা যেন ফুটে না উঠে। অসংখ্য শহীদদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে পাওয়া আমাদের মহান স্বাধীনতা। যাদের আত্মত্যাগে আমরা পেয়েছি লাল-সবুজের পতাকা তাঁদের বিনম্র চিত্তে স্মরণ করছি। মুক্তবুলি হাটি হাটি পা পা করে এগিয়ে যাক তাদের অভিষ্ঠ লক্ষ্যে এই শুভ কামনা রইলো।
বেলায়েত বাবলু সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বরিশাল সাংবাদিক ইউনিয়ন।