মাহমুদ ইউসুফ।।
মহাবীর বখতিয়ার খলজির নেতৃত্বে ১২০৫ সালে বঙ্গবিপ্লব সম্পন্ন হয়। অত্যাচারী সেনরাজার পতন ঘটিয়ে বখতিয়ারের বাঙলা বিজয় ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ ঘটনাসমহের মধ্যে অন্যতম। বিশ্ব ইতিহাসে মাত্র ১৭জন ঘোড়সওয়ার নিয়ে রাষ্ট্রবিপ্লবের ঘটনার নজির দ্বিতীয়টি আর নেই। ইখতিয়ারউদ্দিন বখতিয়ারকে আমজনতা স্বাদরে সম্বর্ধনা জানায়। ধর্ম,বর্ণ, শ্রেণি তথা সকল সম্প্রদায় তাঁর আবির্ভাবে উৎফুল্ল হয়। এলিটসোসাইটি নাখোশ হলেও জনগণ বখতিয়ারের আগমনকে প্রভুর আর্শিবাদ হিসেবে গ্রহণ করে। বখতিয়ারও তাদের মনঃসন্তুষ্ট করতে সক্ষম হয় জনহিতকর কাজের মাধ্যমে। শুরু হয় বাঙালা ভাষা, বাঙালি জাতি, বাঙালি সভ্যতার অভিযাত্রা। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত লিখেছেন, ‘বখতিয়ার খলজি দিল্লি সুলতানের অধীন একটি প্রাদেশিক সরকার লাখনৌতিতে গঠন করেন এবং ক্রমে ক্রমে রাঢ়, গৌঢ় ও বরেন্দ্র এলাকা দখল করেন। তিনি মগধ ও মিথিলা বিজয় করে বঙ্গে আসেন এবং কামরূপ ও তিব্বতের বিরুদ্ধে অভিযান চালান। তিনি বিহার রাজ্যের নামকরণ করেন। তিনি বাংলায় সুশাসন প্রতিষ্ঠা করেন এবং শিল্পকলা ও সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষকতা করেন।’ (আবুল মাল আবদুল মুহিত: বাংলাদেশ: জাতিরাষ্ট্রের উদ্ভব, সাহিত্য প্রকাশ, প্রথম প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি ২০০০, ৫১ পুরানা পল্টন ঢাকা-১০০০, ISBN 984-465-219-17, পৃষ্ঠা ২৫)
২
মহামতি শেখ আউয়াল ছিলেন ব্যবিলনীয় সভ্যতার জান্নাতজমি ইরাকের নাগরিক। বাঙলার অধিবাসীদের মাঝে ইসলামের শান্তির বাণী প্রচারে আসেন ইসায়ি পঞ্চদশ শতকে। সম্ভবত ১৪৬৩ খ্রিস্টাব্দের দিকে এ দরবেশ চলে আসেন মেঘনা বিধৌত সোনারগাঁও। তখন সোনারগাঁও ছিলো বিশ্বসভ্যতার পাদপীঠ। আমাদের প্রিয় বঙ্গবন্ধু তাঁরই বংশের এক সৌভাগ্যবান অধস্তন বংশধর। জন্ম ১৯২০, মৃত্যু ১৯৭৫। বঙ্গবন্ধু শেখ আউয়াল দরবেশেরই সপ্তম অধস্তন বংশধর। বঙ্গবন্ধুর বংশীয় ঊর্ধ্বতনদের খ্যাতনামা আরেক ব্যক্তি হলেন শেখ বোরহান উদ্দিন, যিনি দরবেশ শেখ আউয়ালের ছেলে শেখ জহির উদ্দিনের দৌহিত্র ছিলেন আর শেখ বোরহান উদ্দিনের বাবা ছিলেন শেখ জান মাহমুদ ওরফে তেকড়ি শেখ। তেকড়ি শেখের ছেলে শেখ বোরহান উদ্দিন তাঁর জনৈক বন্ধুর কাছে মধুমতি ও ঘাঘোর নদীদ্বয়ের মাঝখানে গড়ে ওঠা টুঙ্গিপাড়া গ্রামের কথা জানতে পারেন। পরবর্তীতে বন্ধুকে নিয়ে রূপসা নদী অতিক্রম করে তিনি চলে আসেন টুঙ্গিপাড়া, বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন এক কাজি পরিবারে এবং আজীবনের তরে এখানেই স্থায়ী নিবাস গড়ে তোলেন। আর এভাবেই বিখ্যাত শেখ পরিবারের গোড়াপত্তন হয় ঐতিহাসিক টুঙ্গিপাড়ার মাটিতে। শেখ বোরহান উদ্দিনের ছেলে শেখ আকরাম হলেন বঙ্গবন্ধুর বাবা শেখ লুৎফর রহমানের দাদা। [ড. মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন,http://www.bbarta24.net/reader-mail/89966]
৩
তুর্কি বীর ইখতিয়ার উদ্দিন বখতিয়ার খলজি বাঙলায় এসেছিলেন বলেই আরব, ইরাক, ইরান, আফগান প্রভৃতি দেশে থেকে তাওহিদবাদীরা আসার সুযোগ পায়। বখতিয়ারের আগমনের সূত্র ধরেই বঙ্গবন্ধুর পূর্বপুরুষ শেখ আউয়াল ইরাক থেকে বাঙলায় আসার প্রেরণা লাভ করেন। বখতিয়ারের বাঙলা বিজয় না হলে শেখ আউয়াল এদেশে আসার সুযোগ পেতেন না। আর বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর মতো ক্ষণজন্মা পুরুষও জন্মলাভ করত না। বখতিয়ার এসেছেন, দেশ গড়েছেন, ভাষার অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করেছেন বলেই বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা আনয়ন করতে পেরেছেন। একইসূত্রে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বখতিয়ারেরই উত্তরসূরী। তাই শুধু বঙ্গবন্ধু নয়, শেখ হাসিনাসহ বর্তমান সরকার, বর্তমান রাষ্ট্র, বর্তমান দেশ, বর্তমান ভূখণ্ড, বর্তমান ভাষা, শিল্প, সংস্কৃতি সবই বখতিয়ার খলজির কৃতিত্ব বহন করে চলছে।