রিয়াজ পাটওয়ারী ॥
হাতে পেয়েছি সদ্য প্রকাশিত দ্বিমাসিক ম্যাগাজিন ‘মুক্তবুলি’র ২৪ তম (অক্টোবর-নভেম্বর ২০২২) সংখ্যা। প্রতিসংখ্যার ন্যায় এবারও একটি নির্ধারিত বিষয়ের উপর প্রাধান্য দেয়া দেয়া হয়েছে, এ সংখ্যার নির্ধারিত বিষয় ‘হেমন্ত’। হেমন্ত ঋতুতে চলে শীত-গরমের খেলা। ভোরের আকাশে হালকা কুয়াশা, শিশিরে ভেজা মাঠ-ঘাট তারপর ক্রমেই ধরণী উত্তপ্ত হতে থাকে। সৌন্দর্য এবং বৈশিষ্ট্য লালিমায় বাংলার ঋতুর রানী হেমন্ত।
মুক্তবুলি ম্যাগাজিনটির শ্লোগান হলো ‘পাঠক যারা, লেখক তারা’। এতে যে কেউ লিখতে পারবেন, তবে লেখা দেয়ার আগে মুক্তবুলি ম্যাগাজিন পড়তে হবে, মুক্তবুলিতে দেয়া লেখা পূর্বে অন্য কোথাও প্রকাশ করা যাবেনা ও অবশ্যই নিজের লেখা হতে হবে এমন কিছু ছোট ছোট শর্ত জুড়ে দিয়েছেন সম্পাদক।
২০১৮ সালের জানুয়ারিতে যাত্রা শুরু করে মুুক্তবুলি। ৫ বছরে নিয়মিত প্রকাশ হয়েছে ২৪টি সংখ্যা। আর্থিক সংকটে অথবা পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে প্রকাশ বন্ধ হয়ে গেছে অনেক সাহিত্য-সংস্কৃতি বিষয়ক পত্রিকা। তবে কোন প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতা ছাড়াই প্রকাশক ও সম্পাদক আযাদ আলাউদ্দীন নিয়মিত বের করছেন মুক্তবুলি। বরিশাল থেকে প্রকাশিত হলেও সারাদেশে পাওয়া যায় এবং পৃথিবীর যে কোন দেশ থেকে www.muktobuli.com ভিজিট করে পড়া যায়। বিগত সংখ্যাগুলো ছিলো ৩২ পৃষ্ঠা আর এখন থেকে পৃষ্ঠা সংখ্যা ৩৬। কাগজের দাম ও পৃষ্ঠা বৃদ্ধির কারণে এই সংখ্যার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ টাকা। এই সংখ্যায় নতুন করে অন্তর্ভূক্ত হয়েছে বিলাল হোসেন নূরী’র লেখা ‘মুক্তবুলি’ থিম সং। এছাড়াও রয়েছে ১৬ জন লেখকের প্রবন্ধ, ইতিহাস ও ঐতিহ্য সহ নানা ধরণের লেখা এবং ৫৭ জন নবীন-প্রবীণ কবির কবিতা।
৭৩ জন লেখকের সকলে প্রবীণ নয়! এর মধ্যে কিছু সংখ্যক রয়েছেন নবীন।
মুক্তবুলির মাধ্যমে অনেকের হাতে খড়ি। পূর্বের ন্যায় এসংখ্যায়ও প্রকাশিত হয়েছে অনেক নবীন লেখকের লেখা। আর এর জন্য মুক্তবুলিকে বলতে পারি ‘লেখক তৈরির কারিগর’।
যদিও ‘মুক্তবুলির’ ২৪তম সংখ্যাটির মূল প্রতিপাদ্য ছিলো ‘হেমন্ত’ বিষয়টিকে উপজীব্য করে সাজানো হয়েছে। কিন্তু এ বিষয়টিকে ছাপিয়ে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থান পেয়েছে এ সংখ্যায়। প্রবন্ধ, নিবন্ধ, ফিচার, স্মৃতিচারণ ও গল্প নিয়ে নবীন-প্রবীণ যাদের লেখায় এ সংখ্যাটি সমৃদ্ধ তারা হলেন- ব্যাংকার মো. জিল্লুর রহমান’র ‘হলুদ খামে হেমন্ত নামে’ রচনার শিরোনাম স্থান পেয়েছে ম্যাগাজিনটির প্রচ্ছদে। প্রফেসর মো. মোসলেম উদ্দীন শিকদারের ‘রোহিঙ্গা ইস্যুর মৃত্যু ঘটাতে চায় সাম্রজ্যবাদীরা’ শিরোনামে লেখাটিতে ১৯৪২-২০১৬ সাল পর্যন্ত মায়ানমারের সমাজতন্ত্র ও অহিংস বৌদ্ধধর্মের মুখোশধারী সামরিক বাহিনী নিয়ে গুরুত্বপর্ণ আলোচনা। যে লেখাটি পড়লে জানা যাবে রোহিঙ্গাদের ইতিহাস।
অনির্বাণ চক্রবর্তীর ‘কাজী নজরুলের অসাম্প্রদায়িক চেতনা’ শিরোনামে প্রবন্ধের মাধ্যমে ফুটে উঠেছে মানবজাতিই সেরা। জীবনে কিছু করতে পরিবারের অসচ্ছলতা বড় ধরণের বাধা নয় তা প্রমাণ করেছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম!
মাহমুদ ইউসুফ’র লেখা ‘মহাত্মা মুহাম্মদ ছবি খাঁ ও তাঁর কাল’ শিরোনামে ইতিহাস বিষয়ক লেখায় জানাযায় বাংলার বাঘ শের-ই-বাংলা আবুল কাশেম ফজলুল হক’র পূর্বকালে আরো একজন কর্মবীরের পরিচয় ও কর্মজীবন।
‘কীভাবে লিখবেন জাতীয় দৈনিকে’ শিরোনামে কবি সাহিত্যকি সুয়েজ করিম’র মিডিয়া ভিত্তিক লেখার মাধ্যমে জানাযায় ঢাকা থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন পত্রিকায় কলাম, প্রবন্ধ ও কবিতা লেখার বিভিন্ন কৌশল।
রিয়াজ পাটওয়ারী’র স্মৃতিচারণ মূলক প্রবন্ধ ‘হারিয়ে যাচ্ছে শৈশব’। যাতে ফুটে উঠেছে ৯০ দশকের ও বর্তমানের যুব সমাজের সময় কাটানোর পার্থক্য।
আরিফুল ইসলাম’র নিবন্ধ ‘মা মানে এক পৃথিবী’তে বর্তমান সমাজে সন্তানদের বিবেক জাগ্রত করতে হবে যাতে কোন পিতা মাতার শেষ জীবনটি বৃদ্ধাশ্রমে না কাটে।
সাব্বির আলম বাবু’র লেখা ‘বাঙ্গালির চিরায়ত ঐতিহ্য আর সমৃদ্ধির হেমন্তকাল’ ফিচারে বাংলাদেশের গ্রামীণ ঐহিত্য ফুটে উঠেছে, যা বর্তমান সমাজ ভোগ করতে পারেনা বললেই চলে।
জাবের আল আব্দুল্লাহ’র ‘বিশ্বাসের চৌমুহনী পথ!’ গল্পের মাধ্যমে জানাগেছে মাহবিশ্বের সবকিছু কিভাবে চলে?
মাকসুদা আকতার’র লেখা প্রবন্ধ ‘নারী পুরুষ সমতা’য় ফুটে উঠেছে নারীদের প্রতি সহিংসতার আচরণের প্রতিদিন কোন না কোন মেয়ে বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। জীবন হারায় গৃহবধু। সমাজের চোখে কিভাবে রোধ করা যাবে নারী পুরুষ বৈষম্য।
বিএম কলেজ শিক্ষার্থী সুমাইয়া সুলতানা তামীমা’র প্রকৃতি বিষয়ক লেখা ‘শুভ্রতা ছড়ানো ঋতু’ তে বাংলার সৌন্দর্য্য ফুটে উঠেছে।
মিনহাজ সাদ্দাম’র ‘সৎ সঙ্গই আদর্শ শিক্ষা’ শিরোনামে গল্পের মাধ্যমে জানাযায় কার সাথে চললে জীবন কেমন হবে ?
ইসরাত জাহান’র ‘সামাজিক অবক্ষয় রোধে বই ও ম্যাগাজিনের গুরুত্ব’ শিরোনামে লেখায় ফুটে উঠেছে বই পড়ার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মুক্তবুলি লেখক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ’র ‘আল্লাহর কাছে সবকিছু বলে দেবো’ শিরোনামে বুক রিভিউও রয়েছে এসংখ্যায়।
এছাড়া যেসব কবিদের ছড়া-কবিতার সরব উপস্থিতিতে এ সংখ্যাটি আলোকিত তারা হলেন- কাশেম নবী, শাহরিয়ার মাসুম, মুস্তফা হাবীব, তাজ ইসলাম, গাজী নজরুল ইসলাম, বেগম ফয়জুন নাহার শেলী, এ কে সরকার শাওন, নিহার বিন্দু বিশ্বাস, মাহবুবুল হক, সুনিল বরণ হালদার, উম্মে সায়মা তমা, মনিরুল ইসলাম শ্রাবণ, নবীন্দ্রনাথ মন্ডল, দেবনাথ মন্ডল, ফারহানা পারভীন জুঁই, প্রিয়াংকা সিকদার, মো. জাফরুল ইসলাম, শেখ ফাহমিদা নাজনীন, শাহীন খান, কামরুল ইসলাম শিমুল, সমর কৃষ্ণ হালদার, লীলা দেউরী, অজ কৃষ্ণ গোমস্তা, প্রাণকৃষ্ণ বিশ্বাস, দিলীপ কুমার মিস্ত্রী, এরশাদ সোহেল, মো. তারেকুল ইসলাম, মোহাম্মদ নুরুল্লাহ, কামরুল আহসান, শামীম রেজা, মো. রিসালাত মীর বহর, নুরল আমিন, মো. ফারুক হোসেন খান, জিল্লুর রহমান জিল্লু, শাহীন কামাল, মো. রাজিব হুমাযুন, আনজুমান আরা রিমা, মাহামুদুল হাসান শিবলী, বিজন বেপারী, হেলেন রহমান আঁখি, নজরুল ইসলাম, আব্দুল্লাহ আল মাসুম, সুলতানা রাজিয়া তুলি, সনজয় কুমার রায়, শিমুল সুলতানা, আবুল ফজলে মুহেব্বুর, হৈমন্তী শুক্লা ওঝা, সন্তোস কুমার মজুমদার, এম. অলিউল্যাহ হাসনাইন, নীলা আহমেদ, সুমাইয়া নেওয়াজ, নিগাত সুলতানা, ফারজানা আফরোজ, অনন্ত রিয়াজ, সালমা জাহান সীমা, শাহানাজ পারভীন, জিয়াউর রহমান জিয়া’র কবিতা স্থান পেয়েছে এসংখ্যায়।
রিয়াজ পাটওয়ারী
বার্তা সম্পাদক, দৈনিক ন্যায়-অন্যায়,
উপসম্পাদক, মুক্তবুলি।