বেনজির আহম্মেদ
ছেলেটি হাউমাউ করে কাঁদছে। বয়স ছয় মাসের কিছুটা কম । দাদি মা ওরে কোলে তুলে নিলো। তপু বললো- ও কাঁদছে কেনো? দাদি বললেন- কপালের লিখন আর কি করার! ওর মা কই, ওর বাবা কই হাজার প্রশ্ন তপুর, দাদি মা বললেন- ‘তাগোরে ঝোলায় নিছে, আমি পড়ছি মহা জ্বালায়,
শোনো মা তপু- আমি নাকি হেতিরে জ্বালাই, মোর পোলাও নাকি হেরে জ্বালায়, তাই সে এহন বাপের বাড়ি গেছে- এই মাসুম বাচ্চাটারে রাইখা, তপুর শুনে খুব খারাপ লাগল, মুখভার করে জিজ্ঞেস করলো- তা দাদি মা- তোমার ছেলের বয়স কতো? কতো আর হইবো? মোর তো পোলাপান হয় না হয় না কইরা শেষ দিকে একটা পোলা হইলো। তাই শখ করে ওকে ২২/২৩ বছর বয়সে বিয়া করামু ভবছিলাম। তা মোর পোলায় ১৬ বছর হইতে না হইতে প্রেম কইরা বউ নিয়া আইছে, তোমার দাদায় মরছে সেই কবে, আমি এহন একলা মানুষ কি করমু এই নাতিকে নিয়া, কি খাওয়ামু এরে ।
তপু এসেছিলো শহরের গ্লানি মুছতে, একটু হতাশা চাদর, যানজট থেকে দূরে গ্রামের সরল মানুষগুলোর কাছে । কিন্তু সেখানে এসেও এধরনের ঘটনা শুনে তার বুক চমকে উঠলো এবং ভাবলো আমাদের কৃষ্টি, কালচার কি বদলাতে চলছে, এটা ভাবতে ভাবতে কয়েক দিন চলে গেলো অপুর। ওপাড়ায় আর যাওয়া হলো না, বাসায় মায়ের সাথে নানা গল্প, শহরের বন্দিজীবন, নির্মল বাতাস নেই, ইচ্ছে করলেই সেখানে খুশিমতো ঘোরা যায় না, রাস্তায় জ্যামে আটকে কি ভোগান্তি হয় এমন নানা কথা বলতে বলতেই দিন কেটে গেল।
দুপুর ২ টা রোজ শনিবার। হঠাৎ খবর এলো ওপাড়ার দাদিমার পোলার বউ দেহি ডিভোর্স পাঠাইছে। ও শামসুল শুনছু , আমিও জানালা দিয়া মুখ বের করলাম, খবর নিয়া আসছে পাশের ঘরের রিজিয়া বিবি, সে বলে- পোলা টারে নিয়া গেছে, ওরাও দিয়া দিছে, ছেমরিও কম বয়স- সেই সময় প্রিত কইরা আইতে পারছে, এহন আবার কি হইলো কে জানে- মেয়ের বয়সও বেশি না, দাদি মার ছেলেডার বয়সও বেশি না ।
অপু বলল- বিচার, শালিসরা কিছু বলে নাই, ওগো ছোট সন্তানের জন্য যে ওগো একসাথে থাকা উচিত, নয়তো ও ছন্দ হারা হয়ে যাবে, আরে মাইয়া- তোমার মতো কয়জন ভাবে, দাদি মা কানতে কানতে আইছে ও অপুর মা আমার দাদুভাইরে নিয়া গেলো রে নিয়া গেল, এহন আমি কি নিয়া থাকমু- এমন নানা বিলাপ।
কয়েক বছর কেটে গেলো আর গ্রামে যাওয়া হয় নি, মনটা ছটপট করছর অপুর, ভাবছি কাল ট্রেন ধরে বাড়ি যাবো। যেই কথা সেই কাজ, বাড়ি পৌঁছে মায়ের কাছে দাদিমার কথা জিজ্ঞেস করলাম কি খবর, মা বলল তার পোলা আবার বিয়া করছে, আমি বললাম তা হলে কি তার পোলার খোঁজ নেয়। আরে মা কে কার খোঁজ নেয় এই দুনিয়ায়! সেই পোলার মাও বিয়া বসছে আর ছেলেটা এতিখানায় দিছে। অপু দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে উঠলো, ছেলেটির বাবা আবার বউ পেলো, তার মা আবার স্বামী পেলো, কিন্তু ছেলেটি পেলো শুধুই লঞ্ছনা। মাথায় হাত রাখার মতো একটি হাতও সে পেলো না, আমাদের সমাজের সব কৃষ্টি বদলে গেছে উন্নত জীবনের আঁশে।