ফিরোজ মাহমুদ:
‘পাঠক যারা লেখক তারা’ এ শ্লোগানকে ধারণ করে প্রতিশ্রুতিশীল তরুন সাংবাদিক আযাদ আলাউদ্দীনের সম্পাদনায় শিক্ষানগরী বরিশাল থেকে প্রতি দুই মাস অন্তর নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে শিল্প-সাহিত্যের সৃজনশীল কাগজ মুক্তবুলি। মহামারী করোনাকালীণ সময়ে প্রিন্ট ভার্সন প্রকাশ সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ থাকায় নিয়মিত প্রকাশিত হতে থাকে মুক্তবুলি অনলাইন ভার্সন। প্রিন্ট ভার্সনের মতই অতি অল্প সময়ে মুক্তবুলির অনলাইন ভার্সনটি ঈর্ষণীয় পাঠকপ্রিয়তা লাভ করে। নবীন-প্রবীনদের মৌলিক লেখায় সমৃদ্ধ সাহিত্য সাময়ীকি মুক্তবুলি ইতোমধ্যে বোদ্ধা পাঠক মহলে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। নতুন লেখক তৈরীর ক্ষেত্রে বদ্ধপরিকর মুক্তবুলি ইতোমধ্যে বহু পাঠককে কাঙ্খিত মানের লেখক হিসেবে উপস্হাপন করতে সক্ষম হয়েছে। ইতিবাচক সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে এ কাজটি প্রশংসার দাবী রাখে।
প্রবন্ধ, নিবন্ধ, সমসাময়িক বিষয়ের উপর গুরুত্বপূর্ণ ফিচার, পাঠক এবং লেখকের অনুভূতি, ভ্রমন কাহিনী, স্মৃতিগদ্য, ধর্মীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, গল্প এবং কবিতার পাশাপাশি একটি সুনিদ্রিষ্ট বিষয়কে উপজীব্য করে সাজানো হয় এর প্রতিটি সংখ্যা। এরই ধারাবাহিকতায় মুক্তবুলি’র ২০ তম সংখ্যাটি সাজানো হয়েছে ‘মুক্তবুলি’র প্রতিষ্ঠার ৪ বছর’ অভিজ্ঞতা আর বাস্তবতা নিয়ে। এ সংখ্যাটি বিগত ১৯ টি সংখ্যা থেকে ব্যতিক্রম। কারন ‘মুক্তবুলি’র প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এর সাথে যাঁরা বিভিন্ন ভাবে সংশ্লিষ্ট থেকে লিখেছেন, বিভিন্ন ভাবে অকৃপণ সহযোগীতা করেছেন তাঁদের সাবলীল অভিজ্ঞতা বিনিময়ে সমৃদ্ধ হয়েছে এ সংখ্যাটি।
চার বছর পূর্তির ২০তম সংখ্যায় ‘মুক্তবুলি’র ২০টি সংখ্যা নিয়ে প্রচ্ছদ রচনা লিখেছেন প্রফেসর মো. মোসলেম উদ্দিন সিকদার। পাঠক-লেখকের অনুভূতি কলামে লিখেছেন কথা সাহিত্যিক সালেহ রনক, ইসরাত জাহান এবং দোলা মিত্র। বাংলা বানান বিপত্তি, আমাদের করণীয় শীর্ষক একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ লিখেছেন কবি পথিক মোস্তফা এ ছাড়া প্রবন্ধ লিখেছেন কবি নুরুল আমিন। নিবন্ধ লিখেছেন কবি সুয়েজ করিম। স্মৃতিগদ্য লিখেছেন ফিরোজ মাহমুদ, তপতী সরকার, হেলেন রহমান আঁখি। ভ্রমণ কাহিনী লিখেছেন ওমর ফারুক তারেক। মুক্তবুলি’কে নিয়ে একটি নান্দনিক লেখা লিখেছেন বেলায়েত বাবলু। গল্প লিখেছেন রুকাইয়া সুলতানা মুন। ইসলামে কবি ও সাহিত্যিকের স্হান বিষয়ে লিখেছেন জাবের আল আবদুল্লাহ, একজন ব্যাংকারের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক কৃতি ছাত্র মুক্তমনা লেখক মো.জিল্লুর রহমান এবং সাম্প্রতিক বিষয়ে ফিচার লিখেছেন শফিকুল ইসলাম।
প্রবন্ধ, নিবন্ধ,গল্প, স্মৃতিকথা ইত্যাদি ছাড়াও এ সংখ্যাটি যাঁদের কবিতায় সমৃদ্ধ হয়েছে তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- ড. কবি মাহফজুর রহমান আখন্দ, কবি নয়ন আহমেদ, কবি কাশেম নবী, কবি মোহাম্মদ এমরান, কবি শাহরিয়ার মাসুম, কবি সাব্বির আলম বাবু, কবি নীলা আহমেদ, কবি অজয় কৃষ্ গোমস্তা, কবি মুতমাইন্নাহ সাথী, কবি রবীন্দ্রনাথ মন্ডল, কবি শাহনাজ পারভীন, কবি মোহাম্মদ নূরুল্লাহ, কবি বিজন বেপারী, কবি শাহীন কামাল, কবিরাজিন সালেহ, কবি সালমা জাহান সীমা, কবি কবির কাঞ্চন, কবি সুনিল বরণ হালদার, কবি মোহাম্মদ নোমান, কবি কান্তা নবী এবং কবি সামিয়া আমিন প্রমুখ।
উপরোল্লিখিত গুণী লেখক এবং কবিগন তাঁদের দক্ষ হাতের কুঁচিকায় হৃদয়ের সমস্ত আবেগ, অনুভূতি শেয়ার করেছেন পরম যত্ন আর উদার ভালোবাসায়। ফেসবুকের মত তথ্য-প্রযুক্তির উৎকর্ষতার এ যুগে নিরেট সাহিত্য পত্রিকা টিকে থাকা অনেকটা কষ্টকর এমনকি দুঃসাধ্য ও বটে। বহু সাহিত্য পত্রিকার কয়েকটি সংখ্যা বের হওয়ার পর আর্থিক সংকটের পাশাপাশি নানাবিধ প্রতিকূলতা এবং সীমাবদ্ধতার কারণে বন্ধ হয়ে যায় তার প্রকাশনা। কিন্তু ‘মুক্তবুলি’ বহু সীমাবদ্ধতা আর প্রতিকূলতাকে ডিঙ্গিয়ে অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে চারটি বছরের ধারাবাহিকতায় ২০টি সংখ্যা প্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছে। সাহিত্য এবং কবিতার প্রতি এক শ্রেণীর মানুষের ক্রমাগত অনীহা এবং সাহিত্য পত্রিকার চরম দূর্দিনে সাহিত্যের প্রতি গভীর অনুরাগ আর ভালোবাসার কারণে সাংবাদিক আযাদ আলাউদ্দীন সৃজনশীল কাজের অংশ হিসেবে ‘মুক্তবুলি’ নিয়মিত প্রকাশ করে যাচ্ছেন।
‘মুক্তবুলি’র প্রতি এমন নিখাঁদ ভালোবাসার কারণে সাহিত্যপ্রেমী অগুণতি মানুষের ভিড়ে পত্রিকাটির প্রকাশক এবং সম্পাদক আযাদ আলাউদ্দীন অমর হয়ে থাকবেন বলে আমার বিশ্বাস। একটি মানসম্মত এবং নিরেট সাহিত্য পত্রিকা টিকে থাকার জন্য যেমন অর্থের প্রয়োজন, তেমনি লেখক এবং পাঠকদের ও নিঃস্বার্থ ভালোবাসার কোন বিকল্প নেই। সম্পাদকের বলিষ্ঠ দক্ষতা আর নিরন্তর সংগ্রাম অব্যাহত থাকলে এ অঞ্চলে শিল্প এবং সাহিত্যের ক্ষেত্রে ‘মুক্তবুলি’ অনবদ্য ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হবে।