রমজান

শাহাদাৎ হোসেন

তোমারে সালাম করি নিখিলের হে চির-কল্যাণ-
জান্নাতের পুণ্য অবদান!
যুগ-যুগান্তর ধরি বর্ষে আসিয়াছ তুমি
দিনান্ত কিরণে চুমি
ধরণীর বনান্ত বেলায়।
অস্তসিন্ধুকূলে দূর প্রতীচীর নীলিমার গায়
দ্বিতীয়ার পুণ্য তিথি প্রতি বর্ষে আঁকিয়াছে তোমার আভাস
দিক হতে দিগন্তরে জাগিয়াছে পুলকের গোপন উচ্ছ্বাস।
আজি ফরায়েছে সব-
উচ্ছ্বসিত কলকণ্ঠে বাজে নাকো আনন্দের গীত-কলরব।
অত্যাচার, অনাচার, নির্মম পীড়নে
জীবন্মৃত পড়ে আছি ধরণীর একান্তে নির্জনে;
দীর্ণ বক্ষে জাগে শুধু মর্মভেদী তপ্ত হাহাকার
নয়নে ঘনায়ে আসে মরণের গাঢ় অন্ধকার।
আনন্দের হাসি কোথা, কোথা নব জীবনের গান
সুরহারা ভগ্নকণ্ঠে ফোটে শুধু ব্যথা-ভরা করুণার তান।
বিপুল এ পৃথ্বী আজি দাবদগ্ধ পড়ে আছে বিরাট শ্মশান-
গৌরবের মহা-অবসান;
সর্বহারা জীবন্ত কঙ্কাল লুটাইছে বুকে তার
আর্তকণ্ঠে মুহুর্মুহু ফুটিতেছে মর্মন্তুদ মরণ-চীৎকার,
শক্তি নাই, ভাষা নাই, জীবনের নাহি উন্মাদনা,
অলস তমিস্রাপুঞ্জে ঘিরে আছে শতাব্দীর জীবন্ত সাধনা।
অতীতের যাত্রাপথে উড়াইয়া জীবনের বিজয়-কেতন
আলোকের অগ্রদূত, অন্ধকারে নির্বিচারে করিতেছে মরণ-বরণ।
অনুতাপ-বৃশ্চিকের বিষাক্ত দংশনে
সুতীব্র দহনে-
তবু নাহি দহে মর্মতল,
নির্বিকার গতিহীন পড়ে আছে স্থাণু অবিচল।
দিগন্তের চিত্রাকূলে রূপচ্ছবি আঁকি
ঋতু-চক্র-আবর্তনে ‘শরাবন তহুরা’র সাকি।
আসিয়াছে যদি তবে ঢেলে দাও অশ্রান্ত ধারায়
তোমার অমৃতরস মূমূর্ষুর তীব্র পিপাসায়;
জ্যোতিপুঞ্জে উদ্ভাসিয়া ঘনান্ধ শ্মশান
কঙ্কাল প্রেতের কণ্ঠে জাগাইয়া তোলো নব জীবনের উদ্বোধন গান
দিক হতে দিগন্তরে ধরণীর মর্মকেন্দ্র ঘন মুখরিয়া
স্বাগতম রমজান গীতিকণ্ঠে উঠুক রণিয়া।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *