জিল্লুর রহমান জিল্লু ।।
১৯৩৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার নাজিমুদ্দীন রোডে বাংলাদেশ বেতারের কার্যক্রম শুরু হয়। তখন এর নাম ছিল ‘ঢাকা ধ্বনি বিস্তার কেন্দ্র’ কয়েকবার বাংলাদেশ বেতারের নাম পরিবর্তন হয়ে আজকের ‘বাংলাদেশ বেতার’ নামে রুপান্তিত হয়েছে।
বাংলাদেশ বেতার এখন ৮৩ বছরে পদার্পণ করেছে। জাতিসংঘ রেডিও প্রতিষ্ঠার দিন ১৯৪৬ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারিকে ‘বিশ্ব বেতার দিবস’ হিসেবে নির্ধারিত হয়। ২০১১ সালের ৩ নভেম্বর জাতিসংঘের অঙ্গ সংস্থা ইউনেস্কোর সাধারণ সভায় ‘১৩ ফেব্রুয়ারি-কে বিশ্ব বেতার দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে। ২০১২ সালে থেকে প্রতি বছর ১৩ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব বেতার দিবস পালিত হয়ে আসছে। বিশ্ব বেতার দিবস ভাষার মাস ফেব্রুয়ারিতে হওয়ায় বাংলাদেশের জন্য একটি বারতি মাত্রা যোগ করেছে।
বিশ্ব বেতার দিবস পালনের মূল উদ্দেশ্য বেতার মাধ্যমের গুরুত্ব সম্পর্কে জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি, মানুষকে বেতারের মাধ্যমে তথ্য প্রদান, দেশি ও বিদেশি গণমাধ্যমের মধ্যে আন্তঃসংযোগ জোরদার করা। বাংলাদেশ বেতার বিশ্ব বেতারের মূল উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন এবং বাংলাদেশের মানুষের সার্বিক উন্নয়নে তথ্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বাংলাদেশ এই দিনটি যথাযথভাবে গুরুত্ব সহকারে উৎযাপন করে থাকে। এই দিনটি বাংলাদেশ বেতারকর্মী এবং বেতার শ্রোতাদের জন্য একটি মহাউৎসবের দিন হিসেবে গণ্য।
ডিজিটাল বাংলাদেশের আদলে বাংলাদেশ বেতারকে যুগউপযোগী করার পাশাপাশি বেতারের নানামূখী কার্যক্রম গ্রহণের কারনে বেতারে বিপুল শ্রোতা সমাগম ঘটছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মানে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভুদ্ধ অন্যতম সহযোদ্ধা ‘স্বাধীন বাংলা বেতার’ থেকে শুরু করে আজ অবধী বাংলাদেশ বেতার তথ্য, শিক্ষা, বিনোদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ প্রচার করে `স্বাধীন বাংলা বেতার’ অবিস্মরণীয় ভূমিকা পালন করে। সবচেয়ে সহজলভ্য, ভালো শ্রবণমান সম্পন্ন, সহজে প্রাপ্যতার গণমাধ্যম হচ্ছে বাংলাদেশ বেতার। এক সময় বাংলাদেশ বেতার ছিল বাংলাদেশে প্রতিটি মানুষের একমাত্র প্রিয় বিনোদন মাধ্যম। বর্তমানেও তুমুল জনপ্রিয় গণমাধ্যম হচ্ছে বাংলাদেশ বেতার। বিশেষ করে তরুন সমাজ বেতারের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে সমাজের নানান কুসংস্কার দূর করে জনকল্যাণ মূলক সামাজিক কার্যক্রম পালন করে। শ্রোতা ক্লাব সমূহ অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ায়, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, দুর্যোগকালীন সময়ে সহযোগীতা করা, শীতের দিনে শীতবস্র বিতরণ, টিকাদান কর্মসূচী পালনসহ বিভিন্ন সেবামূলক কাজ করে থাকে। বেতারে ডাকযোগে, ই-মেইলে, মোবাইলে কিংবা ফেসবুকের মাধ্যমে যেকোন সময় যে কোন মতামত শ্রোতারা পাঠাতে পারেন।
বাংলাদেশ বেতার দেশের গন্ডি পেরিয়ে আমাদের পাশ্ববর্তী দেশ ভারতের শ্রোতাদের কাছে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। শ্রোতারা প্রতিদিন আগ্রহ সহকারে বেতার শোনেন এবং মতামত জানায় । ছন্দে ছন্দে বলা যায়,
‘‘বেতার শোনে জ্ঞানী গুণী
শোনে আম জনতা।
দিনে দিনে শিখছে তারা,
শিষ্টাচার আর সভ্যতা।’’
বেতার মানবজাতিকে তথ্য প্রদান করে, পরিবর্তন, পরিবর্ধন, পরিমার্জন করে সকল মানুষকে একটি প্লাট ফর্মে একিভূত করে। বেতার মানুষের পুরোন ধ্যান-ধারনা দূর করে সংস্কারের পথে বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে সাহায্য করে। নতুন পথের আলোর দিশারী বাংলাদেশ বেতার। অভীষ্ঠ লক্ষ্য অর্জনে প্রতি সেশনে নতুন নতুন অনুষ্ঠান সংযোজনের মাধ্যমে মানসম্মত অনুষ্ঠান উপহার দেয়ার চেষ্টা করে বাংলাদেশ বেতার।
বাংলাদেশ বেতার, কেন্দ্রীয় বেতার ঢাকা, ঢাকা-ক, ঢাকা-খ, বাণিজ্যিক কার্যক্রম, বাংলাদেশ বেতার চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ বেতার রাজশাহী, বাংলাদেশ বেতার খুলনা, বাংলাদেশ বেতার রংপুর, বাংলাদেশ বেতার সিলেট, বাংলাদেশ বেতার বরিশাল, বাংলাদেশ বেতার ঠাকুরগাঁও, বাংলাদেশ বেতার কক্সবাজার, বাংলাদেশ বেতার রাঙামাটি, বাংলাদেশ বেতার কুমিল্লা, বাংলাদেশ বেতার ময়মনসিংহ, বাংলাদেশ বেতার গোপালগঞ্জ, কেন্দ্রীয়, আঞ্চলিক, উপকেন্দ্র সমূহ, বর্হিবিশ্ব কার্যক্রমসহ, মধ্যম তরঙ্গ ও এফ এম এ একযোগে ২৭৭ ঘাণ্টার বেশি ধরে অনুষ্ঠান প্রচার করে বাংলাদেশে বেতার। বহিরাঙ্গন অনুষ্ঠানের মাধ্যেমে মানুষকে বেতারের সাথে সম্পৃক্তার সাথে সামাজিক মূল্যবোধ জাগ্রত করে। বর্তমানে বাংলাদেশ বেতার অনলাইনের সাথে যুক্ত হয়েছে। ফেসবুক, বেতার অ্যাপস, ইউটিউব, লাইভ বেতারের মাধমে প্রতিটি কার্যক্রম যুক্ত হয়ে বেতার শোনা যায়।
বেতার তথ্য, শিক্ষা, বিনোদন, নৈতিক শিক্ষা, ধর্মীয় মূল্যবোধ, সংবাদ, স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা, কৃষি, আইসিটি, গণশিক্ষা, কারিগরি শিক্ষা, খেলাধূলা, সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম, নারী ও শিশু উন্নয়ন, বাল্য বিবাহরোধ, কুসংস্কার দূরীকরণ, পরিবেশ রক্ষা, জঙ্গী তৎপরতা রোধ, মাদক এর কুফল, গুজব রটানো, সন্ত্রাস, নারী নির্যাতন এর বিরুদ্ধে দাঁড়াতে, দুর্যোগের সময় মানুষকে নিরাপদে অবস্থানের আহ্বানের সাথে দুর্যোগকালীন করণীয় সম্পর্কে সচেতন করে, ট্রাফিক সম্পর্কে সচেতন, ভেজাল, দুর্নীতিসহ সমাজের নানান অসংগতির দূর করার জন্য বাংলাদেশ বেতার প্রতিনিয়ত মানুষকে সচেতন করে আসছে। বাংলাদেশ বেতারের এই চলামান গতি স্বাধীনতার চেতনায় অসাম্প্রদায়িক বাঙালি জাতিকে আরো বহুদূর এগিয়ে নিয়ে যাবে এই চাওয়া প্রতিটি বেতার ভক্ত নাগরিকের। বাংলাদেশ বেতার সবসময় সবার সাথে আছে এবং থাকবে এই প্রত্যাশা আমাদের।
জিল্লুর রহমান জিল্লু
আবদুল্লাহ সড়ক
কাশিপুর, বরিশাল-৮২০৫
০১৭১৮-২৮৬৮৭৮
ধন্যবাদ মুক্তবুলি সম্পাদক মহোদয়