ড. অমর্ত্য সেন
২০১৯ সনের আগস্টে (২৭.০৮.২০১৯ তারিখ) ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ, কলকাতার প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে বক্তৃতা করেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড: অমর্ত্য সেন। বক্তব্যের বিষয় ছিল বাঙালি হওয়া। আলোচনা সভায় তিনি বলেন, বাংলা ক্যালেন্ডার ৯৬৩ বছর গােনা হয়েছিল ইসলামি চান্দ্রমাস অনুসারে।
সেদিন তিনি জানতে চান,বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী এই ১৪২৬ সনের তাৎপর্য কী? অমর্ত্য সেন নিজেই জবাব দিলেন,‘ হজরত মহম্মদের মক্কা ছেড়ে মদিনায় চলে যাওয়ার পর কতগুলাে বছর কেটে গেল, এটা তারই হিসেব।’ অবশ্য , মিশ্র হিসেব। প্রথম ৯৬৩ বছর গােনা হয়েছিল ইসলামি চান্দ্রমাস অনুসারে, তার পরের বছরগুলাে হিন্দু সৌরমাসের হিসেবে।
তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, আজকের যে বাঙালি জাতি তা বহু সংস্কৃতির মিশ্রণ। সব ভালো কিছু নিয়ে বাঙালি।
নোবেলজয়ী তাঁর বক্তৃতায় ষােড়শ শতাব্দীর চণ্ডীমঙ্গলের প্রসঙ্গ টেনে বাঙালিকে মনে করিয়ে দিলেন, বঙ্গে মুসলমানদের আগমনে হিন্দুরা অসন্তুষ্ট হননি, বরং খুশি হয়েছিলেন, কারণ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়ায় বাঘের উৎপাত কমেছিল বহুলাংশে। যে ঢাকার মসলিন এক কালে বিশ্বব্যাপী প্রসিদ্ধি লাভ করেছিল, এমনকি, অ্যাডাম স্মিথকে দিয়েও বলিয়ে নিয়েছিল বাংলার সমৃদ্ধির কথা, তা তৈরি হয়েছিল হিন্দু মুসলমানের সহযােগিতায়।
বাঙালির দীর্ঘদিনের যে ঐতিহ্য, যে ইতিহাস তা খুব শক্তিশালী এবং তাকে সহজে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি দিয়ে ভাঙা সম্ভব নয়। অমর্ত্য সেন বারবার সেই বাঙালি ঐক্যের কথা বললেন। হিন্দু মুসলিম,খ্রিস্টান সবার যৌথ চেষ্টায় যে বাংলা গড়ে উঠেছে তার ভিত অনেক শক্তিশালী।
শুধুই কি হিন্দু-মুসলমানের যৌথতা? আদি সংস্কৃতে শব্দের লিঙ্গভাগ যেখানে প্রবল, সেখানে বাংলা ভাষা, বিশেষত ক্রিয়াপদ, লিঙ্গনিরপেক্ষ কেন? অমর্ত্য জানালেন, বাংলা ভাষা এ পথে গিয়েছে মাগধী প্রাকৃতের বিবর্তনের সূত্রে। আবার, দীর্ঘ এক হাজার বছরের বৌদ্ধ শাসন। বাংলার সংস্কৃতিতে এমন সব প্রভাব রেখে গিয়েছে, ভারতের অন্য কোনও অঞ্চলে যার তুলনা মেলা ভার।
টিডিএন বাংলা, কলকাতা, আগস্ট ২৯, ২০১৯
[https://www.tdnbangla.com/news/national/nobel-laureate-amartya-sen-says-bengali-calendar-was-sung-for-five-years-according-to-islamic-chandramas/]