আযাদ আলাউদ্দীন ।।
ধান সুপারি টেলিমিডিয়ার প্রধান নির্বাহী সাখাওয়াত হোসাইন আপাদমস্তক একজন সমাজসেবক, ক্রীড়ানুরাগী, অভিনেতা ও নার্ট্য নির্দেশক হিসেবে অনেকের কাছে সুপরিচিত। দ্বীপজেলা ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার টবগী ইউনিয়নের উত্তর দালালপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এই সংস্কৃতিবান মানুষটি।
হাকিমুদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষে ভর্তি হন পশ্চিম বিশারামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। সেখান থেকে কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ন হয়ে ডিপিআইতে পড়ালেখা করেন তিনি। এরপর ঢাকা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে বিএসসি ইন ম্যাকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা করেন। পরবর্তীতে ইবাইস ইউনিভার্সিটি থেকে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি সুপ্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হলেও ছাত্রজীবন থেকেই তিনি একজন দক্ষ আবৃত্তিকার ও অভিনেতা হিসেবে তুমুল জনপ্রিয়। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে নাট্যকলা বিভাগের থিয়েটার ওয়ার্কশপে প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি তার অভিনয় ও নাট্য নির্দেশনার দক্ষতাকে আরো শানিত করেন।
সাবেক ধর্মপ্রতিমন্ত্রী মোশারেফ হোসেন শাজাহানের লেখা কাহিনী ও আনিসুর রহমানের সংলাপে ‘মাটির মমতা’ নাটকের নির্দেশনার পাশপাশি ওই নাটকে অভিনয়ও করেন তিনি। বেশ কয়েক বছর আগে বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট বার মিলনায়তনে নাটকটি মঞ্চস্থ হয়। ডা. আবু হেনা আবিদ জাফরের নির্দেশনায় ‘হাট্রুয়া’ নাটকে অভিনয় করে ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করেন সাখাওয়াত হোসাইন। এছাড়াও তিনি যেসব নাটকে অভিনয় করেছেন সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- টান মারো টান, তিতুমীর, ভন্ড রাজার কান্ড প্রভৃতি।
মিজানুর রহমান লাবু ও মাসুম মাহবুবের নির্দেশনায় ‘মেঘনা পাড়ের গল্প’ নাটকে দূর্দান্ত অভিনয় করেন তিনি। প্রখ্যাত নাট্য পরিচালক আল-হাজেন’র নির্দেশনায় ‘অলসপুর’ সহ বেশ কয়েকটি ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করেন তিনি। নাটক-নাটিকা আর আবৃত্তি আন্ত:প্রাণ এই মানুষটি ছাত্রজীবনে ছিলেন ঢাকা উচ্চারণ থিয়েটারের পরিচালক।
বর্তমানে তিনি নিউভিশন গ্রুপের সিস্টার কনসার্ন ইন্টিমেট প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের ডাইরেক্টর এবং ক্লাস ওয়ান বাটন অ্যান্ড এক্সেসরিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। দেশেরে গন্ডি পেরিয়ে মালয়েশিয়া এবং জার্মানিতেও তিনি তার ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ করেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাবেক সভাপতি ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির কার্যনির্বাহী সদস্য এস এম জসিম প্রতিষ্ঠিত বোরহানউদ্দিন ছাত্রকল্যাণ ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা হিসেবে এই ফাউন্ডেশনের সকল সামাজিক কাজে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন সংস্কৃতিজন সাখাওয়াত হোসাইন।
সাখাওয়াত হোসাইন ঢাকাস্থ ভোলা সমিতি উত্তরা শাখার সেক্রেটারি ও দালালপুর উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান। এই সংস্থার মাধ্যমে তিনি তার নিজ এলাকা হাকিমুদ্দিন, টবগী, মলংচড়া, হাসাননগরের বেড়িবাঁধে আশ্রয় নেয়া অসহায় দরিদ্র ও নদী ভাঙনে নি:স্ব মানুষের পাশে দাড়িয়েছেন। করোনাকালে তিনি নিভৃতে কর্মহীন মানুষদের অকাতরে সাহায্য সহযোগিতা করেছেন।
সম্প্রতি রমজান মাসে দালালপুর উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে সমগ্র ভোলা জেলার হাফেজদের নিয়ে বর্ণাঢ্য আয়োজনে ‘হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতা’র আয়োজন করে ব্যাপক সাড়া পান তিনি। এই অনুষ্ঠানের গ্রান্ড ফাইনালে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে পুরস্কার বিতরণ করেন ভোলা-০২ (বোরহানউদ্দিন-দৌলতখান) আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য আলহাজ আলী আজম মুকুল।
ক্রীড়ানুরাগী সাখাওয়াত হোসাইন
ছোটবেলা থেকেই সাখাওয়াত হোসাইন একজন ক্রীড়ামোদী ও ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে কাজ করেছেন। নিজ এলাকার ক্রীড়া ক্লাবগুলোতে রয়েছে তার ব্যাপক পৃষ্ঠপোষকতা। ঊষা ও দালালপুর উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে হাকিমুদ্দিন ও উদয়পুর এলাকায় বেশ কয়েকটি ক্রীড়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন তিনি। সাখাওয়াত এতোটাই ক্রীড়ানুরাগী যে, বিগত বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল খেলা দেখার জন্য ফিফার আমন্ত্রণে রাশিয়া ও কাতার সফর করেন। সেসময় তিনি দেশি-বিদেশি বিভিন্ন টিভি মিডিয়ায় চমৎকার সাক্ষাৎকার দিয়ে ব্যাপকভাবে আলোচিত হন। বিগত বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলা দেখার জন্য আইসিসির আমন্ত্রণে ইংল্যান্ড সফর করেন সাখাওয়াত।
মুক্তবুলি ম্যাগাজিনের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় সাখাওয়াত হোসাইন বলেন, মানুষের দেহের খাদ্যের পাশাপাশি মনের খাদ্য হিসেবে সৃজনশীল সংস্কৃতি চর্চা অপরিহার্য, এজন্য দেশীয় সংস্কৃতির ব্যাপক প্রসার ঘটানো দরকার, আমাদের শিকড়ের সংস্কৃতি চর্চা, নৈতিক শিক্ষা ও খেলাধুলা তেমন হয়না বলেই সমাজে নেশাগ্রস্থ ও হতাশাগ্রস্থ মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এসব থেকে উত্তরণের জন্য ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের পৃষ্ঠপোষকতা বাড়ানো দরকার।
তিনি বলেন, আমাদের সন্তানদের কোন দোষ নেই, তাদের সঠিকভাবে মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্ব অভিভাবকদের। কিন্তু তা না করে- সবাই নিজের সন্তানকে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যবসায়ী বানানোর চিন্তায় ব্যস্ত, কিন্তু সন্তানকে ‘মানুষ’ বানানোর জন্য অনেকেই চিন্তা করছেন না। অথচ উচিত ছিলো ‘আগে আমরা মানুষ হবো- পরে আমরা সব হবো’।
তিনি আরও বলেন- আমাদের দেশীয়, লোকজ এবং ঐতিহ্যবাহী সমৃদ্ধশালী সংস্কৃতির বিকাশ ঘটাতে হবে। শিল্পী আব্বাসউদ্দীন আহমদ ও আবদুল আলীমের মতো শিল্পীদের নতুন প্রজন্মের কাছে সঠিকভাবে তুলে ধরে দেশীয় সংস্কৃতির বিকাশ ঘটাতে হবে। এ প্রসঙ্গে তিনি মাইকেল মধুসূদন দত্তের কথা স্মরণ করে বলেন- মাইকেল মধুসূদন দত্ত বিভিন্ন দেশ ঘুরে অবশেষে নিজ দেশেই শান্তি খুঁজে পেয়েছেন-
বঙ্গভাষা
মাইকেল মধুসূদন দত্ত
হে বঙ্গ, ভান্ডারে তব বিবিধ রতন;
তা সবে, (অবোধ আমি!) অবহেলা করি,
পর-ধন- লোভে মত্ত, করিনু ভ্রমণ
পরদেশে, ভিক্ষাবৃত্তি কুক্ষণে আচরি।
কাটাইনু বহু দিন সুখ পরিহরি।
অনিদ্রায়, নিরাহারে সঁপি কায়, মনঃ
মজিনু বিফল তপে অবরেণ্যে বরি; –
কেলিনু শৈবালে; ভুলি কমল-কানন!
স্বপ্নে তব কুললক্ষ্মী কয়ে দিলা পরে –
‘ওরে বাছা, মাতৃকোষে রতনের রাজি,
এ ভিখারী-দশা তবে কেন তোর আজি?
যা ফিরি, অজ্ঞান তুই, যা রে ফিরি ঘরে!’
পালিলাম আজ্ঞা সুখে; পাইলাম কালে
মাতৃ-ভাষা-রূপে খনি, পূর্ণ মণিজালে।