আযাদ আলাউদ্দীন।।
বরিশাল বিভাগের আলোকিত মানুষ, বিশিষ্ট কবি-ছড়াকার ও সরকারি ব্রজমোহন কলেজ বাংলা বিভাগ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তপংকর চক্রবর্তী শিশু সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ এ বছর বাংলা একাডেমি পদক পেয়েছেন। অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলা একাডেমি পদকপ্রাপ্তদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
অধ্যক্ষ তপংকর চক্রবর্তী যেসব সংগঠনের সাথে জড়িত রয়েছেন বা ছিলেন সেগুলো হচ্ছে- বরিশাল প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, অমৃত লাল দে মহাবিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যক্ষ. বাংলাদেশ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সহ-সভাপতি। বরিশাল জেলা পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘ বরিশাল শাখার আহ্বায়ক, বরিশাল জেলা শিল্পকলা একাডেমির যুগ্ন-সম্পাদক, ‘জাতীয় কবিতা পরিষদ বরিশাল শাখার সভাপতি, ‘বাংলা ভাষা সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক তিনি।
তপংকর চক্রবর্তী ১৯৫৫ সালে ৯ জুলাই বরিশাল শহরের কাউনিয়া ব্রাঞ্চ রোডে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা শৈলেশ্বর চক্রবর্তী, মাতা কুন্তী রানী চক্রবর্তী। তিন ভাই, এক বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। তাঁর পৈত্রিক নিবাস উজিরপুর উপজেলার হস্তিশুন্ড গ্রামে।
তিনি ১৯৫৯ সালে বরিশাল সিস্টার্স ডে প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষা জীবন শুরু করেন। ১৯৭১ সালে বরিশাল জিলা স্কুল থেকে এসএসসি ও ১৯৭৩ সালে বরিশাল সরকারি ব্রজমোহন কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। তিনি ১৯৭৬ সালে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে স্নাতক সম্মান এবং ১৯৭৭ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
তপংকর চক্রবর্তী ১৯৮১ সালে সাংবাদিকতায় পেশাগত জীবন শুরু করেন। ১৯৮৩ সালে তিনি কলেজে অধ্যাপনায় যোগদান করেন। তিনি বরিশালের অমৃত লাল দে মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ছিলেন।
তপংকর চক্রবর্তী ১৯৬৩ সালে শিশু সংগঠন ‘খেলাঘর’র সাথে যুক্ত হন। তিনি ১৯৭০ সাল থেকে জাতীয় গণমাধ্যমে লেখালেখি শুরু করেন। দৈনিক ইত্তেফাক, জনকন্ঠ, ভোরের কাগজ, যুগান্তর, সমকাল, আমাদের সময়, দৈনিক বাংলা সহ বরিশালের আঞ্চলিক দৈনিক সংবাদ মাধ্যমে তিনি নিয়মিত লিখছেন। বিভিন্ন সময়ে তার লেখা প্রকাশিত হয়েছে এবং হচ্ছে।
২০০০ সালে তিনি বরিশাল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এছাড়াও তিনি বরিশাল পাবলিক লাইব্রেরি’র সহ-সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি জীবনানন্দ একাডেমি’র সাধারণ সম্পাদক, দৈনিক ‘গ্রাম সমাচার’ এবং ‘দৈনিক বরিশালের আজকাল’ পত্রিকার তিনি প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। তিনি “উজিপুর সমিতি, বরিশাল” এর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এছাড়া তিনি সাহিত্যপত্র “ধারাপাত” ত্রৈমাসিক সাহিত্যপত্র “নান্দনিক”, কবিতাপত্র “কবি ও কবিতা” এবং সাহিত্যপত্র “আলোকপত্র”_এর সম্পাদক। বাংলাদেশ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির বরিশাল আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি।
তপংকর চক্রবর্তীর প্রকাশিত ছড়া গ্রন্থ- “কুমড়ো ফটাশ”, “তাক ডুমাডুম”, “একশ ছড়া”, “হৈ হৈ রৈ রৈ”, “খেয়াল খুশির ছড়া” “ছড়া সংগ্রহ” ইত্যাদি।
বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত কবিতা’র গ্রন্থ- “কিছু প্রেম কিছুটা বিদ্রোহ” “কামিনী রায়”, ” অশ্বিনী কুমার দত্ত”।
গবেষণা গ্রন্থ- (১) “বরিশালের সংবাদ ও সাময়িকপত্র” (বাংলা একাডেমি ২০০১)।
তপংকর চক্রবর্তীর সর্বমোট প্রকাশিত মৌলিক গ্রন্থ সংখ্যা ২১টি। সম্পাদিত গ্রন্থ রয়েছে আরও প্রায় ৩০টি। এর মধ্যে “বৃহত্তর বাকেরগঞ্জের ইতিহাস”, “গ্যেটে রচনা সমগ্র”, “গল্প যখন স্কুল নিয়ে” ও “চট্টগ্রামের ইতিহাস” উল্লেখযোগ্য। ২০২৪ সালের বইমেলায় ‘ধুমধাড়ক্কা’ ও ‘উল্টে দিলেই পাল্টে যাবে’ নামে তার দুটি ছড়ার বই প্রকাশিত হচ্ছে।
সাহিত্য চর্চায় অবদানের জন্য তিনি পশ্চিমবঙ্গসহ বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি সম্মাননা ও পদক পেয়েছেন। ২০১৬ সালে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে বরিশাল অঞ্চলের শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসেবে সম্মননা, ২০১৮ সালে কলকাতার উতলা হাওয়া শ্রেষ্ঠ কবি সম্মননা, ২০২০ সালে ঢাকায় বঙ্গনেত্রী সম্মননা ও ২০১৬ সালে বরিশাল জেলা প্রশাসক কর্তৃক জীবনানন্দ পুরস্কার পান।
সরকারি ব্রজমোহন কলেজ বাংলাবিভাগ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. মিজানুর রহমান বাদশা ও সাংগঠনিক সম্পাদক আযাদ আলাউদ্দীন সহ অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যগণ অধ্যক্ষ তপংকর চক্রবর্তীর এই সাফল্যে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।