ফিরোজ মাহমুদ ।।
প্রকাশের ধারাবাহিকতায় প্রতিশ্রুতিশীল সাংবাদিক আযাদ আলাউদ্দীনের সম্পাদনায় ‘মুক্তবুলি’র ১৬তম সংখ্যা (মার্চ-এপ্রিল-২০২১) এখন বাজারে। বরাবরের মতো এ সংখ্যাটিও নির্ধারিত একটি বিষয়ের উপর প্রাধান্য দিয়ে সাজানো হয়। এ সংখ্যার নির্ধারিত বিষয় ছিল ‘উদ্যোক্তা’। মূলত একজন ব্যক্তি যখন নিজের কর্মসংস্থান বা আয় উপার্জনের কথা চিন্তা করে কোন চাকুরির বা কারো অধিনস্থ না থেকে নিজে থেকেই কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করার চেষ্টা করে বা পরিকল্পনা শুরু করে তখন তাকে উদ্যোক্তা বলে। ব্যবসায় উদ্যোক্তার উদ্যোগ যখন সফল কিংবা স্বণির্ভর হয়, তখন তাকে বলা হয় ব্যবসায়ী।
যদিও ‘মুক্তবুলির’ ১৬তম সংখ্যাটির মূল প্রতিপাদ্য ‘উদ্যোক্তা’ বিষয়টিকে উপজীব্য করে সাজানো হয়েছে। কিন্তু এ বিষয়টিকে ছাপিয়ে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থান পেয়েছে এ সংখ্যায়। প্রবন্ধ, নিবন্ধ, ফিচার, স্মৃতিকথা, গল্প আর ভ্রমণ কাহিনী নিয়ে নবীন-প্রবীণ যাদের লেখায় এ সংখ্যাটি সমৃদ্ধ তারা হলেন- নূরুল ইসলাম খলিফা, আবদুর রহমান সালেহ, বেগম ফয়জুন নাহার শেলী, আযাদ আলাউদ্দীন, হারুন আল রাশিদ, ফিরোজ মাহমুদ, মো.জিল্লুর রহমান, গাজী মো. তাহেরুল আলম, সাব্বির আলম বাবু, মো. শফিকুল ইসলাম, কাজী আশরাফুল ইসলাম (হাসিব) নীলা আহমেদ, রিতা ফারিয়া রিচি এবং নুরুল আমিন।
এছাড়া যেসব কবিদের ছড়া-কবিতার সরব উপস্হিতিতে এ সংখ্যাটি আলোকিত তারা হলেন- নয়ন আহমেদ, রেদওয়ানুল হক, পথিক মোস্তফা, কাশেম নবী, হুমায়রা সুরভি, এরশাদ সোহেল, সুনিল বরণ হালদার, রাবেয়া কান্তা, মাহবুবুল হক, মোহাম্মদ এমরান, মোহাম্মদ নূরুল্লাহ, সুয়েজ করিম, এনামুল খাঁন, রহমান সোহেল, শাহীন খাঁন, রুকাইয়া সুলতানা মুন, রবীন্দ্রনাথ মন্ডল, সাদা কাঁক (মেহেদী হাসান), শিমুল সুলতানা, মো. তুষার রায়হান, , আশিক আহমেদ, জাহিদুল ইসলাম পলাশ, শাহরিয়ার মাসুম, মো. মোস্তাফিজুর রহমান, সাব্বির আলম বাবু, জিনাত তামান্না, জুবায়ের বিন ইয়াছিন, সাইফ আবদুল্লাহ, এস.এম আকবর ভূঁইয়া, মোহাম্মদ নোমান, এ.এইচ.এম আরিফুল ইসলাম, মো. জাবের আল আব্দুল্লাহ, বেলায়েত বাবলু, বিজন বেপারী ও হেলেন রহমান প্রমুখ।
উদ্যোক্তা বলতে আসলে যা বোঝায় কিংবা উদ্যোক্তার স্বরুপ, বৈশিষ্ট্য এবং গুণাবলী উদঘাটনে এই সংখ্যায় প্রত্যেকেই তার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গীতে সাবলীলভাবে উপস্থাপনের প্রাণান্তকর চেষ্টা করেছেন। কতটা পেরেছেন তা বিবেচনার ভার সম্মানিত পাঠক এবং সূধী সমাজের উপর রাখলাম। তবে সকল লেখকের বর্ননায় একটি বিষয় এখানে স্পষ্ট আর তা হচ্ছে- বর্তমান সময়ে কেবল আমাদের দেশেই নয়, বরং সমগ্র বিশ্বে উদ্যোক্তার ধারনাটি একটি গতিশীল কর্ম প্রক্রিয়ারই অপরিহার্য অংশ। যাকে কেন্দ্র করে অনেক ক্ষেত্রেই নিয়ন্ত্রিত হয় মানুষের জীবন প্রবাহ।
একজন ‘সফল উদ্যোক্তার গুণাবলী’ শিরোনামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক মেধাবী ছাত্র এবং বিশিষ্ট ব্যাংকার মো. জিল্লুর রহমান তার লেখা চমৎকার নিবন্ধে যে সমস্ত গুণাবলী এবং বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোকপাত করেছেন, একজন উদ্যোক্তাকে সফলতার স্বর্ণশিখরে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে তা শতভাগ কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে।
বরিশালে তরুণ উদ্যোক্তাদের মিলনমেলা ‘ভার্চুয়াল থেকে বাস্তবে’ প্রচ্ছদ রচনায় তরুন সাংবাদিক আযাদ আলাউদ্দীন তার অভিজ্ঞতার ঝাঁপি খুলে বরিশালের নবীন কিছু উদ্যোক্তার জিরো থেকে হিরো হওয়া সফলতার গল্প তুলে ধরেছেন অত্যন্ত নান্দনিক উপস্থাপনার মাধ্যমে। তিনি তার ক্ষুরধার লেখনির মাধ্যমে দেখিয়েছেন একজন উদ্যোক্তা কিভাবে নিজের ভাগ্য পরিবর্তনের পাশাপাশি ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে অর্থনীতির চাকাকে গতিশীল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বেশ কিছু উদ্যোক্তার উদাহরণ তিনি তুলে ধরেছেন সুনিপূণভাবে।
আমাদের দেশের শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতীরা কেবলমাত্র সীমিত সংখ্যক কোঠার চাকুরির পশ্চাতে দৌঁড়িয়ে জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সময় নষ্ট করে, বরং চাকুরির পিঁছনে দৌঁড়িয়ে সময় অপচয় না করে নিজের কর্মসংস্থানের জন্য কোন না কোন উদ্যোগ গ্রহণ করলে নিজের কর্মসংস্হানের পাশাপাশি আরো অনেক কর্মহীণ বেকারদের চাকরীর ব্যবস্থা করা খুবই সম্ভব। দেশ-বিদেশের এমন অসংখ্য উদাহরণ আমাদের সামনে রয়েছে। এ কথাটিই নানা ভাবে তুলে ধরেছেন প্রত্যেক লেখক তাঁদের লেখায়।
অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র ব্যাংকার নূরুল ইসলাম খলিফা স্যারের তথ্যবহুল এবং সমাজ বাস্তবতার নিরিখে লেখা চমৎকার নিবন্ধটি ‘মুক্তবুলি’র এ সংখ্যাটিতে ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে। যে কোন দেশের উন্নয়নের জন্য দক্ষ জনসম্পদ এর যেমন কোন বিকল্প নেই, তেমনি দক্ষ মানব সম্পদের জন্য নৈতিকতা এবং মানবিকতার ও কোন বিকল্প নেই। এ কথাটি স্যার বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত দিয়ে বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন তাঁর অসাধারণ লেখনিশক্তি দিয়ে। নৈতিকতা এবং মানবতা বিবর্জিত মানুষ সমাজ আর দেশের গলগ্রহ। এ জাতীয় লোক দিয়ে আর কিছু হলেও দেশ এবং জাতির সামগ্রিক উন্নয়ন সুদূর পরাহত।
নব্বই দশকের সদ্য প্রয়াত বিশ্বাসী কবি কামাল আহসানের কাব্যিক শক্তিমত্তা আর অনন্য উচ্চতা নিয়ে কবিকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে স্মৃতিচারণ করেছেন কবি কামাল আহসানের কাব্যসহচর ইতালী প্রবাসী কবি হারুন আল রাশিদ এবং বর্তমান সময়ের সাহসী ছড়াকার রিতা ফারিয়া রিচি। এ ছাড়াও বরিশাল সাংস্কৃতিক সংসদের এ বছরের সাগরকন্যা কুয়াকাটায় ভ্রমণ এবং সাংস্কৃতিক সংসদের অনন্য আয়োজন নান্দনিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানকে ঘিরে মজার ভ্রমণ কাহিনী লিখেছেন ফিরোজ মাহমুদ।
কবিতা বাংলা সাহিত্যের অত্যন্ত শক্তিশালী এবং জটিল বিষয়। কবিতায় শক্তিমত্তা প্রদর্শনে সক্ষম ব্যক্তিবর্গই বাংলা সাহিত্যের অন্যান্য শাখায় প্রতিনিধিত্ব করেন দাপটের সাথে। বিগত প্রতিটি সংখ্যার মতোই প্রবন্ধ, নিবন্ধ, স্মৃতিকথা সহ অন্যান্য আয়োজনের পাশাপাশি দাপুটে এক ঝাঁক নবীন-প্রবীণ কবির সাক্ষাত ঘটে মুক্তবুলি ম্যাগাজিনের এই সংখ্যায়। তাঁদের লেখা নানা বিষয়ে সেরা কবিতা আর ছড়ায় আলো ঝলমল এ সংখ্যাটি সমুজ্জল।
বরিশালের ঐতিহ্যবাহী সাহিত্য সংগঠন ‘শেকড়’ সাহিত্য সংসদের সভাপতি নব্বই দশকের শক্তিশালী কবি নয়ন আহমেদ, কবি রেদওয়ানুল হক, কবি কাশেম নবী এবং কবি পথিক মোস্তফার লেখা সত্যি একরাশ মুগ্ধতা ছড়িয়ে দিয়েছে আর নতুন প্রাণশক্তি ফিরে পেয়েছে ‘মুক্তবুলি’। এ ছাড়াও এ সংখ্যাটিতে বেশ কিছু শক্তিশালী আর আলোকিত কাব্য সম্ভার বাংলা কবিতার ব্যাপারে ভীষণভাবে আশান্বিত করেছে আমাদের। বিষয় নির্বাচনে পারঙ্গমতা, শিল্পমান, ছন্দ জ্ঞান, উপমা, শব্দ চয়ন এবং চিত্রকল্পের অপূর্ব সমন্বয়ে নান্দনিকতার মোড়কে ঢাকা অনন্য বৈশিষ্ট্য সমৃদ্ধ বেশ কিছু কবিতা ভিন্ন ভিন্ন ভাবে আলোচনার দাবী রাখে। কিন্তু লেখার কলেবর বৃদ্ধির শাসনে অগত্যা সংক্ষিপ্ত করতে হচ্ছে। তবে কিছু কবিতায় বানান প্রমাদ আমাদের আহত করেছে। এ বিষয়ে লেখক এবং সম্পাদনা সংশ্লিষ্ট সকলের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
নিরেট বাংলা সাহিত্য পত্রিকার এ দূর্দিনে ‘মুক্তবুলি’ একটি দায়িত্বপূর্ণ অবস্থানে থেকে সাহিত্য সেবার ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে দৃপ্ত প্রত্যয়ে। সাংস্কৃতিক আন্দোলনে কাঙ্খিত ভূমিকা পালনের দৃঢ় সংকল্প নিয়ে পৌঁছে যাচ্ছে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে আমাদের প্রিয় মুক্তবুলি।
মৌলিক এবং মানসম্পন্ন লেখা, ঝঁকঝঁকে ছাঁপা, নান্দনিক প্রচ্ছদ, প্রতিশ্রুতিশীল কবি-সাহিত্যিকদের লেখায় সমৃদ্ধ দ্বি-মাসিক ‘মুক্তবুলি’ ছড়িয়ে যাক সৃজনশীল পাঠকের হাতে। এ প্রত্যাশায় ‘মুক্তবুলি’র সফলতা কামনা করছি।
ফিরোজ মাহমুদ
সহকারী অধ্যাপক (ইসলামের ইতহাস ও সংস্কৃতি)
লালমোহন ইসলামিয়া কামিল মাদরাসা, লালমোহন, ভোলা।
০১৭১৫৪৮৯৯৪৯