‘আপনার নাগালেই পরিচ্ছন্ন হাত’

মুক্তবুলি প্রতিবেদক ।।
বরিশাল নগরীর উত্তর সাগরদি সরদারপাড়ায় ১৫ অক্টোবর বিকেল ৩টায় বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস উদযাপিত হয়েছে।

ইউএসএআইডি’র সহযোগিতায়- এগ্রিকালচার কো-অপারেটিভ ডেভেলপমেন্ট ইনেসিয়েটিভ- এসিডিআই এবং ভলান্টারি ওভারসীজ কো-অপারেটিভ অ্যাসোসিয়েশন- ভোকা কর্তৃক বাংলাদেশ লাইভ স্টক অ্যান্ড নিউট্রিশন প্রকল্পের আওতায় এই কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয়।

‘আপনার নাগালেই পরিচ্ছন্ন হাত’, এই স্লোগানকে কেন্দ্র করে এলাকার ১০ জন গাভী পালনকারী খামারি, প্রাণিসম্পদ সেবার সাথে জড়িত স্টেক হোল্ডারগন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
এ প্রোগ্রামের উদ্দেশ্য ও গুরুত্ব নিয়ে কথা বলেন প্রকল্পের সিনিয়র মাঠ সমন্বয়কারী ডাক্তার মোঃ রিদওয়ানুল হক, তিনি বলেন মানুষের সুস্বাস্থ্য এবং খাদ্য থেকে পুষ্টি পেতে হলে অবশ্যই হাতকে সর্বদাই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। তিনি আরো বলেন, মানুষের হাতের মাধ্যমে গবাদি প্রাণির ম্যাস্টাইটিস বা ওলান ফুলা রোগ হয়, এ রোগ থেকে গবাদি প্রাণিকে কিভাবে রক্ষা করা যায় তারও কৌশল তিনি তুলে ধরেন। এছাড়া তিনি প্রকল্পের বেসলাইন সার্ভের মাধ্যমে কত শতাংশ লোক পায়খানার পরে, খাদ্য গ্রহণের আগে এবং গবাদি প্রাণি প্রতিপালনের ক্ষেত্রে সাবান পানি দিয়ে হাত ধৌত করেন তাও ব্যাখ্যা করেন।

অনুষ্ঠানের সভাপতি মীর্জা করপোরেশন ও ডেইরি ফার্মার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মীর্জা ইফতেখারুল ইসলাম জেনিথ বলেন, হাত হচ্ছে বিভিন্ন রোগের বাহক এবং আমরা প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের কাজ এই হাতের মাধ্যমে সম্পাদন করে থাকি, তাই সাবান পানি ব্যবহারের মাধ্যমে আমাদেরকে সবসময় হাত পরিষ্কার রাখতে হবে। সাবান পানির মাধ্যমে হাত ধোয়ার কৌশল সকলকে প্রদর্শনী করে দেখানো হয়।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রকল্পের মাঠ সমন্বয়কারী পলাশ কুমার ঘোষ, এছাড়া এ প্রকল্পটি জেলা প্রশাসন ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর আয়োজিত বিশ্ব হাত ধোয়া দিবসে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। ##

জন্ডিসের সাথে বসবাস, হেপাটাইটিস শুনলে ভয়!

মো. মমিন উদ্দিন রানা ।।

এবারে বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবসের প্রতিপাদ্য ছিলো- `Hepatitis Can’t Wait! বিশ্বে প্রতি ৩০ সেকেন্ডে একজন হেপাটাইটিস জনিত রোগে মারা যায়। বাংলাদেশে প্রতি ১২ জনে একজন আক্রান্ত। এই রোগ সম্পর্কে সবাইকে জানানো ও সচেতনতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। হেপাটাইটিস আমাদের কাছে জন্ডিস হিসাবেই ব্যাপক পরিচিত। এজন্য জন্ডিসের প্রাথমিক উপসর্গগুলো দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন। সম্ভব হলে হেপাটাইটিস পরীক্ষা করে নেগেটিভ আসলে টিকা দেয়া শুরু করা যেতে পারে।

আমি ছোট বেলা থেকে বার্ষিক/স্মার্ষিক ‘ঝাড়ফুঁক’ দিয়ে জন্ডিসের চিকিৎসা নিয়েছি। যখন শহরে পড়াশোনা করতাম তখন ছুটিতে বাড়িতে গেলেই মা পাশের গ্রামের বৈদ্য-কবিরাজের কাছে পাঠাতেন। যদিও এসবে আমার কোন বিশ্বাস ছিল না। মঝে মধ্যে আমি যেতে চাইতাম না, মা সিস্টেম করে পাশের বাড়ির এক মহিলাকে নিয়ে আসতেন। তখন পিড়িতে বসে তার কথিত চিকিৎসার শিকার হতাম। চিকিৎসা সারঞ্জমের মধ্যে চুন, এক ধরণের গাছের পাতা (স্থানীয় বাসায়-বয় পাতা) আর বৈদ্য/কবিরাজের স্বপ্নে অথবা উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া দোয়া/মন্ত্র দিয়ে কাজ শুরু করেন।

একবার আমার এক মামা বিদেশ যাওয়ার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। আমাদের দেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্যে কোন শ্রমিক গেলে তাদের মেডিক্যাল রিপোর্ট জমা দিতে হয়। তিনি ঢাকায় যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার নমুনা দিয়ে এসেছেন। কিছুদিন পর উনার রিপোর্টে দেখা গেল ‘হেপাটাইটিস বি’ পজিটিভ। তার তো চিন্তার শেষ নেই! কিভাবে কি করা যায়? এবার চিকিৎসার উপায় খুঁজতে বের হলেন। আমি তাকে নিয়ে একজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে গেলাম। ডাক্তার যা বললেন তার মানে হলো- হেপাটাইটিস বি সারানোর সুযোগ নেই। বিশেষ কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করে এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। যাদের এই ভাইরাস নাই তারা টিকা দিতে পারেন। ফলে তাদের শরীরে এন্টিবডি তৈরি হয়। কিন্তু অলরেডি যাদের শরীরে এই ভাইরাসটি বাসা বেধেছে তাদের আর টিকা দেয়ার সুযোগ থাকেনা। ডাক্তার যা বুঝালেন তাতে আমরা খুব হতাশ হয়ে বাসায় ফিরেছি।

হঠাৎ মামি একদিন পোস্টারের একটা ছবি নিয়ে হাজির। আগ্রহ নিয়ে পড়ে দেখি কত বড় ভন্ডামি! ‘আপনি কি বিদেশ যেতে পারছেন না? হেপাটাটিস বি পজিটিভ? তাহলে আপনাকেই বলছি। আমরাই প্রথম শতভাগ গ্যরান্টিসহ…।’ আমি যতোই ডাক্তারের কথা স্মরণ করে দিতে চাই, ততই মামা বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হচ্ছে। অবশেষে ৪৮ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে গেলাম সেখানে। কথার পেছে আটকা অতঃপর টাকা জমা দেয়া, কাজের কাজ কিছুই হলোনা।

আমাদের তজুমদ্দিন উপজেলার গোলাম রাকিব রাজিব ভাই রাজধানীর একটি নামকরা বেসরকারি হাসপাতালের এডমিন আফিসার। চিকিৎসা সেবা তার এক ধরণের নেশা। নিজ উপজেলার মানুষের কথা শুনলে আরও বেশি এগিয়ে আসেন। চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে আমি উনার পরামর্শে বেশি ভরসা পাই। একদিন হেপাটাইটিস নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটা ফেসবুক পোস্ট দিলেন। ভাইর পরামর্শে আমি ওই দিনই হেপাটাইটিস পরীক্ষা করলে রেজাল্ট নেগেটিভ আসে। পরে ‘হেপা-বি এডাল্ট’ টিকা দিয়েছি। রাকিব ভাই’র সহযোগিতায় নিজ উদ্যোগে পরীক্ষা করে টিকা দেয়ার ব্যবস্থা করেছি। যাদের রেজাল্ট নেগেটিভ ছিল তাদের ডাক্তারের পরামর্শে পাঠিয়েছি।

বর্তমান সময়ে আমদের এই রোগ প্রতিরোধে সরকারিভাবে শিশুদের টিকা দেয়া হচ্ছে। যারা টিকা পাইনি বা নেয়ার সুযোগ হয়নি আমাদের এই বিষয়টিতে গুরুত্ব দেয়া দরকার।

মো. মমিন উদ্দিন রানা
শিক্ষার্থী, পরিসংখ্যান বিভাগ, সরকারি বিএম কলেজ, বরিশাল

করোনাকালীন রোজা ও আন্তর্জাতিক গবেষকদের ভাবনা

আহমেদ বায়েজীদ
.
পবিত্র মাহে রমজান। মুসলিমদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই মাসটি যখন চলছে, তখনো বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারী বিরাজ করছে। তাই রোজা রাখলে করোনার ঝুঁকি বাড়বে কি না সেটি নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
করোনা সচেতনতা হিসেবে চিকিৎসকরা বলেন, বার বার পানি পান করতে- যার ফলে গলা শুষ্ক থাকবে না এবং বেশি বেশি তরল খাবার খেতে, যাতে শরীরে পানি শূন্যতা দেখা না দেয়। যেহেতু রোজা রাখলে শরীর কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়ে, আবার বারবার খাবার গ্রহণেরও সুযোগ নেই। এই গরমে রোজা রাখার ফলে পানি শূন্যতাও দেখা দিতে পারে। তাই রোজা রাখলে কি করোনার ঝুঁকি বাড়বে? করোনায় আক্রান্ত হলে রোজা কি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেবে? শরীরে পানি শূন্যতা তৈরি করবে? যেটি হলে করোনায় মৃত্যু ঝুঁকি বেড়ে যায়। এমন প্রশ্ন জাগছে অনেকের মনে।
.
বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ও চিকিৎসকরা এই সময়ে প্রচুর তরল খাবার খেতে ও গরম পানি দিয়ে গার্গল করতে বলেন। যাতে গলা, শ্বাসনালী ভেজা থাকে ও পানিশূন্যতা দূর হয়; কিন্তু সেটি যে করোনভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে পারবে তেমনটি কেউ বলছেন না।
বরং চিকিৎসকরা বারবরাই সতর্ক করছেন যে, নিজের ইচ্ছেমত উপায় বের করা কিংবা সোশ্যাল মিডিয়ায় যেসব বিষয় ছড়ায় সেগুলোকে ভাইরাস প্রতিরোধের উপায় হিসেবে গ্রহণ না করতে। যুক্তরাষ্ট্রের টেনেসি অঙ্গরাষ্ট্রের ভ্যান্ডারবিল্ট ইউনিভার্সিটির সংক্রামক ব্যধি বিশেষজ্ঞ ড. উইলিয়াম শাফনারের মতে, অসুস্থতার সময় চিকিৎসকরা বেশি করে তরল খাদ্য গ্রহণ করতে বললেও সেটি কিন্তু ভাইরাস সংক্রামন রোধে কোন কাজে আসে না।
প্রতিদিন কমপক্ষে ২ লিটার পানি পান করলে শরীর সবল থাকে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ে; কিন্তু এর সাথে করোনা আক্রমণের কোন সরাসরি সম্পর্ক নেই।
.
রোজা ও বিজ্ঞান
সাম্প্রতিক অনেক গবেষণায় দেখা গেছে সুস্থ ও দীর্ঘ জীবনের জন্য রোজা একটি দরকারি জিনিস। ব্রিটেন ভিত্তিক ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অন এজিং কয়েক দশক ধরে বিভিন্ন প্রাণী ও মানুষের ওপর গবেষণা করে প্রমাণ পেয়েছে যে, মাঝে মধ্যে উপবাস থাকলে তা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। ‘ইট, ফাস্ট এন্ড লিভ লংগার’ নামে বিখ্যাত একটি ডকুমেন্টারিও আছে উপবাস থাকার গুরুত্বের ওপর।
.
আলেমরা কী বলেন
দুবাই ডিপার্টমেন্ট অব ইসলামিক অ্যাফেয়ার্সের গ্রান্ড মুফতি ডক্টর আলী আহমদ মাশায়েল বলেন, রোজা ইসলামের চতুর্থ স্তম্ভ। তাই অসুস্থ ব্যক্তি ছাড়া রোজা না রাখার আর কোন অজুহাত থাকতে পারে না। কোরআনে বর্ণিত আছে- যেমন অসুস্থতা, ভ্রমণ- এসব যথাযথ কারণ ছাড়া রোজা ছাড়ার হুকুম নেই।
এই বিশেষজ্ঞের মতে, (সম্পূর্ণ সুস্থ ব্যক্তির জন্য) দুর্বল বা অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে এই ভয়ে রোজা ছাড়া যাবে না। তেমন অনুমতি ইসলাম দেয়নি। চিকিৎসকের পরামর্শে, কোন অসুস্থ ব্যক্তি যদি আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে এমন শঙ্কা থাকে তবে তার ক্ষেত্রে ছাড় রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, রোজা দেহ ও আত্মার পরিশুদ্ধির জন্য। আধুনিক বিজ্ঞানেও সেটি প্রমাণিত হয়েছে। তাই করোনা সংক্রমণের ভয়ে বা করোনা হলে মোকাবেলা করতে কষ্ট হবে এমন ভয়ে রোজা ছাড়া যাবে না। তবে কেউ যদি আগেই করোনায় সংক্রমিত হন তবে তার ক্ষেত্রে চিকিৎসক পরামর্শ দিলে রোজা ছাড়া যেতে পারে।
.
আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিমত
মিসরের আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয় ফতোয়ার ক্ষেত্রে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি। তারা এক বিবৃতিতে বলেছে, মুসলিমদের যথারীতি রোজা পালন করতে হবে এবং এর ফলে করোনাভাইরাসের ঝুঁকি বৃদ্ধির কোন আশংকা নেই।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনার সাথে মিল রেখেই এই ফতোয়া জারি করেছে আল আজহার কর্তৃপক্ষ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, পানি পান ও গার্গল করার করোনা সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারে না। আল আজহারের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আমরা ডব্লিউএইচও’কে প্রশ্ন করেছিলাম এ বিষয়ে। তারা বলেছে, যদিও মানব শরীরের জন্য পানি জরুরি; কিন্তু এর ফলে ভাইরাস সংক্রমণ থেকে দূরে থাকা যাবে এমন কোন প্রমাণ নেই।
.
সূত্র: গালফ নিউজ
.
আহমেদ বায়েজীদ
স্ক্রীপ্ট রাইটার, বিডি ভিউজ

হোম আইসোলেশনে করোনা রোগীদের করণীয়

ডা. এহসানুল কবীর

# প্রথম_উপদেশ
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীরা পেটের উপর ভর করে ঘুমানোর চেষ্টা করবেন বা সামান্য কাত হয়ে বাহু বা হাতের উপর ভর করে। আমরা সচরাচর যেভাবে ঘুমাই অর্থাৎ পিঠের উপর ভর করে না ঘুমানোই শ্রেয়।
ভেন্টিলেশন ইন প্রোন বা উপুর হয়ে শোয়া অবস্থায় ফুসফুসের অক্সিজেন সরবরাহ বাড়ে ৷ এতে আপনার হাইপোক্সিক বা অক্সিজেনের ঘাটতি হওয়ার আশংকা কমে আসে এবং মস্তিষ্কে অক্সিজেনের পরিমানও বাড়ে ৷ অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ডিসট্রেস সিনড্রোম (এআরডিএস) বা তীব্র শ্বাসকষ্টের লক্ষণগুলোর চিকিৎসায়ও প্রোন ভেন্টিলেশন অনেক বড় ভূমিকা রাখে।
# দ্বিতীয়_উপদেশ
করোনায় আক্রান্ত হলে দুশ্চিন্তামুক্ত থাকতে হবে।
একটা কথা ভুলে গেলে চলবে না করোনাভাইরাস যখন ফুসফুসে আক্রমণ করে, তখন ফুসফুসের ডিপেন্ডেন্ট পার্ট বা নিচের অংশ শক্ত হতে থাকে। বায়ুথলিগুলো আর অক্সিজেন বহন করতে পারেনা ৷ যেটুকু করতে পারে সেটুকুও ধীরে ধীরে কমে আসতে থাকে।
শরীরের সংবেদনশীল অংগগুলোকে (ব্রেইন, লিভার, কিডনী) এই সামান্য অক্সিজেনের সাহায্যে টিকে থাকতে হয়। এ অবস্থায় আপনি যদি দুশ্চিন্তা করেন তবে আপনার ব্রেইনের কাজ বাড়তে থাকে ৷ ব্রেইনের মেটাবোলিজম অংশে অক্সিজেনের চাহিদা বাড়তে থাকায় ব্রেইন বেশি অক্সিজেন ব্যবহার করে ফেলে ৷ সেক্ষেত্রে বাকী সংবেদনশীল অংগগুলো মারাত্মক অক্সিজেন সংকটে পড়তে পারে ৷
# তৃতীয়_উপদেশ
করোনায় আক্রান্ত হলে শরীরকে ডিহাইড্রেটেড বা পানিশূণ্য করা যাবেনা, মোটেই না ৷ প্রচুর তরল , পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।
এই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত রোগী স্ট্রোক থেকে শুরু করে যে কোনো অ্যাকিউট ভাস্কুলার ক্রাইসিস বা তীব্র সংবহনতান্ত্রিক জটিলতায় পড়তে পারেন। ফলে পালমোনারি এমবোলিজম থেকে শুরু করে যেকোনো প্রধান সাংবহনতন্ত্রে ব্লক হতে পারে করোনা আক্রান্ত রোগীর ৷
আপনার শরীরের পানিশূণ্যতা এই স্ট্রোক লাইক সিম্পটমকে ট্রিগার করতে পারে ৷ বিশেষত করোনায় আক্রান্তদের ক্ষেত্রে হার্টের প্রধান নালীকে ব্লক করার পেছনে কোষের পানিশূণ্যতা মারাত্মক বাজে ভূমিকা রাখে৷ আপনার শরীর যদি পানিশূণ্য হয় সেক্ষেত্রে হেমোকনসেনট্রেশন হয় ৷ প্যাকড সেল ভলিয়ম বা PCV বাড়ে , রক্তের সান্দ্রতা বাড়ে, রক্ত আঠালো হয়ে যায়। এর ফলে স্ট্রোক হওয়ার প্রবণতা বাড়ে ৷
আপনি যদি করোনায় আক্রান্ত হন এবং এর কারণে যদি আপনার ডায়েরিয়া হয় তবে আপনার প্রচুর পরিমানে তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে।
শরীরকে প্রোটিন দিতে হবে ৷ নতুবা আপনার স্ট্রোক, হার্ট এটাক, মেজর ভ্যাসেল এম্বোলিজম হওয়ার আশংকা বহুগুণে বেড়ে যাবে।
সতর্ক হোন ৷ দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকুন৷ আল্লাহ সকলকে হেফাজত করুন।

ডা. এহসানুল কবীর, সহকারি অধ্যাপক, খুলনা সিটি মেডিক্যাল কলেজ, খুলনা।

মন এবং শরীর সুস্থ ও সুন্দর রাখার ২০টি টিপস

ডা. কে. এম. জাহিদুল ইসলাম

আমরা জানি স্বাস্থ্য ভালো না থাকলে মনও ভালো থাকে না। কিন্তু কিভাবে মন ও শরীর সুস্থ রাখতে হবে তা আমাদের অনেকেরই জানা নেই। তাই মন ও শরীর সুস্থ রাখার ২০টি টিপস আপনাদের সামনে তুলে ধরা হলো

১. শরীরের জন্য প্রয়োজন সবকিছুইঃ প্রতিদিন একই ধরনের খাবার কোনভাবেই খাওয়া উচিত নয়। তাই প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় বিভিন্ন রকমের ভিটামিন, মিনারেল এবং প্রোটিনযুক্ত খাবার রাখুন। তাছাড়া খাবারের গুণগত মানটাই বড়, খাবারের পরিমাণ নয়। এই যেমন প্রোটিন শরীরের ওজন না বাড়িয়ে শক্তি সরবরাহ করে, যা কোষের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

২. আঁশযুক্ত খাবারঃ খাবারের তালিকায় যথেষ্ট পরিমাণে আঁশযুক্ত শষ্যদানা রাখুন। বিশেষ করে সকালের নাস্তায় সিরিয়ালের সাথে বিভিন্ন শষ্যদানা, গম, ভুট্টা, ফল এবং দই থাকতে পারে। মৌসুমি ফল খেতে পারেন এতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ে।

৩. তাজা ফল এবং শাক-সবজিঃ প্রতিদিন খাবারের তালিকায় শিম, মটরশুনি, বরবটির মত আঁশযুক্ত সবজি ও যথেষ্ট ফল থাকা প্রয়োজন। এ সব শরীরে চিনি নিয়ন্ত্রণে যেমন সাহায্য করে তেমনি হৃদরোগ প্রতিরোধেও ভূমিকা রাখে। বাঁধাকপি, ফুলকপি ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক। যারা ফলমূল এবং শাক সবজি বেশি খান তাদের হাঁপানি বা অ্যালার্জির ঝুঁকিও কম থাকে।

৪. ফাস্টফুডকে ‘না’ বলুনঃ দোকানে তৈরি ‘ফাস্টফুড’ বা ‘রেডিমেড’ খাবার একেবারেই খাওয়া উচিত নয়। এগুলোতে লুকিয়ে থাকে প্রচুর পরিমাণে চিনি এবং নানা রকম ক্ষতিকারক জিনিস। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, শিশুদের ক্ষেত্রে ফাস্টফুড হাঁপানি হওয়ার শঙ্কা প্রায় ৪০ শতাংশ বাড়িয়ে দেয়। ৩১টি দেশের শিশুদের ওপর এক গবেষণা করে এ তথ্য জানা গেছে। তাই ছোটবেলা থেকেই স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করতে হবে।

৫. ব্রেনের জন্য খাবারঃ মানুষের মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য প্রয়োজন শর্করা এবং গ্লুকোজ। এটা থাকে বিভিন্ন ফল, রুটি, মিষ্টি আলু, নুডুলস, মাছ-মাংস, কাঠবাদাম প্রভৃতিতে। তাই অল্প পরিমাণে বিভিন্ন ধরনের বাদাম নিয়মিত খাওয়া জরুরি। এতে শরীরের প্রয়োজনীয় মৌলিক উপাদানগুলি রয়েছে।

৬. দুধ বা দুধের তৈরি খাবারঃ প্রতিদিন খাবারের তালিকার দুধ রাখা উচিত। তবে আজকাল অ্যালার্জির কারণে অনেকেই সরাসরি দুধ খেতে পারেন না। সেক্ষেত্রে দুধের তৈরি অন্যকিছু খাওয়া যেতে পারে। দুধে রয়েছে শরীরের জন্য উপকারী ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ। তাই একে সুষম খাদ্যও বলা হয়ে থাকে। এছাড়া সপ্তাহে দুদিন মাছ-মাংস বা ডিম খেলেই যথেষ্ট। সামুদ্রিক মাছে রয়েছে ওমেগা থ্রি , যা বার্ধক্য রোধে সহায়তা করে।

৭. আদা, রসুন ও পেঁয়াজের জুড়ি নেইঃ রান্নায় যতটা সম্ভব কম তেল ব্যবহার করুন। আর যদি সম্ভব হয় সরাসরি উদ্ভিজ্জ তেল ব্যবহার করাই ভালো। উদ্ভিজ্জ খাদ্যে যেমন অল্প পরিমাণে ক্যালরি থাকে তেমনি অন্যদিকে থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ পদার্থ আর ফাইবার।

৮. পানীয় বেশি, লবণ-চিনি কমঃ প্রতিদিন কমপক্ষে দেড় থেকে দুই লিটার পানি পান করা উচিত। তবে মিষ্টি মিশ্রিত পানিয় নয়, অর্থাৎ কোলা, ফান্টা এ জাতীয় পানীয়। লক্ষ্য রাখবেন, চিনির ক্ষেত্রে তা যেন হয় প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি অর্থাৎ ব্রাউন চিনি আর লবণ যেন হয় আয়োডিন যুক্ত।

৯. ধীরে-সুস্থে চিবিয়ে খানঃ খাবার তাড়াহুড়ো করে খেলে বেশি খাওয়ার ভয় থাকে। এতে ওজন বাড়ে এবং তা হজমেও ব্যাঘাত ঘটায়। তাই খাবার ধীরে ধীরে চিবিয়ে খান।

১০. হাঁটুনঃ প্রতিদিন ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা হাঁটুন। এতে হাত-পায়ে রক্ত চলাচলের পাশাপাশি মুক্ত বাতাসও সেবন হবে, যা ‘ফিট’ থাকতে বিশাল ভূমিকা পালন করে।

১১. ক্রোধ থেকে নিজেকে দূরে রাখুন। এমনভাবে কথা বলুন যাতে কেউ দুঃখ না পায়।

১২. বসার সময় অবশ্যই সোজা হয়ে বসুন। চেয়ারে যখনই বসবেন তখনই বাঁকা না হয়ে সোজা হয়ে বসুন।

১৩. খাবার খাওয়ার সময় ভালো করে চিবিয়ে খাবার খান। এতে করে পাঁচন ক্রিয়া ঠিক থাকে- সঠিকভাবে খাদ্য হজম হয়।

১৪. মিষ্টি জাতীয় খাবার কম খাওয়ার চেষ্টা করুন। কারণ মিষ্টি জাতীয় খাদ্য শরীরকে মোটা করে।

১৫. বেশি করে সবুজ শাক-সবজি আর ফলমূল খান।

১৬. গরমের সময় রাতে শোয়ার আগে গোসল করুন। রাতে গোসল করলে ঘুম ভালো হয়।

১৭. রাতে শোবার আগে ঢিলেঢালা পোশাক পরা ভালো। তাতে শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রতঙ্গ ছিদ্রের মধ্য দিয়ে শ্বসন প্রক্রিয়া চালাতে পারে।

১৮. চুলের প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে। কারণ চুল হলো সৌন্দর্যের প্রতীক। সম্ভব হলে সপ্তাহে একদিন হার্বাল শ্যাম্পু ব্যবহার করুন।

১৯. প্রতিদিন অন্তত ১০ থেকে ১৫ মিনিট ধ্যান করুন।

২০. নিজের ঘরের কাজ নিজে করার চেষ্টা করুন। কারণ ব্যস্ত থাকাটা শরীর ও মন দুয়ের জন্যই ভালো। তাই কাজে যতটা সম্ভব ব্যস্ত থাকুন। তাহলে শরীর ও মন দুটোই ভালো থাকবে।

 

 

সুস্থতা সহজেই

সাজ্জাদুল হক

মহামারী করোনা নিয়ে গোটা মানবসভ্যতা আজ হুমকির মুখে। এ পরিস্থিতিতে ৪টি সহজ আমল আমাদেরকে সুরক্ষা দিতে পারে সকল দুরারোগ্য রোগ আর বিপদ হতে। আসুন জেনে নেই ৪টি সহজ আমল-

১। হারাম থেকে বেচে থাকুনঃ
নিজেকে সকল হারাম থেকে মুক্ত রাখুন। মহামারী আর দুরারোগ্য কোন কিছুই আপনাকে স্পর্শ করবে না, কারন Protection বা সুরক্ষার বিষয়ে রাসুল (সঃ) বলেন- ”এহ্ফাজ আল্লাহ, ইয়াহ্ ফাযাক্” অর্থাৎ আল্লাহ্কে ধারন করো, বদলে আল্লাহ তোমাকে সুরক্ষা দিবে। তাই আপনার ব্যবসা, সংসার কিংবা রাজনীতিতে স্রষ্টার নিয়মকে গ্রহণ করুন, আপনার সুরক্ষার জন্য তিনিই যথেষ্ট।

২। দোয়া’র ক্ষমতা উপভোগ করুনঃ
দোয়া’র রয়েছে অসম্ভব ক্ষমতা। দোয়া পৃথিবীর সর্বোৎকৃষ্ট এন্টিভাইরাস এবং তা বিনামূল্যে। একই সাথে এটি একটি সহজতম কাজ। যদিও আমরা এ ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন।
পৃথিবীতে এখনো অনেক রোগ রয়েছে বা আসবে যার কোন ঔষধ নেই। অথচ আল্লাহ্ আমাদের এমন কিছু দোয়া দিয়েছেন যা পড়লে আমরা সকল রোগ ও বিপদ হতে মুক্ত থাকতে পারি। আসুন আমরা ৪ টি কাজের সাথে ৪ টি দোয়াও শিখে নেই।
👉রাসুল (সঃ) বলেন, সারাটাদিন Full Protection বা শতভাগ সুরক্ষিত থাকতে সকাল ও সন্ধ্যায় ৩ বার এই দোয়াটি পড়ুন-
“বিসমিল্লা হিল্লাজি লা ইয়াদুররু মাসমিহি সাইয়ুন ফিল আরদি অলা ফিস সামাই, অহুয়াস সামিউল আলীম”।
👉 “আউযু বিকালিমাতিল্লাহি তাম্মাতি মিন সাররিমা খলাক”
রাসুন (সঃ) বলেন, ভ্রমনের পুর্বে একবার এই দোয়া পাঠ করলে সেই স্থান ত্যাগ করা পর্যন্ত আল্লাহ্ তাকে সব ধরনের খারাপী থেকে সুরক্ষিত রাখবেন।
👉জানা অজানা সকল রোগ মুক্ত থাকার জন্য রাসুল (সঃ) শেখান একটি চমৎকার দোয়া-
“আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল বারাসি, অল জুনানী জুযামী, অমিন সাইয়িইল আসক্বম”।
অর্থাৎ- হে আল্লাহ্! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই- শ্বেতরোগ, উন্মাদনা, কুষ্ঠ এবং সকল দুরারোগ্য ব্যাধি হতে।
👉 রাসুল (সঃ) বলেছেন, সকাল-সন্ধ্যায় তিন বার তিন কুল অর্থাৎ সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক এবং সূরা নাস পড়ুন। গোটা পৃথিবীর সকল দৃশ্য কিংবা অদৃশ্য অনিষ্ট থেকে সুরক্ষা পাবেন। সুবাহান আল্লাহ্! আল্লাহু আকবার! এতো সক্তিশালী সুরক্ষা কবজ থাকা সত্তেও আজ আমরা সামান্য মশার কামড়েই কুপোকাত। শুধু তাই নয়, অদৃশ্য ভাইরাসে আমরা আজ মৃত্যু শয্যায়। অথচ এই প্রেসক্রিপশন মহানআল্লাহ্ তায়ালা থেকে প্রদত্ত, যিনি মুসলিমদের একমাত্র অভিভাবক।

৩। নিয়মিত প্রতিষেধক গ্রহন করুনঃ

দোয়ার সাথে সাথে দাওয়া বা ঔষধের ব্যাপারে রসুল (সঃ) বলেন- সকালে ৭ টি খেজুর খেলে যাদুমন্ত্র, বিষ কিংবা রোগ জীবানু কোন মানুষকে আক্রান্ত করতে পারবে না এবং আধুনিক বিজ্ঞান দ্বারাও এটি প্রমানিত।

৪। আল্লাহর সিদ্ধান্ত মেনে তার সাহায্য কামনা করুনঃ
সকল বিপদে আল্লাহ্’র কাছে সাহায্য চান এবং প্রতি মুহূর্তে তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। তার সাহায্য আর ক্ষমাই আমাদের জন্য সর্বোত্তম পথ। এর পরেও আমাদের উপর কোন মসিবত আসলে মেনে নিতে হবে, এরই মধ্যে আমাদের কল্যান রয়েছে। এ ধরনের বিশ্বাস আর জীবনাচরনের মধ্য দিয়ে যদি কোন মানুষের মৃত্যু ঘটে তবে রাসুল (সঃ) এর কথা অনুযায়ী তার মৃত্যু হবে শহীদের মৃত্যু। আর আমরা যদি মারা যাই আল্লাহর ক্ষমা, সাহায্য কিংবা অনুগ্রহ ব্যাতিত, তবে সেটাই হবে প্রকৃত মহামারী এবং অপমৃত্যু।

সাজ্জাদুল হক
নির্বাহী পরিচালক
জমজম ইনস্টিটিউট, বরিশাল