১৭৫৭ সনে ইংরেজ-হিন্দু চক্রান্তে সংঘটিত পলাশি নাটকের পর ক্রমান্বয়ে প্রশাসন, বিচার, দেশরক্ষা বাহিনীসহ সকল স্তর থেকে মুসলিমদের ছাটাই করতে থাকে। তদস্থলে হিন্দুদের নিয়োগ দেয়া হয়। ফলে সবদিক থেকেই মুসলিমদের আয়-উপার্জন বন্ধ হয়ে যায়। ১৮৬৯ সনে কলকাতার একটি কাগজে প্রকাশিত সংবাদ তুলে ধরছি। সেখানে লেখা হয়,
‘উচ্চস্তরের বা নিম্নস্তরের সকল চাকরি ক্রমান্বয়ে মুসলমানদের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে অন্যান্য সম্প্রদায়ের মধ্যে, বিশেষ করে হিন্দুদের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে। সরকার সকল শ্রেণির প্রজাকে সমান দৃষ্টিতে দেখতে বাধ্য; তথাপি এমন সময় এসেছে যখন মুসলমানদের নাম আর সরকারি চাকরিয়াদের তালিকায় প্রকাশিত হচ্ছে না; কেবল তারাই চাকরির জায়গায় অপাঙক্তেয় সাব্যস্ত হয়েছে। সম্প্রতি সুন্দরবন কশিনারের অফিসে কতিপয় চাকরিতে লোক নিয়োগের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়, কিন্তু অফিসারটি সরকারি গেজেটে কর্মখালীর যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন তাতে বলা হয় যে, এই শূণ্য পদগুলোতে কেবলমাত্র হিন্দুদের নিয়োগ করা হবে।’ [দূরবীন, জুলাই ১৮৬৯]
আমল ব্রিটিশ ইংরেজ, শাসন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি, সহযোগী হিন্দু, প্রতিপক্ষ মুসলিম।ইসলাম অনুসারীরা খ্রিস্টান ও ব্রাহ্মণ্যবাদীদের প্রধান শত্রু হয়ে দাঁড়ায়। ১৮ শতকের শেষার্ধ ও ১৯ শতক জুড়ে চলে মুসলিমদের অর্থ সম্পদ, জমি-জিারত দখলের মহোৎসব। একই সাথে তাণ্ডবলীলা চলে তাওহিদবাদীদের ওপর।মুসলমানদের অর্থবিত্ত, চাকরি-বাকরি সবই দখল করে খ্রিস্টান ও বর্ণহিন্দুরা। মুসলমানদের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে ব্রিটিশ সিভিলিয়ান উইলিয়াম হান্টার লিখেছেন,
‘একশ সত্তর বছর আগে বাংলার কোন সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের সন্তানের দরিদ্র হয়ে পড়া ছিল প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। কিন্তু বর্তমানে তার পক্ষে ধনী হওয়াটাই প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।’ [দি ইন্ডিয়ান মুসলিমস,পৃ ১৩৭]
[সূত্র: ডব্লিউ ডব্লিউ হান্টার: দি ইন্ডিয়ান মুসলিমস, এম, আনিসুজ্জামান কর্তৃক তরযমাকৃত, খোশরোজ কিতাব মহল, বাংলাবাজার ঢাকা-১১০০, পুনর্মুদ্রণ ২০০০]