আযাদ আলাউদ্দীন
২০০৪ সাল। আমি তখন বিএম কলেজের বাংলা বিভাগে মাস্টার্স শেষ বর্ষে অধ্যয়নরত। অনার্স লাইফে পড়ালেখা আর ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকতায় কেটে গেছে পুরো সময়। অনার্সের তিন বছরে সহপাঠী বন্ধুরা যখন ক্লাস শেষে বিরতির সময় সেমিনারে পারস্পরিক আড্ডায় মশগুল থাকতো- তখন আমার ঠিকানা ছিলো- কলেজের সামনের পাবলিক লাইব্রেরি। সেখানে বসে পত্রিকা, ম্যাগাজিন আর বই পড়া-ই ছিলো আমার প্রধান কাজ। কোনো পত্রিকা বা ম্যাগাজিনে আমার লেখা ছাপা হলো কিনা? তা খুঁজে দেখাও ছিলো তার অন্যতম। আবার সময় মতো ক্লাসে ফিরে যাওয়া।
যেমন আমাদের প্রথম ক্লাস শুরু হতো সকাল সাড়ে আটটায় বাণিজ্য ভবনের চতুর্থ তলায় D-26 নম্বর কক্ষে। এর পরের ক্লাস হতো ১১টায় । একটি ক্লাস থেকে পরবর্তী ক্লাসের এই সময়টুকু বন্ধুরা সবাই সেমিনারে আড্ডায় কাটিয়ে দিতো। আর তখন আমার ঠিকানা ছিলো কলেজ লাইব্রেরি অথবা বরিশাল জেলা গণ গ্রন্থাগার (বর্তমান বিভাগীয় গণ গ্রন্থাগার তখনো প্রতিষ্ঠা হয়নি)।
নিয়মিত ক্লাসে যেতাম বলে সব সহপাঠি বন্ধুদেরকেই আমি ভালোভাবে চিনতাম। তারাও আমাকে চিনতো, তবে ঘনিষ্ঠ সহপাঠি বন্ধু ছিলো ১০/১২ জন। অবশ্য এখন আমাদের ক্লাসমেটদের সবার সমন্বয়ে গড়া ‘অবিরাম বাংলা বন্ধুমহল’ সমিতির কারণে সব সহপাঠিরাই আমার সবসময়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আমি এখন এই সমিতির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি।
যাইহোক, ২০০৩ সালে অনার্স ফাইনাল পরীক্ষা শেষে ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকতা ছেড়ে যোগ দেই পেশাদার সাংবাদিকতায়। (এই যোগদানের বিষয়টি নিয়ে আরেকদিন লিখবো) । দৈনিক দক্ষিণাঞ্চলের স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে যোগ দেয়ার একবছরের মাথায় একই পত্রিকার বার্তা সম্পাদক হিসেবে পদোন্নতি লাভ করি। একদিকে মাস্টার্সের পড়াশোনা অন্যদিকে বার্তা সম্পাদকের মতো রাত জেগে কাজ করার কঠিন দায়িত্ব ! দুটোই চলছিলো সমানতালে।
২০০৪ সালের মার্চ মাসের কোন একদিন ভোলার লালমোহন থেকে ফোন করলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক কৃতি শিক্ষার্থী, প্রভাষক কবি রিপন শান। তিনি বললেন- এবার বাংলা নববর্ষ উপলক্ষ্যে আমাদের সংগঠন বাংলাদেশ রোদসী কৃষ্টি সংসারের উদ্যোগে কয়েকজন গুণীজনকে বিভিন্ন বিষয়ে ‘রোদসী সম্মাননা’ প্রদান করবো। সাংবাদিকতায় এবার আপনাকে আমরা সিলেক্ট করেছি। ০৯ এপ্রিল আপনাকে লালমোহন আসতে হবে । সেদিন লালমোহন পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে আপনাদেরকে সংবর্ধিত করা হবে। তাঁর দৃষ্টিতে আমি ছিলাম তখন বরিশাল বিভাগের সবচেয়ে কমবয়সী বার্তাসম্পাদক ও কৃতি সংবাদকর্মি।
এই অনুষ্ঠানে আরো যাদের সংবর্ধনা দেয়া হয়েছিল তাদের মধ্যে ছিলেন পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি থেকে প্রকাশিত সেরা লিটল ম্যাগাজিন ‘কর্ষণ’ সম্পাদক ড. মিজান রহমান (যিনি বর্তমানে ঢাকা নটরডেম কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারি অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত এবং অর্ধশতাধিক বইয়ের লেখক ও সম্পাদক) এবং আবৃত্তিতে সম্মাননা পেয়েছেন ভোলা আবৃত্তি সংসদের সভাপতি ও ভোলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শামস-উল-আলম মিঠু।
নির্ধারিত দিনে আমি বরিশাল থেকে ভোলা শহরে পৌঁছি। সেখান থেকে মাইক্রোযোগে লালমোহন পৌছে- সন্ধ্যায় আমরা লালমোহন পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে অনুষ্ঠানিকভাবে অতিথিদের কাছ থেকে সম্মাননা গ্রহণ করি। পুরস্কার গ্রহণের দিন আমাদের ছবি ও বায়োডাটাসহ স্থানীয় সব পত্রিকায় আগাম ফিচার নিউজ ছাপা হয়। এই নিউজের পর বুঝলাম- মানুষের ভালোবাসা কাকে বলে ! সেদিন মানুষের শুভেচ্ছা ফোন আর ম্যাসেজে আমার মোবাইল ফোনের ইনবক্স আর নিজের মন- দুটোই ভরে যায়।
এরপর দীর্ঘ সাংবাদিকতা জীবনের দেড় যুগে অনেক পদক, সম্মাননা আর স্বীকৃতি পেয়েছি। কিন্তু বিএম কলেজের ছাত্র অবস্থায় পাওয়া জীবনের এই প্রথম স্বীকৃতি আমার জীবনে অমলিন হয়ে থাকবে।
সাংবাদিকতার জন্য ২০০৪ সালে প্রাপ্ত রোদসী সম্মাননা সার্টিফিকেট ও ক্রেস্ট
আযাদ আলাউদ্দীন, বরিশাল ব্যুরো চিফ, দৈনিক নয়া দিগন্ত। ০১৭১২১৮৯৩৩৮