আমি একজন ডটকম সাংবাদিক!

জাকিরুল আহসান

একযুগেরও আগের কথা। সালটা সম্ভবত ২০০৫। বরিশালের আঞ্চলিক পত্রিকায় লেখালেখি করছি। দৈনিক দক্ষিণাঞ্চল পত্রিকা থেকে রফিকুল ইসলাম ভাইয়ের সঙ্গে পরিচয়। তিনি তখন পত্রিকাটির বার্তা সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন (বর্তমানে কালের কণ্ঠের ব্যুরো প্রধান)। তার আগে একই পদে ছিলেন কাওসার হোসেন রানা ভাই (প্রাচুর্য রানা) (বর্তমানে চ্যনেল২৪ এর বরিশাল প্রতিনিধি), আর তারও আগে ছিলেন আযাদ আলাউদ্দীন ভাই (বর্তমানে দৈনিক নয়া দিগন্তের বরিশাল ব্যুরো প্রধান। তাদের প্রত্যেকের আমার সাংবাদিকতার বেসিক শিক্ষায় অবদান রয়েছে। আরো যাদের অবদান রয়েছে তারা হলেন নয়ন মুরাদ- বার্তা সম্পাদক নাগরিক বার্তা, দেবাশীষ চক্রবর্ত্তী- সাবেক বার্তা সম্পাদক বরিশাল বার্তা, নজরুল বিশ্বাস- সাবেক সভাপতি বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটি, মেহেদী হাসান রাহাত- জয়েন্ট নিউজ এডিটর বাংলাদেশ প্রতিদিন।

যা-ই হোক এবার আসল প্রসঙ্গে আসি। অন্য কোনদিন এ বিষয়ে লেখা যাবে। ২০০৫/২০০৬ এর দিকে রফিক ভাই আঞ্চলিক পত্রিকার পাশাপাশি জাতীয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল বিডিনিউজ-এ কাজ করতেন। বিডিনিউজই প্রথম দেশে অনলাইন সাংবাদিকতার পথ দেখায়। নতুন এই কনসেপ্ট নিয়ে অল্প সময়ের মধ্যেই জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল হিসেবে পরিচিত লাভ করে। অনলাইন যে গ্রহণযোগ্য হতে পারে তার বাস্তব রূপ দেয় বিডিনিউজ। আর আমি রফিক ভাইয়ের কাছ থেকে অনলাইন নিউজ পোর্টালের প্রথম ধারণা পাই। তখন মজা করে অনেকেই রফিক ভাইকে বিডি রফিক বলে ডাকতেন। তিনি বরিশালের গণমাধ্যম জগতে বিডি রফিক নামে বেশি পরিচিত হয়ে গেলেন। আমাদের সহকর্মী তৎকালীন ফটো সাংবাদিক জসিম জিয়া (বর্তমান দৈনিক কীর্তণখোলা পত্রিকার বার্তা সম্পাদক) দেখা হলেই বিডি নিউজের রফিক ভাইকে ইঙ্গিত করে বলতেন বিডি ফুড, গুড ফুড…। এতে রাগ করতেন না রফিক ভাই… বরং মজা করে বলতেন তোমার এই ডায়লগ শুনতে খুব ভালো লাগে।

কিছুদিন পর আমি ঢাকায় চলে যাই। কাজ করি বিভিন্ন পত্রিকায় এবং টেলিভিশনে। এরপর একটি অনলাইন পোর্টালে কাজ করার ডাক পেলে আর হাতছাড়া করিনি। পত্রিকা, টেলিভিশন মাধ্যমে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকলেও অনলাইনে কাজ করার অভিজ্ঞতা ছিল না। এটা খুব সম্ভব ২০১৪ সালের দিকে। এ সুযোগটি করে দেন এসএ টেলিভিশনের চিফ রিপোর্টার এম এম বাদশা ভাই। এরপর অনলাইন পোর্টালে কাজের ধরন-কৌশল শেখাতে যিনি সর্বোচ্চ অবদান রেখেছেন তিনি হলেন লিয়াকত আমিনী ভাই। বর্তমানে তিনি ঢাকা টাইমস এর মফস্বল সম্পাদক পদে কর্মরত আছেন। এরপর বিভিন্ন অনলাইনে কাজ করার সুযোগ হয়েছে। জেনেছি তথ্য প্রযুক্তির এগিয়ে যাওয়ার অনেক টুকিটাকি। কারণ এই মাধ্যমে শুধু নিউজ লিখতে জানলেই হবে না, তথ্য প্রযিুক্তি সম্পর্কেও প্রশিক্ষণ থাকতে হবে।

অনলাইনে সাংবাদিকতা নিয়ে অনেক কটু কথাও শুনতে হয়েছে। কয়েক বছর আগেও বলতে শুনতাম ‘কি কম কমে চাকরি করো!’ আবার কেউ বলেন ‘ডটকম ফটকম কি এসব পত্রিকা’। যদিও বেশিদিন স্থায়ী হয়নি সে অবস্থার। পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। দেশের সকল জাতীয় দৈনিক অনলাইন ভার্সন নিয়ে এসেছে। বাদ যায়নি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলো। অধিকাংশ চ্যানেলের অনলাইন পোর্টাল চালু করা হয়েছে। তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে মানুষ প্রতি মুহূর্তে সংবাদ জানতে চায়। মোট কথা হচ্ছে সময়কে অস্বীকার করার উপায় নেই। সময় এগিয়েছে, এগিয়েছে তথ্য-প্রযুক্তি।

তবে আলোচনা হতে পারে কাজের কোয়ালিটি নিয়ে। নামেমাত্র কিছু অনলাইন বাজারে এসেছে যেগুলো সাংবাদিকতার নামে অপসাংবাদিকতার চর্চা করছে। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। এজন্য অনলাইনে যারা কাজ করেন তাদের ঢালাওভাবে দোষারোপ করা যাবে না। ওইসব অসাংবাদিকদের কারণে বিব্রত হচ্ছে গোটা গণমাধ্যম জগৎ। সেটা যে কেবল অনলাইন পত্রিকার মাধ্যমে হচ্ছে তা কিন্তু নয়। আন্ডারগ্রাউন্ড অনেক প্রিণ্ট পত্রিকার তথাকথিত সাংবাদিক নামধারীরাও এ জন্য দায়ী। অনলাইনের ক্ষেত্রে আশার খবর হলো বিডিনিউজ, বাংলানিউজের মতো কয়েকটি নিউজেোপর্টাল পাঠক মহলে এত গ্রহণযোগ্য, যা কোন কোন প্রিণ্ট পত্রিকার চেয়েও বেশি। আরেকটি আশার কথা – বর্তমান সরকার অনলাইন পত্রিকায় শৃঙ্খলা ফেরাতে আন্তরিক। ইতোমধ্যে রেজিস্ট্রেশনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আবেদন আহবান করার পর, সেগুলোর যাচাই-বাছাই চলছে। আমরা চাই যত দ্রুত সম্ভব সরকার যেন রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া শুরু করে। এতে করে অপেশাদার লোকজন দিয়ে পরিচালিত অনলাইন পত্রিকার সংখ্যা কমে আসবে। একই সঙ্গে কমবে অসাংবাদিকদের দাপট।

অনেকে এখনও অনলাইন নিয়ে হাসি ঠাট্টা করতে ছাড়েন না। অনলাইন নিউজ পোর্টাল নিয়ে উপহাস করার কিছু নেই। করোনা ভাইরাসের এই আপদকালীন সময়ে খেয়াল করলে দেখবেন অনেক জাতীয় পত্রিকা প্রিণ্ট ভার্সন বন্ধ রেখে শুধুমাত্র অনলাইন ভার্সন চালু রাখতে বাধ্য হয়েছে। অর্থাৎ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময় অনলাইন নিউজ পোর্টালের বিকল্প ভাবাই যায় না। এজন্য অনলাইনে কাজ করি বলে কখনো হীনমন্যতায় ভুগি না, মজা করে বন্ধুদের মাঝে মাঝে বলি “আমি একজন ডটকম সাংবাদিক”।

 

জাকিরুল আহসান, বার্তা সম্পাদক, রূপালীবার্তা ডটকম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *