ফিরোজ মাহমুদ
প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশাল থেকে তরুণ সাংবাদিক আযাদ আলাউদ্দীনের সম্পাদনায় নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে শিল্প, সাহিত্য এবং সংস্কৃতি বিষয়ক জনপ্রিয় সাময়িকী দ্বি-মাসিক ‘মুক্তবুলি’। এই ম্যাগাজিনের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি-২০২১ সংখ্যা হাতে পেয়েছি ০৯ জানুয়ারি-২০২১ তারিখে। নান্দনিক প্রচ্ছদের এ সাময়িকীটি পড়ে ফেললাম মনোযোগ সহকারে। ব্যতিক্রমধর্মী এ সাহিত্য পত্রিকার প্রতিটি সংখ্যার জন্য একটি নির্ধারিত বিষয় থাকে। এ বিষয়টির উপর প্রাধান্য দিয়ে অধিকাংশ লেখা প্রকাশিত হয়। এছাড়াও নিয়মিত সবধরনের লেখাও থাকে এই ম্যাগাজিনে। ১৫তম সংখ্যার নির্ধারিত বিষয় ছিল ‘বই’।
‘মুক্তবুলি’র এই সংখ্যার প্রচ্ছদ রচনা সাজানো হয়েছে ‘বইয়ের সাতকাহন’ নামক মজার প্রবন্ধটি দিয়ে, যা লিখেছেন কবি, সাংবাদিক এবং প্রাবন্ধিক সাব্বির আলম বাবু। বাবু যে একজন বই পাগল এবং একাধারে ভালো পাঠকও, এ কথাটি তিনি তার লেখায় তুলে এনেছেন বেশ সাবলীলভাবে। তিনি বই পড়ার অপরিসীম গুরুত্বকে বয়ান করেছেন অবলীলায়। ছোট বেলা থেকেই বই অন্তঃপ্রাণ এই লেখক মনে করেন যে, বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তির উৎকর্ষতা বিশেষ করে মোবাইলের প্রতি অতিরিক্ত আসক্তি বই পড়ার প্রধান অন্তরায়।
আরো যাদের প্রবন্ধ, নিবন্ধ এবং গল্পে এ সংখ্যাটি অলঙ্কৃত হয়েছে, তারা হলেন- রুকাইয়া সুলতানা মুন, মুন্সী এনাম, গবেষক মাহমুদ ইউসুফ, ফিরোজ মাহমুদ, আহমেদ বায়েজীদ, সুয়েজ করিম, শাহীন কামাল, মো.জিল্লুর রহমান, গাজী মো. তাহেরুল আলম, ফারহানা করিম তুলি, জামাল হোসাইন, নুরুল আমিন, এরশাদ সোহেল, নিশাত সারমিন জেসমিন, আযাদ আলাউদ্দীন এবং শাহীন হাফিজ প্রমুখ।
‘মুক্তবুলির’ এ সংখ্যাটির নির্ধারিত বিষয় বই হওয়ার কারণে উল্লেখিত লেখকদের অধিকাংশই বইয়ের বিভিন্ন দিক নিয়ে লিখেছেন মনের মাধুরী মিশিয়ে। তবে প্রত্যেক লেখক অকপটে স্বীকার করেছেন বই পড়ার অপরিসীম গুরুত্বের কথা। ‘পড়’ তোমার প্রভূর নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন। এ শব্দটি দিয়েই মহান আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন মানবজাতিকে শেষ বারের মতো তাঁর বাণী পাঠানোর সময় শুরু করলেন কেন, তা আমাদের গভীর উপলব্দির দাবী রাখে। তাছাড়া মানব সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকেই বই পাঠের তথ্য ও পাওয়া যায়। আলোকিত মানুষ, সুখী-সমৃদ্ধশালী এবং ভারসাম্যপূর্ণ দেশ তথা বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ার জন্য নিঃসন্দেহে জ্ঞানার্জনের বিকল্প নেই। জীবনকে সুন্দরভাবে বিকশিত করতে হলে, নান্দনিক ভূমিকায় উপস্থাপন করতে হলে, ফুলের সৌরভে সুবাসিত করতে হলে জ্ঞানার্জন করতেই হবে, আর জ্ঞানার্জন করতে হলে বই পড়ার ও কোন বিকল্প নেই। এ স্বতঃসিদ্ধ কথাগুলোই বিভিন্নভাবে উঠে এসেছে প্রত্যেকের লেখায়।
নান্দনিক সমাজ-রাষ্ট্র বিনির্মাণের জন্য সু-নাগরিকের বিকল্প নেই। সমাজের নানা অসঙ্গতি, কুটিলতা, জড়াজীর্ণতা, অপসংস্কৃতি, অন্যায়-অবিচার দূর করে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সমাজের জ্ঞানী এবং সুশীল সমাজের বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন, কেবলমাত্র বই পাঠে অগ্রগামীদের দ্বারাই সম্ভব। পৃথিবীর উন্নত দেশ গুলোই এর জ্বলন্ত প্রমাণ বহন করছে। জীবনের সকল ক্ষেত্রে উন্নতি এবং অগ্রগতির মাপকাঠি জ্ঞান, আর এ জ্ঞান অর্জনের মূল চাবিকাঠি হচ্ছে বই। বই মানব জীবনের শ্রেষ্ঠ বন্ধু। তাই মানুষ হিসেবে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের ক্ষেত্রে বইয়ের বিকল্প কিছুই নেই। বই বিষয়ক প্রতিটি লেখার মূল প্রতিপাদ্যকে প্রত্যেক লেখক এভাবেই ব্যক্ত করেছেন নিজেদের দক্ষ হাতের ছোঁয়ায়।
বই ছাড়াও মুক্তবুলি’কে নিয়ে চমৎকার লেখা লিখেছেন রুকাইয়া সুলতানা মুন। প্রবীন এবং নবীনদের জন্য ‘মুক্তবুলি’ যে লেখালেখির জন্য একটি উম্মুক্ত প্লাটফর্ম তিনি এ কথাটি অত্যন্ত সাবলীলভাবে উপস্থাপন করেছেন তার লেখায়।
সাব-এডিটরের কর্মজীবন শিরোনামের নিবন্ধটিতে লেখক আহমেদ বায়েজীদ লিখেছেন একটি পত্রিকাকে সর্বাঙ্গীন সুন্দর করার জন্য কী নিরন্তর প্রচেষ্টা আর অন্তহীন ভূমিকা পালন করতে হয় একজন সাব-এডিটরকে!
ব্যাংকারদের বাস্তব জীবনের রুঢ়তাকে উপজীব্য করে অত্যন্ত মেধাবী লেখক ও কলামিষ্ট মো. জিল্লুর রহমান নান্দনিকতার ছোঁয়ায় সাজিয়েছেন ‘বুক ফাটে তো মুখ ফোটে না’ নামক তার অনবদ্য প্রবন্ধটি। ব্যাংকাররা যে আসলেই তাদের চাকুরী জীবনের বাঁকে বাঁকে কঠিন বাস্তবতাকে আলিঙ্গন করেই প্রতিনিয়ত তাদের জটিল কর্মযজ্ঞ চালিয়ে যেতে হয়- এ বিষয়টি তিনি স্বীকার করেছেন অকপটে, তুলে ধরেছেন সাবলীলভাবে।
প্রবন্ধ, নিবন্ধ, আর গল্পের পাশাপাশি কবিতা আর ছড়াও হয়ে ওঠে ‘মুক্তবুলির’ অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ। এ বিভাগে দেশের প্রতিষ্ঠিত কবি-সাহিত্যিকরা লিখছেন নিয়মিত। এ সংখ্যাটিতে বিভিন্ন বিষয়ে লেখা কবিতা মালায় ওঠে আসে নানা বিষয়ের হৃদয় ছোঁয়া পংক্তিমালা। মূলতঃ প্রতিটি কবিতাই আলাদাভাবে আলোচনার দাবী রাখে।
বাংলা সাহিত্য পত্রিকার এ দুঃসময়ে একটি নিরেট সাহিত্য পত্রিকার শূণ্যস্থানে ‘মুক্তবুলি’ নিঃসন্দেহে একটি প্রসংশনীয় এবং বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে চলছে। বরিশাল থেকে প্রকাশিত দ্বি-মাসিক এ মননশীল সাময়িকীটি ইতোমধ্যে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাহিত্যপ্রেমী অনেক পাঠকের হাতে পৌঁছে গেছে এবং যাচ্ছে।
মানসম্মত এবং মৌলিক লেখা, দৃষ্টি নন্দন প্রচ্ছদ, নবীন-প্রবীণ এক ঝাঁক প্রতিশ্রুতিশীল কবি-সাহিত্যিকের সেরা লেখায় সু-সজ্জিত এ সাহিত্য পত্রিকাটি ইতোমধ্যে পাঠক হৃদয়ে স্থায়ী আসন গড়তে সক্ষম হয়েছে।
আমরা আশা করছি অতি অল্প সময়ের ব্যবধানে ‘মুক্তবুলি’ বাংলা সাহিত্য অঙ্গনে একটি সু-দৃঢ় অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হবে। আমরা ‘মুক্তবুলি’র বহুল প্রচার এবং উত্তরোত্তর সফলতা প্রত্যাশা করছি।
রিভিউ: মুক্তবুলি
১৫ তম সংখ্যা, জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি-২০২১
প্রকাশক ও সম্পাদক- আযাদ আলাউদ্দীন
প্রকাশনায়- বরিশাল সংস্কৃতিকেন্দ্র
প্রচ্ছদ- মো. মিরাজ উদ্দিন
মূল্য- ৩০ টাকা। যোগাযোগ: ০১৭৮৮৭৭০০৬৩
লেখক পরিচিতি
ফিরোজ মাহমুদ
সহকারি অধ্যাপক
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ
লালমোহন ইসলামিয়া কামিল মাদরাসা, ভোলা।
০১৭১৫৪৮৯৯৪৯
চমৎকার মূল্যমান
চমৎকার মূল্যায়ন